Image description
সিটি গেইট থেকে বড়দারোগাহাট

চট্টগ্রাম–৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের বিএনপির মনোনয়নকে ঘিরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের গণআন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। কেন্দ্রের ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী কাজী সালাউদদ্দিনকে বাদ দিয়ে কারা নির্যাতিত নেতা আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে এবার ৫০ কিলোমিটার মানববন্ধন করেছেন আসনটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত একে খান মোড়, সিটি গেইট হয়ে বড়দারোগাহাট পর্যন্ত ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দলসহ অঙ্গ-সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। স্লোগানে স্লোগানে ও বক্তব্যে তাদের একটাই দাবি, কাজী সালাউদ্দিনের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে আসলাম চৌধুরীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিতে হবে।

এ সময় বক্তারা বলেন, আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দিলে সীতাকুণ্ড বিএনপির দুর্গ হলেও আসনটি নিশ্চিত হারাতে হবে। কারণ এলাকায় রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক সক্ষমতা ও দীর্ঘদিনের ত্যাগের নিরিখে এই আসনে আসলাম চৌধুরীই একমাত্র যোগ্য প্রার্থী।

বক্তারা আরও বলেন, গত ২৫ বছর ধরে তিনি সামাজিক, মানবিক এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এলাকায় সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। ৫০ কিলোমিটারের এই মানবস্রোত প্রমাণ করে, এটি কেবল রাজনৈতিক সমাবেশ নয়, বরং আসলাম চৌধুরীর প্রতি তৃণমূলের গভীর আবেগ ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে আসলাম চৌধুরী চারবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালে গ্রেপ্তারের পর টানা প্রায় ৯ বছর কারাভোগ করেন। শত শত কোটি টাকার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস, পরিবারের ও ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা, জেল-জুলুম ও নির্যাতনসহ নানান প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কখনো দলের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। বিএনপিতে দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগী, আপসহীন নেতা হিসেবে দল মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণির পেশার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় আসলাম চৌধুরী নাম।

বক্তারা আরও বলেন, সীতাকুণ্ডের ১২০টি ওয়ার্ডে দীর্ঘ বছর যাবৎ সামাজিক, মানবিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আসলাম চৌধুরী আস্থার প্রতীক হিসেবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। তিনি হলেন তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আবেগ, ভালোবাসা ও হৃদয়ের স্পন্দন।

মানববন্ধনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কাজী সালাউদ্দিন মনোনয়নের অযোগ্য উল্লেখ করে নানা অভিযোগ তোলেন। বক্তারা বলেন, তিনি এলাকায় সামাজিক বা মানবিক কোনো কর্মকাণ্ডে কখনো জড়িত ছিলেন না। দলের দুঃসময়ে নিহত নেতাকর্মীদের জানাজায় পর্যন্ত যাননি, দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াননি, বিগত আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে তৃণমূলের যেসব নেতা কর্মীরা কারাগারে গিয়েছেন এবং দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন, তিনি ওই সব নেতাকর্মীদের পরিবারের খোঁজ নেননি, অতীতের আন্দোলন–সংগ্রামেও তাকে দেখা যায়নি। কাজী সালাউদ্দিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতা রেখে ব্যবসা করেছেন, যার কারণে কোনোদিন জেলেও যাননি।

এছাড়াও তৃণমূলের অভিযোগ, তিনি সুপার ফাইভ কমিটি গঠনের নামে তৃণমূলে বিভক্তি তৈরি করেছেন। যার কারণে নেতাকর্মীরা তার ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ। অধিকাংশ স্থানীয় মানুষও তাকে চেনেন না বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।

একে খান মোড় থেকে বড়দারোগাহাট পর্যন্ত টানা প্রায় ৫০ কিলোমিটারের মানবশৃঙ্খল দেখে বক্তারা বলেন, আসলাম চৌধুরী শুধু রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি সীতাকুণ্ডের মানুষের কাছে ভালোবাসার ও আস্থার প্রতীক।

মানববন্ধনে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিএনপির হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তৃণমূলের রায়কে সম্মান করে আসলাম চৌধুরীর নামে চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করা হোক। তাহলে সীতাকুণ্ড সংসদ সংসদীয় আসনে বিপুল ভোটে ধানের শীষের প্রার্থী আসলাম চৌধুরী জয়লাভ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এই আসনটি উপহার দেবেন। সুতরাং সম্ভাব্য ধানের শীষের প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিনের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে আসলাম চৌধুরীর নামে চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করার জন্য মানববন্ধন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডাক্তার কমল কদর, পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক জাকির হোসেন, সদস্য সচিব ছালে আহাম্মদ সওদাগর, পৌরসভার বিএনপির সাবেক সভাপতি ইউসুফ নিজামী, উপজেলা বিএনপি'র যুগ্ম আহবায়ক জহুরুল আলম জহুর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোরসালিন, মোজাহের উদ্দিন আশরাফ, মোস্তাফিজুর রহমান হিরু, ফজলুল করিম চৌধুরী, শাহাবুদ্দিন রাজু, শহিদুল্লাহর ভূঁইয়াসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।