Image description
বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ কতটা সঠিক। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক । জাতিসংঘের যে কোনো সিদ্ধান্তই মানবে সরকার ।

আগামী বছর এলডিসি থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসতে পারবে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জসহ ১২টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে জাতিসংঘ। এজন্য ঢাকা সফররত জাতিসংঘের স্বাধীন প্রতিনিধিদল বিভিন্ন সুবিধাভোগী (স্টেকহোল্ডার) অংশের সঙ্গে বৈঠক করছে। এর অংশ হিসাবে বুধবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগসহ (ইআরডি) ১০টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে প্রতিনিধিদল বৈঠক করেছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

যুগান্তরকে কর্মকর্তারা বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের সিদ্ধান্ত-এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন যথাসময়ে হবে। কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক, অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্তত ৩ বছর পেছালে খারাপ হবে না। সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে না পারলেও আমরা সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেছি। তবে জাতিসংঘের যে কোনো সিদ্ধান্ত সরকার মানবে।

ইআরডির অতিরিক্ত সচিব এএইচএম জাহাঙ্গীর যুগান্তরকে বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত হলো-এলডিসি উত্তরণ থেকে সরে না আসা। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মতে, ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ করার কথা। তথ্য-উপাত্তের দিক থেকে উত্তরণে কোনো বাধা নেই। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাধীন মিশন সব কিছু মূল্যায়ন করবে। আমরা শুধু পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যেসব প্রশ্ন সম্পর্কে জানতে চেয়েছে সেগুলোর উত্তর দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধিদল মূলত স্বাধীন সার্ভে পরিচালনা করছে। তাদের প্রশ্নমালা নিয়ে বুধবার সরাসরি আলোচনা হয়েছে। প্রতিনিধিদল ১২টি প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছে। প্রশ্নগুলোর মধ্যে রয়েছে-স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রস্তুতি কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে; দেশের মূল শক্তি, বিদ্যমান কৌশল বা সম্পদ কি; এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের সামনে কি কি চ্যালেঞ্জ রয়েছে; ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সংস্থা কি প্রত্যাশা করে; উত্তরণের জন্য মসৃণ পরিবর্তন কৌশল (এসটিএস) গ্রহণ। এছাড়া এসটিএস বাস্তবায়নে কতটুকু অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, সংস্থা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় বা বিভাগ সুনির্দিষ্ট কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একটি মসৃণ রূপান্তর নিশ্চিত করতে কি ধরনের নীতিগত পদক্ষেপ বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের মসৃণ উত্তরণে উন্নয়ন অংশীদারদের (দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক) কাছ থেকে কিভাবে কার্যকর সহায়তা পাওয়া যাবে। সর্বশেষ প্রশ্নে বলা হয়েছে-এলডিসি পরবর্তী টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশ কিভাবে প্রস্তুতি জোরদার করতে পারে। বৈঠকে অংশ নেওয়া মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বিভাগগুলোর কর্মকর্তারা নিজেদের মতো করে উত্তর দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্পের উপদেষ্টা আবদুল বাকি যুগান্তরকে বলেন, এখানে মূলত জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল কতগুলো বিষয় জানতে চেয়েছে। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে উত্তর দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদল প্রতিবেদন তৈরি করে তা প্রকাশ করবে। তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না-এলডিসি উত্তরণ পেছাবে নাকি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হবে। তবে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, ট্রাম্প শুল্ক, করোনা ভাইরাস মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, দেশীয় রাজনৈতিক পটপরিববর্তনসহ অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আমরা সরাসরি বলিনি-তিন বছর পিছিয়ে দিন বা অন্য কিছু করুন।

সভায় বলা হয়, মসৃণ উত্তরণ কৌশল বাস্তবায়ন মূলত পাঁচটি মূল স্তম্ভের ওপর নির্ভর করে। এগুলো হলো-সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বাণিজ্য পছন্দ নিশ্চিত করা, রপ্তানি বৈচিত্র্যায়ন ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি, উৎপাদনশীল ক্ষমতা তৈরি এবং অংশীদারত্ব ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ কপিরাইটস অফিসসহ এলডিসি উত্তরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।