Image description
সংসদ নির্বাচন ও গণভোট

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে ‘মক ভোটিং’-এর আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সত্যিকারের নির্বাচনের মতোই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্ট ও ভোটার সবই থাকবে এই মক ভোটিংয়ে। নিয়ম অনুযায়ী ভোটাররা লাইন ধরে ভোটও দেবেন। শুধু থাকবে না রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর নাম ও প্রতীক। আগামী সপ্তাহে এই মক ভোটিং আয়োজনের কথা রয়েছে। রাজধানী ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কাছাকাছি কোনো এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত সব আনুষ্ঠানিকতা থাকবে মক ভোটিংয়ে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আরও জানা গেছে, মক ভোটিংয়ে একজন ভোটার ভোটকেন্দ্রে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন, একজন ভোটারের ভোট দিতে কত সময়ের প্রয়োজন হবে, ভোটকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার-এসব বিষয় স্বচক্ষে দেখবেন নির্বাচন কমিশনাররা। একই সঙ্গে বয়স্ক, গর্ভবতী নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভোটকক্ষে কী ধরনের ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়, সেটাও পরীক্ষা করা হবে। ওই অভিজ্ঞতা থেকে আসন্ন সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে কতজন ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ হওয়া উচিত তা নির্ধারণ করার কথা রয়েছে।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ শনিবার যুগান্তরকে বলেন, তফশিল ঘোষণার আগেই অল্প সময়ের মধ্যে মক ভোটিং হবে। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করতে কত সময় লাগে, নির্ধারিত সময়ে ভোটগ্রহণ শেষ করা যাবে কি না-এসব বিষয়ে রিসার্চ করার জন্য এই ভোটিং হবে। তিনি বলেন, এখানকার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের কর্মপরিকল্পনা বা আয়োজনের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনতে হবে কি না, তা দেখা হবে।

ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গণ-অভ্যুত্থানের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরে কোনো ধরনের নির্বাচন আয়োজন করেনি বর্তমান এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নির্বাচন পরিচালনার বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই কমিশনারদের। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা চাকরিতে থাকাবস্থায় ইসির অধীনে বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন ভোট পরিচালনার অভিজ্ঞতা নিতে চান তারা। এ কারণে একজন নির্বাচন কমিশনারের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই মক ভোটিং হতে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, মক ভোটিংয়ের জন্য আগারগাঁওয়ে ইসির আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্র হিসাবে ‘আগারগাঁও তালতলা কলোনি সরকারি স্কুল ও কলেজ’ বা ‘শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’কে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৯ নভেম্বর, শনিবার। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুটি কক্ষে ভোটগ্রহণ হবে। একটি কক্ষ পুরুষ ও আরেকটি নারীদের জন্য। নির্বাচনের নিয়ম মেনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ভোটগণনা করে ফলাফলও প্রকাশ করা হবে। এতে সম্ভাব্য ভোটার ধরা হয়েছে এক হাজার ১০০ জন। তাদের মধ্যে থাকবেন ইসি সচিবালয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ৬০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ২০০ জন নতুন ভোটার (যারা কখনো ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি) ও ১০০ জন বয়স্ক ভোটার। এছাড়া থাকবেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বস্তিবাসী ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। নতুন ভোটার আনা হবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। রাজধানীর বিভিন্ন বস্তি থেকেও ভোটার আনা হবে মক ভোটিংয়ে। তাদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে। এর অর্থায়ন করার জন্য ইউএনডিপি বা দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেমসকে (আইএফইএস) প্রস্তাব করা হয়েছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতি ৫০০ জন নারী ও ৬০০ জন পুরুষের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ হিসাবে ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি করেছে ইসি। শতভাগ ভোট পড়লে একজন পুরুষ ভোট দিতে গড়ে মাত্র ৪৮ সেকেন্ড এবং নারী ৫৮ সেকেন্ড সময় পাবেন। এই হিসাব বাস্তবসম্মত কি না-মক ভোটিংয়ে সেটা দেখাই অন্যতম উদ্দেশ্য। যদিও ইসি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কমবেশি ৭০ শতাংশ ভোট পড়বে বলে আশা করছে।

ওই কর্মকর্তারা জানান, মক ভোটিংয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে গণভোটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সরকার একই দিনে জাতীয় সংসদ ও গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত দেওয়ায় ওই বিষয়টি মক ভোটিংয়ে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হবে।