Image description
♦ আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থীর জনসংযোগ শোডাউন ♦ চলছে ভোটের হিসাবনিকাশ প্রস্তুত হচ্ছে প্রশাসনও

দীর্ঘ ১৭ বছর পর একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের দিকে হাঁটছে দেশ। আগামী ফেব্রুয়ারির ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে বইতে শুরু করেছে উত্তাপ। প্রতিটি আসনেই জমে উঠেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার, জনসংযোগ আর শোডাউনের প্রতিযোগিতা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ভোটারের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ, উঠান বৈঠক, মিছিল ও পথসভায়।

রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচনি আমেজ স্পষ্ট। রাজনৈতিক দলগুলো এখন মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকা চূড়ান্ত করার দৌড়ে ব্যস্ত। দলীয় প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহও দেখা যাচ্ছে অনেক জনপ্রিয় স্থানীয় নেতার মধ্যে।

গ্রামে-গঞ্জে এখন ভোটের আলোচনা চায়ের দোকান থেকে হাটবাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। কে কাকে সমর্থন দেবে, কার জয়ের সম্ভাবনা বেশি এসব নিয়ে চলছে তর্কবিতর্ক আর বিশ্লেষণ। সমাজমাধ্যমভিত্তিক প্রচারও জমজমাট। প্রতিটি আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিশালাকার তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার আর লিফলেট বিতরণের মধ্য দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।

অন্যদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে মাঠ প্রশাসন ভোট কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা পরিকল্পনা ও লজিস্টিকস প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় বৈঠক চলছে।

সব মিলিয়ে দেশজুড়ে এখন নির্বাচনি উত্তেজনা তুঙ্গে। ভোটাররাও মুখিয়ে আছেন বহু বছর পর একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য। বিশেষ করে যেসব তরুণ ভোটার এবারই প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন নির্বাচন নিয়ে তাদের তুমুল আগ্রহ। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রার্থিতা ঘোষণা ও প্রচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলে নির্বাচনি মাঠ আরও সরগরম হয়ে উঠবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি। প্রতিটি আসনেই দলটির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী। প্রত্যেকেই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি নিজ এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তৃণমূলে দলটির প্রার্থীরা রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখা ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন। দল যাকেই মনোনয়ন দিক দলীয় স্বার্থে শেষ পর্যন্ত তার জন্যই কাজ করার অঙ্গীকার করছেন তাঁরা। একাধিক প্রার্থীর ছড়াছড়িতে দ্বিধাবিভক্ত ও কোন্দলে জর্জরিত বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন থেকে দেশে ফেরার।

নরসিংদী-৫। এই একটি ছাড়া বাকি সব কটি আসনেই চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। জানা যায়, দলটির এবারের প্রার্থী তালিকার ৮০ শতাংশই নতুন, যারা এর আগে কখনো নির্বাচন করেননি। আর অতীতে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন প্রার্থী রয়েছেন ৫৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছেন জামায়াত মনোনীত প্রার্থীরা। বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেখানে শেষ পর্যন্ত কে হবেন দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত, জামায়াত প্রার্থীরা সেখানে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ভোটারের সমর্থন অর্জনে পূর্ণোদ্যমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভূমিধস বিজয় জামায়াত প্রার্থীদের মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ছাত্র সংসদগুলোর মতোই জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভালো ফল করার প্রত্যাশা দলটির নেতা-কর্মীদের।

এদিকে ৩৬ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ। সম্প্রতি দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেছেন, ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবেন তাঁরা। আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি প্রার্থী ঘোষণা করেছে ১০৯ আসনে।

জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা জুলাই বিপ্লবীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি মাঠে নামেনি। শুরু হয়নি প্রার্থী বাছাই কার্যক্রমও। তবে দলটির শীর্ষ নেতার মধ্যে অর্ধশতাধিক নিজ নিজ আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনায় আছেন। বাদবাকি আসনগুলোতে নির্বাচন নিয়ে এনসিপির উল্লেখযোগ্য তৎপরতা নেই। এসব আসনে দলটির পক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার মতো প্রার্থী নিয়েও আলোচনা নেই।