Image description

‘তাৎক্ষণিক অনলাইন ক্যাশ। এখনই আবেদন করুন। ৫০ হাজার তিন মাস। ১ লাখ টাকা পাঁচ মাস। দেড় লাখ টাকা ছয় মাস।’ -এটি ‘ফিন ক্যাশ’ নামের একটি মোবাইলে অ্যাপের বিজ্ঞাপন। এভাবেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের কাছে দেওয়া হচ্ছে চটকদার ঋণের বিজ্ঞাপন।

‘অ্যাপ্লিকেশন অনুমোদনের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। উচ্চ পরিমাণের দ্রুত ঋণ পাওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া করবেন না। ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার, ঋণের মেয়াদ ১৮০ দিন। বাংলাদেশ ঋণ। দ্রুত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য ঋণ।’ -এটা ‘দ্রুত ক্যাশ’ নামের অপর একটি মোবাইল অ্যাপের বিজ্ঞাপন।

শুধু এ দুটি নয় ক্যাশ ক্রেডিট, স্মার্টলোন ওয়ার্ল্ড, গুইকলোন নামের আরও কিছু মোবাইল অ্যাপের বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ দিচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে আবার সেই ঋণের কিস্তিও আদায় করছে।

এসব অ্যাপের মাধ্যমে অতিরিক্ত লোভে ফেলা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। গ্রাহকের মোবাইল নম্বর, ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর, এনআইডি নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে ১ হাজার ৫০০ টাকার ঋণের আবেদন করলে ১০ মিনিটের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে ৯৭৫ টাকা। আর এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা সাত দিন। সাত দিনের সুদ ১৫০ টাকা। উৎস ফি বাবদ নেওয়া হচ্ছে ৫২৫ টাকা। পরে হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ইমেইলে পাঠানো হচ্ছে বিল। পরিশোধ করতে বলা হচ্ছে বিক্যাশ, নগদের মাধ্যমে। অর্থাৎ ৯৭৫ টাকা ঋণ নিলে এক সপ্তাহ পরে এর মোট পরিশোধযোগ্য পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৭২৫ টাকা। পরিশোধের ক্ষেত্রে এক দিন বিলম্ব করলে সুদ ধরা হচ্ছে প্রায় ৩০০ শতাংশ। যা যোগ হচ্ছে মূল অঙ্কের সঙ্গে। সময়মতো পরিশোধ না করলে মামলা-হামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করে ফোন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছবি, তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এনআইডি নম্বর দিয়ে এনআইডি কার্ডকে ক্লোন করে বিভিন্ন রকমের প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফেসবুকজুড়ে এ রকম অসংখ্য প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে। যারা মানুষের সরলতা বা দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে ঋণের চক্রে আটকে ফেলছে। পরবর্তীতে নানা রকম হুমকি-ধমকির মাধ্যমে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। এই চক্রের কারও সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তারা দেখা করেন না। বলেন, আমরা শুধু অনলাইনের ঋণ দিয়ে থাকি এবং অনলাইনের মাধ্যমে ঋণের কিস্তি আদায় করি।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম ও লোগো ব্যবহার করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা অ্যাপ তৈরি করে ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ এই ফাঁদে পা দিয়ে অল্পস্বল্প ঋণও পাচ্ছেন। তবে নির্দিষ্ট সময় (৭, ১৫ দিন) সেই ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে ভয়ানক বিপদে ফেলা হচ্ছে গ্রাহকদের। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ফাঁদে না পড়ার জন্য সতর্ক করেছে গত আগস্টে। গত ৭ অক্টোবর এ সংক্রান্ত একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে করেও থামেনি প্রতারক চক্রের প্রতারণা। বরং দিনদিন বেড়েই চলেছে। অনেক ভুক্তভোগী এই প্রতিবেদককে তাদের প্রতারিত হওয়ার ঘটনা জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বা আইএমএফের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এর মাধ্যমে জনসাধারণ আর্থিক প্রতারণার শিকার হতে পারেন বা বিভিন্ন আইনগত ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এ জন্য এসব ওয়েবসাইট বা অ্যাপসে নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ কোনো তথ্য না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, এভাবে ঋণ দেওয়ার এখতিয়ার কারও নেই। কারা ঋণ দেবেন বা দিতে পারবেন তা তো আইন দ্বারা নির্দিষ্ট করা আছে। এ ছাড়া এখানে জনসাধারণের সতর্ক হওয়া খুবই জরুরি। অনলাইন মাধ্যমে এ রকম প্রলোভন ও প্রতারণার বিষয়টি আমরা জেনেছি। এজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪ এর ১৫ (২) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া জনসাধারণ থেকে বিনিয়োগ নেওয়া বা ঋণ দেওয়ার উদ্দেশে যে কোনো ধরনের অনলাইন বা অফলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা একটি অপরাধ। এ জন্য ওই ব্যক্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিহারের জন্য সবাইকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।