Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যেও উঠে এসেছে, আগামী নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারবে না। এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলও বলেছে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। বর্তমানে দেশে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে।

এ অবস্থায় দলটির সমর্থক বা ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন কিংবা ভোট দিতে আদৌ কেন্দ্রে আসবেন কি না তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্রমে বাড়ছে কৌতূহল। এদিকে আওয়ামী লীগের ভোট নিজেদের পক্ষে নিতে নানা কৌশল ও চেষ্টার প্রমাণও মিলছে বিএনপি ও জামায়াতের অনেক নেতার বক্তব্যে।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিভিন্ন দলের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের ভোট কারা পাবে সেটি নির্ভর করছে তিনটি বিষয়ের ওপর। এক. দলটির আদর্শের কাছাকাছি যদি কোনো প্রার্থী থাকে।
দুই. ভোটারদের সঙ্গে প্রার্থীদের সম্পর্ক। তিন. ৫ আগস্টের পর প্রার্থী বা তাদের কর্মীরা আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর কতটা নির্যাতন চালিয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, আগামী নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে আওয়ামী লীগ চেষ্টা করবে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমাতে। সে ক্ষেত্রে দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রতি ভোট বর্জন করা, কোনোভাবে ভোটে অংশগ্রহণ না করা ও ভোট না দেওয়ার নির্দেশনা আসতে পারে।
যত বেশিসংখ্যক কর্মী-সমর্থককে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখা যায়, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান অবশ্য মনে করেন, প্রার্থীরা স্থানীয় হলে সুবিধা হলো নির্বাচনটি সামাজিক হয়। ফলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না এসে থাকতে পারেন না। সে হিসেবে আওয়ামী সমর্থকগোষ্ঠী বা ভোটাররা কেন্দ্রে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘দলটির সমর্থকগোষ্ঠী বা ভোটাররা তাদের আদর্শের কাছাকাছি যদি কোনো প্রার্থী পায়, তবে তাঁদের ভোট দেবেন।
আবার ‘না’ ভোট দেওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া যদি কোনো প্রার্থী ব্যক্তিগতভাবে ভোটারদের আর্কষণ করতে পারেন, তাহলে আওয়ামী লীগের ভোট পাবেন।

তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব মনে করেন, আওয়ামী লীগের ভোট কারা পাবে, এটা নির্ভর করছে ভোটারদের সঙ্গে প্রার্থীদের সম্পর্ক কেমন তার ওপর। ৫ আগস্টের পর প্রার্থীরা বা প্রার্থীর সমর্থকরা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর কতটা নির্যাতন চালিয়েছে এর একটা হিসাবনিকাশ হবে।

সম্প্রতি এক নির্বাচনী জনসভায় আওয়ামী লীগের সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিবকে ভাই সম্বোধন করে আওয়ামী লীগ ভোটারদের ভোট চাইতে দেখা গেছে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরকে। তিনি বলেন, ‘এবার তো মুজিব ভাই নেই। তাহলে আপনাদের আগের অনুভূতিতে তো দুই নম্বরে আমি আছি। তাহলে ইনশাআল্লাহ, আপনারা তো আমাকে ভোট দেবেন। আবার যদি মুজিব সাহেব কখনো আসেন, তাহলে আমার সঙ্গে কথা বলে নিয়েন, কোনো অসুবিধা নেই।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এক বক্তৃতায় বলেছেন, আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিরা বিএনপির সদস্য হতে পারবেন, যাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে অনেক আগেই দূরে সরে গেছেন। ক্লিন ইমেজ রয়েছে যাঁদের। এ ছাড়া শ্রমিক, কৃষক, ব্যাংকার অর্থাৎ এলাকায় সজ্জন হিসেবে পরিচিত সবাই আমাদের নতুন সদস্য হতে পারবেন, যদি আমাদের দলের আদর্শ ধারণ করেন।

দেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের ভোটের হার ছিল ৩০ শতাংশ থেকে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত। নির্বাচনের ফলের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন পেয়েছিল এবং তাদের ভোট ছিল প্রদত্ত ভোটের ৩০.১ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে ৩৭.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তারা ১৪৬টি আসন পেয়েছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফলাফল বিপর্যয় হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্বাচনেও দলটি ৬২টি আসন পেয়ে তাদের ভোট ছিল ৪০.২ শতাংশ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলটি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল। সেবারের নির্বাচনে তাদের ভোট প্রাপ্তির হার ছিল ৪৮.০৪ শতাংশ।