জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিএনপি বলছে, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গেই হতে হবে—এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী নভেম্বরেই গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলছে, সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত, যদিও তারা নির্দিষ্ট সময় বলেনি।
এদিকে বুধবার (২৯ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে হঠাৎ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ফেসবুক প্রোফাইল ‘না’ পোস্টারে সয়লাব। দলের নেতাকর্মীরা একটি ‘না’ লেখা ফটোকার্ড সবাই শেয়ার দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন পোস্টে কমেন্ট করছেন।
বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীদের কমেন্ট থেকে ধারনা করা হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চায় না বিএনপি। তাদের দাবি, আগে জাতীয় নির্বাচন তারপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরও ফটোকার্ডটি শেয়ার করেছেন। তার পোস্টে কমেন্টে মো. ফারুক আহমেদ বিজয় নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলার মাটিতে কোনো গণ ভোট হবে না। এই প্রতিজ্ঞাই হবে আন্দোলনের নতুন স্লোগান।‘
আলিফ আশা নামের অন্য একজন মন্তব্য করেছেন, ‘দেশ বাঁচাতে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট কে 'না' বলুন। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ' না' বলুন।‘
পোস্টের অন্যান্য নেতাকর্মীদের মন্তব্যগুলো প্রায় একই ধরনের। তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চান না।
এদিকে গত মঙ্গলবার সরকারকে কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তাতে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ক্ষমতাবলে’ জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ–২০২৫ জারি করার প্রস্তাব রয়েছে। কমিশনের মতে, আদেশের ওপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং গণভোটে অনুমোদন পেলে আগামী নির্বাচন দ্বৈত ভূমিকার সংসদ গঠনের পথ খুলে দেবে। সেই সংসদের সদস্যদের দিয়েই গঠিত হবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ, যার হাতে থাকবে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংশোধনের ক্ষমতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের বিষয়ে বিএনপি একমত নয়, এ নিয়ে আলোচনারও সুযোগ নেই।’
তিনি আরও জানান, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বিএনপির জন্য বাধ্যতামূলক নয়, কারণ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোই। একই সঙ্গে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদল ছাড়া কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, সুপারিশে গণভোটের সময় নির্ধারণ না থাকায় তারা সন্তুষ্ট নয়। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ জানিয়েছেন, ‘জামায়াত নভেম্বরের মধ্যেই গণভোটের দাবি জানাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, আদেশটি আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতির নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জারি করতে হবে।
এনসিপি সুপারিশগুলোকে সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক দেখছে, তবে তাদেরও অবস্থান হলো—জুলাই জাতীয় সনদের আদেশ জারি করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে। দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্টের কার্যকারিতা না রাখা এবং ‘হ্যাঁ’–‘না’ ভোটের মাধ্যমে গণভোটের প্রস্তাব আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি।’ এনসিপি নেতারা মনে করেন, নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠিত হলে তা দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে জনগণের মতামতকে প্রতিফলিত করবে।
সব মিলিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি হয়েছে—বিএনপি চাইছে একই দিনে ভোট, জামায়াত চাইছে নভেম্বরে গণভোট, আর এনসিপি চাইছে নির্বাচনের আগেই, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে।