Image description

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা চাই সবাই ভালো থাকুক কিন্তু দেশটাকে সবার আগে ভালো রাখতে হবে। দেশের বিরুদ্ধে কেউ ষড়যন্ত্র করবেন না, করলে সেই ষড়যন্ত্র মানুষ মেনে নিবে না। দেশের মানুষকে অত্যাচার-নিপীড়ন করে কেউ টিকে থাকতে পারে না, হাসিনা হল তার বড় প্রমাণ। অত্যাচারী ও নির্যাতনকারীদের এভাবেই আল্লাহ শেষ করে দেন।

রবিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ভাউলারহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবর রহমান তুহিনসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বিএনপির এই নেতা ওই উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বড় খোঁচাবাড়ী দৌলতপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও ভেলাজান হাই স্কুল মাঠে পৃথক দুটি মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। রাতে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে জেলা ও উপজেলা ওলামা দলের সঙ্গেও মতবিনিময় সভা করেন তিনি।

শেখ হাসিনাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত রোগী মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাকে এ দেশের মানুষ পিটিয়ে বের করে দিয়েছে, তারপরও ভারতের দিল্লীতে থেকে এ দেশের মানুষের জন্য অশান্তি ও দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছেন তিনি। এখন বাংলাদেশে আসার সাহস তার নেই। ভারতে বসে বিবিসিসহ বিদেশি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দেন। তিনি এই দেশের গণহত্যার জন্য দুঃখপ্রকাশও করলেন না।

 
বরং অস্বীকার করে বললেন, আমি হত্যার নির্দেশ দেইনি, পুলিশ হত্যা করেছে। সেই একটা পরিস্থিতি থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রের সংস্কার চেয়েছি কিন্তু তার মানে এই না যে, জনগণ যেটা চায় না বুঝে না সেটা চাপিয়ে দিতে হবে। বিদেশ থেকে কিছু পণ্ডিত এসে সংস্কার কমিশন বসিয়ে এমন করা হয়েছে। আমরা অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি আবার কোন কোন বিষয় অমত দিয়েছি।

আমরা বলেছিলাম, অমতের বিষয়গুলো নোট অব ডিসেন্ট থাকতে হবে। জুলাই সনদে আমরা স্বাক্ষর করেছি কিন্তু সেই লেখাগুলো যখন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া হলো, সেখানে আমাদের কথাগুলোর একটাও নেই। এটা জাতির সাথে প্রতারণা ও অবিশ্বাস আস্থা তৈরি করা। এখন হঠাৎ করে বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিন সময় দেওয়া হলো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। এটা এক প্রকার ব্ল্যাকমেইল। এর দায় রাজনৈতিক দলগুলোর নয়, দায় সরকারের।’

বিএনপির এই প্রবীণ নেতা আরো বলেন, ‘নির্বাচন ছাড়া জনগণের সরকার তৈরি করা যাবে না। কিন্তু কয়েকটা দল মিলে নির্বাচনকে বিলম্বিত করছে। কারণ ঐ দলগুলো নির্বাচনকে ভয় পায়, সে জন্য তারা নির্বাচনকে পেছাতে চায়। বিএনপির পরিস্কার কথা, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে। আর এক ইঞ্চি বা একদিনও পেছালে জনগণ তা মেনে নেবে না।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির অসংখ্য মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে সেই হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আর পালানোর সময় শাড়ি টেনে দ্রুতই ভেগেছে। আমরা এজন্যই আগে থেকে সাবধান করেছিলাম যে, মানুষের উপর যেভাবে অত্যাচার-জুলুম করছেন একদিন পালাবার পথ পাবেন না। এখন ভারতে বসে বিভিন্ন উসকানি দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করছে। সারা জীবন তিনি বাংলাদেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেননি। তিনি ১৯৮১ সালে এই দেশে এসে বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষকে আমি শান্তিতে থাকতে দিব না, তাই তিনি করেছেন। বাংলাদেশে শান্তির রাজনীতি গড়ে উঠুক তা তিনি চাননি।’

তিনি আরো বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে ট্যাগ লাগানো হয়েছিল যে তারা শুধু আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়, কিন্তু তা সঠিক নয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের আস্থা ছিল আর এবার তা আরো দৃঢ় হয়েছে। এবার হিন্দু ভাইয়েরা ধানের শিষে ভোট দিবেন তা আমি বিশ্বাস করি। কেউ যদি মাদকাসক্ত হয়ে ভিন্ন পথে যায় তাদের ধরে পুলিশে দিবেন। এই ধরনের কোন অপরাধিকে ক্ষমা করবেন না ‘ 

সরকার গঠন করলে বিএনপির পরিকল্পনা জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম নারী ও শিশুদের জন্য অধিদপ্তর খুলেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের লেখাপড়া অবৈতনিক করেছিলেন। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আজকে সময় এসেছে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলবার যেখানে হিংসা প্রতিহিংসা থাকবে না, অন্যায় অত্যাচার থাকবে না, ধর্মে ধর্মে হানাহানি থাকবে না, ভালোবাসা থাকবে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। এই রকম অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই।’