Image description

গতকাল  "দ্য ডেল্টাগ্রাম" The Deltagram শিবিরের উপর একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে, এখানে এর বাংলা অনুবাদ দেওয়া হল। 
*********************************************
নীরবতা থেকে গণজোয়ার: কীভাবে ইসলামী ছাত্রশিবির আবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ফিরে আসলো 
********************************************
৩৫ বছর পর শিবির এমনভাবে ফিরে এলো, যেন ঝড়ের মতো এসে পুরো নির্বাচনী মানচিত্রই পাল্টে দিল। জাকসু নির্বাচনে তারা ফিরে এসেই এক মহা জয় তুলে নিল।
--------------------
ফারদিন তোহা রাফি
১৯ নভেম্বর ২০২৫, রাত ১:০৪
-------------------------------
অনেকে হয়তো টিভির থ্রিলার সিরিজে দেখেছেন, ছোট শহরে নাকি প্রতি ৩৫ বছর অন্তর অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটল, কিছুটা যেন সেই রকমই, শুধু পার্থক্য হলো শিক্ষার্থীরা এটাকে ভয় পায়নি, বরং স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেছে।
১৯৮৯ সালের সংঘর্ষের পর শিবির স্বেচ্ছায় নীরব হয়ে যায়। দীর্ঘ তিন দশক তারা প্রকাশ্যে কোনো কার্যক্রম চালায়নি। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে তারা হঠাৎ করেই আবার সক্রিয় হয়ে উঠে। এতে ক্যাম্পাসে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
জাকসূ নির্বাচনে শিবির সমর্থিত কম্বাইন্ড স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স ২৫টির মধ্যে ২১টি পদে জয় পায়। এটাকে নিছক জয় বলা যাবে না, এটা ছিল একদম স্পষ্ট গণজোয়ার।
নীরবতার শুরু আর শিবিরের প্রত্যাবর্তন
----------------------------------------
১৯৮৯ সালে সংঘর্ষে ছাত্রদলের কর্মী কবির নিহত হন। এরপর প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠনের প্রবল চাপের কারণে শিবির কার্যত সব প্রকাশ্য কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। প্রশাসন কোনো আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা না দিলেও তারা নিজেরাই নীরব ছিল।
পরে তারা যুক্তি দেখায়, যেহেতু আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা ছিল না, তাই তাদের ফিরে আসায় কোনো সমস্যা নেই। ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেলে তারা আবার প্রকাশ্যে আসার সুযোগ নেয়। প্রথমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আর অফিস সম্পাদক সামনে আসে, বাকিরা আড়ালে থেকেই কাজ চালিয়ে যায়।
এত বছর নিস্তব্ধ থাকলেও শিবির বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠন আর স্টাডি গ্রুপের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে উপস্থিতি বজায় রেখেছিল।
সোশ্যাল মিডিয়া দখল আর নিজেদের গল্প তৈরি
-----------------------------------------------
শিবিরের জয়ের পেছনে দুইটি জিনিস বড় ভূমিকা রাখে
১. সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক উপস্থিতি
২. নিজেদের "মেধাবী ও দায়িত্বশীল" সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন
৫ আগস্টের পর শিবির এমনভাবে অনলাইন প্রচারণা চালায় যে অনেক নিরপেক্ষ জেন Z শিক্ষার্থী মনে করেছে শিবিরই ক্যাম্পাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী গ্রুপ। এর পাশাপাশি July-August আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া SAD এর উপস্থিতিও বড় ছিল।
অন্যদিকে ছাত্রদল অনলাইনে খুব দুর্বল প্রমাণিত হয়। আন্দোলনে বড় ভূমিকা রাখলেও তারা নিজেদের কার্যক্রম প্রচারে ব্যর্থ হয়। ফলে নতুন প্রজন্মের চোখে তারা শিবির আর SAD এর তুলনায় পিছিয়ে পড়ে।
শিবির নিয়মিত সদস্যদের একাডেমিক সাফল্য প্রচার করেছে, শিক্ষাবান্ধব ইভেন্ট করেছে, সেমিনার, প্রতিযোগিতা, স্কলারশিপ, ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প, এসব দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের চোখে একটি "ভালো সংগঠন" হিসেবে পরিচিতি পায়।
ঢাবিতে সাফল্যের প্রভাব
--------------------------
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের সাফল্য জাহাঙ্গীরনগরের ভোটারদের মনস্তত্ত্বেও প্রভাব ফেলে। তারা নিজেদের মধ্যে কোনো বিতর্ক বা দ্বন্দ্ব না রেখে পরিচ্ছন্ন একটা ইমেজ ধরে রেখেছিল, যা ভোটারদের কাছে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ছাত্রদলের ভরাডুবি
---------------------
জাহাঙ্গীরনগরে বড় সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রদল কেন্দ্রে একটি পদও জিততে পারেনি। কারণ ছিল বেশ কিছু
দলাদলি
সময়মতো প্যানেল ঘোষণা করতে না পারা
প্রচারণায় বিশৃঙ্খলা
বহিরাগত বা সাবেক ছাত্রলীগ প্রভাবের অভিযোগ
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ছাত্রদল সভাপতি ইমাম হোসেন সজল স্বীকার করেন
"আমরা অনলাইন স্পেস ঠিকমতো দখলে রাখতে পারিনি। শিক্ষার্থীরা এখন তথ্য পায় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। নেতৃত্ব-কেন্দ্রিক প্রচারণা সংগঠনকে পিছিয়ে দিয়েছে।"
দলাদলির কারণে অনেক সিনিয়র নেতা ক্যাম্পাসে ঢুকতেই পারেননি। নারী মহাসচিব প্রার্থী দিয়ে চমক দেখানোর চেষ্টা করলেও সার্বিকভাবে তারা শিবিরের গতি ধরতে পারেনি। হল পর্যায়ে কিছু পদ পেলেও কেন্দ্রে তারা শূন্য।
অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা
-----------------------
জেএসএস (জাতীয় ছাত্রশক্তি) জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের স্পিরিট নিয়ে নির্বাচন করলেও খুব বেশি সাড়া পায়নি। শিবিরের সঙ্গে জোট গঠনের গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। তারা সমাজসেবা সম্পাদক ও একজন নির্বাহী সদস্যের পদ পায়।
বামপন্থী সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়ায় ভোটে আরও পিছিয়ে পড়ে। তাদের দুর্বল সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতিও বড় বাধা ছিল।