Image description
দুর্নীতির জন্যই রাজনীতি

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শাহরিয়ার আলমের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন।  ২৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ২৬১ কোটি টাকার সন্দেহভাজন লেনদেনের অভিযোগে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সূত্রে জানা যায়, শাহরিয়ার আলম সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে ২৭ কোটি ৩৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন এবং তা ভোগ দখলে রাখেন। এ ছাড়া তার নামে থাকা ৬টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে মোট ২৬০ কোটি ৯৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩০.৬০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

রাজশাহী-৬ আসন থেকে ২০০৮ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন শাহরিয়ার আলম। আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর। প্রথমবার নির্বাচনি হলফনামায় ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি ভূমিহীন। ছিল ২ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ, যার বিপরীতে ঋণ ছিল ৭৬ কোটি ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৪২২ টাকা। এমন ‘ঋণগ্রস্ত’ একজন ব্যক্তি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ওই সম্পদের মালিক হন। তবে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাহরিয়ার আলম গত ১৫ বছরে যে পরিমাণ দুর্নীতি ও লুটপাট করেছেন, তার প্রতিফলন এই মামলায় ঘটেনি। শাহরিয়ার আলমের গত ১৫ বছরের সম্পদের স্ফীতি প্রমাণ করে যে তিনি অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করেছেন। ২০০৮ সালে যখন শাহরিয়ার নির্বাচন করে তখন তার গার্মেন্ট ছিল মাত্র তিনটি। মাত্র ১৫ বছরে তিনি আরও পাঁচটি কারখানা স্থাপন করেন। গার্মেন্ট সেক্টরে অভিজ্ঞরা বলেন, এত স্বল্প সময়ে পাঁচটি কারখানা স্থাপন অলৌকিক ঘটনা। তাদের মতে, একমাত্র আলাদিনের চেরাগ পেলেই এটা সম্ভব। এমপি মন্ত্রী হয়ে শাহরিয়ার যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়েছিলেন। এসব গার্মেন্ট কারখানার অর্থের উৎস সম্পর্কে তদন্ত করা হয়নি। দুরন্ত টিভি নামে শাহরিয়ার একটি শিশু-কিশোর কেন্দ্রিক টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান। প্রতি মাসে এ চ্যানেলটিতে টাকা দিতে হতো, সে বিষয়ে কোনো তদন্ত নেই। শাহরিয়ার আলমের একাধিক বান্ধবী আছে এটা ছিল ওপেন সিক্রেট। বান্ধবীদের মধ্যে তার নিকটতম ছিল ‘ল’ অদ্যাক্ষরের একজন নারী। এই মহিলাকেও শাহরিয়ার বনানীতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনে দেন। সেই সম্পদের হিসাব নেই।

দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একটি মামলা হওয়া মানে যে আর কোনো মামলা হবে না সেটা ঠিক নয়। তিনি বলেন, শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ তদন্তাধীন আছে। তদন্তের ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে আরও পাঁচটি দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। সিআইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, গার্মেন্ট ব্যবসার আড়ালে শাহরিয়ার অর্থ পাচার করেছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে শাহরিয়ার আলম রাশিয়া ও ব্রাজিলে মোট ৬৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন। কিন্তু এই রপ্তানির টাকা একটিও দেশে আসেনি। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক শাহরিয়ার আলমের প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে, রপ্তানি করা পণ্যের অর্থ দেশে ফেরত না আসার কারণ জানতে চায়। জবাবে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া থেকে অর্থ আনা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রপ্তানি করা পণ্যের অর্থ কেন দেশে আসেনি, এই প্রশ্ন বাংলাদেশ ব্যাংক করেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দেন। ৫ আগস্টের পর নতুন করে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।