Image description

‘আমরা আতঙ্ক নিয়ে পুরান ঢাকায় বাস করি। যখন কোনো ঘটনা ঘটে, তখন সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়া যায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে কার্যকর পদক্ষেপ বা পরিবর্তন আজও দেখা যায়নি।’

শুক্রবার প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেওয়া ভূমিকম্পের ঘটনায় কালের কণ্ঠের কাছে এমন মন্তব্য করেন পুরান ঢাকার আরমানিটোলার বাসিন্দা আবদুর রহিম।

তাঁর এ কথায় ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ নিয়ে সেখানকার মানুষের উদ্বেগ ফুটে উঠেছে।

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড, আরমানিটোলা, কসাইটুলী, চুড়িহাট্টা, নিমতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনো রয়ে গেছে বহু পুরনো জরাজীর্ণ ভবন। দেখলেই বোঝা যায়, ভূমিকম্পের সে রকম একটা শক্ত ঝাঁকুনি খেলে হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়বে এসব।

শুক্রবার বংশালের কেপি ঘোষ রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অনেক মানুষের ভিড়।

ছিলেন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরাও। ওই বহুতল ভবনটির ওপরের কয়েকটি তলা পাশের আরেকটি ভবনের দিকে হেলে রয়েছে। এ নিয়ে উপস্থিত সবার মধ্যে আতঙ্ক।

ভবনটির নিচতলায় ‘আলাপ টেলিকম’ দোকানের মালিক মিজানুর রহমানের কাছে ভবনটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আগে থিকাই এইভাবে হেলে আছে!’ যেন কোনো ভাবান্তর নেই।

শুক্রবার ভূমিকম্পের সময় কসাইটুলীর একটি বহুতল ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ে একজন মেডিক্যাল ছাত্রসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। ওই দিন বিকেলে বাড়িটির সামনে শত শত মানুষের ভিড় ছিল। স্থানীয় অনেকে বলাবলি করেন, এখন না হয় ভূমিকম্পের দোষ, কিন্তু রেলিংয়ের এই জীর্ণদশা তো নতুন নয়। দুর্ঘটনার বিষয়টি মাথায় রেখে আগে থেকে সতর্ক হলে, প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ করালে হয়তো এমন প্রাণহানি ঘটত না।

সরেজমিনে দেখা যায়, কসাইটুলী, আরমানিটোলাসহ আশপাশের এলাকার বেশ কিছু বাড়ি জরাজীর্ণ।

সরু রাস্তায় যানজট লেগে থাকে হরদম। প্রায় প্রতিটি রাস্তার ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার, ডিশলাইন ও ইন্টারনেটের তার জট পাকিয়ে ঝুলে আছে। কোনো কোনো রাস্তা এতটাই সরু যে, কোনো দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স ঢুকবে না। একাধিক বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের পরও রয়ে গেছে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও অবিন্যস্ত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, যা ভূকম্পন থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি তৈরি করেছে।

২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীতে রাসায়নিক গুদামে আগুনের ঘটনায় ১২৪ জন মারা যায়। এরপর কেমিক্যালসের ব্যবসা ও গুদাম ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু কিছুদিন পর তা থেমে যায়।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওয়াহেদ ম্যানশনে জমা কেমিক্যালের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে ৭১ জন নিহত এবং শতাধিক দগ্ধ হয়। ওই সময়ও আন্দোলন হয়। সেটিও ২০১০ সালের মতো কয়েক দিনের মধ্যে থেমে যায়। সর্বশেষ গত শুক্রবার ভূমিকম্পের সময় কসাইটুলীতে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় পুরান ঢাকার ওই এলাকাগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

কসাইটুলীর বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে রাসেল আহমেদ বলেন, এখানে বেশির ভাগ রাস্তা সরু থাকার কারণে যানজট লেগেই থাকে। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, বেরিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। বিশেষ করে অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে পুরোমাত্রায় বিরাট ঝুঁকিতে রয়েছে। এই এলাকাকে এ জন্য ‘মৃত্যুকূপ’ বললেও অত্যুক্তি হবে না।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, পুরান ঢাকায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভবনে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই। এভাবে পুরান ঢাকার শত শত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাস করছে হাজারো মানুষ।