
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, উপদেষ্টা পরিষদে কারা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেই তথ্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে জানিয়েছি। ছাত্র উপদেষ্টারা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে নেই; তারা অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে অন্য উপদেষ্টারাও যেমন, ছাত্র উপদেষ্টারাও তেমনি। গতকাল সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
নাহিদ ইসলাম বলেন, যদি ছাত্র উপদেষ্টাদের কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রতিনিধি বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়, তবে অন্য উপদেষ্টাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। অনেকেরই পূর্বে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল। তাই এসব বিষয় সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সনদের কাগুজে মূল্যে আমরা বিশ্বাসী নই। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সেটার নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই এনসিপি স্বাক্ষর করবে। সেক্ষেত্রে আমরা সাংবিধানিক একটি আদেশের কথা বলেছি। যে আদেশটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, জুলাই সনদে স্বাক্ষরের অর্ন্তবর্তী সরকার আমাদের আহ্বান জানিয়েছে। আমরা সেখানে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়েও কথা বলেছি। বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে জুলাই সনদের সাংবিধানিক আদেশ জারি করার সুযোগ নেই।
নাহিদ ইসলাম নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এবং তাদের প্রতীক সংক্রান্ত দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে শাপলা প্রতীক কেন আমরা পাব না, সেটার আইনি ব্যাখ্যা না দেওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো প্রতীক চাইব না। নির্বাচন কমিশন যদি সামান্য প্রতীক নিয়ে আমাদের সাথে ন্যায়বিচার না করে, তাহলে তাদের অধীনে নির্বাচন কখনই নিরপেক্ষ হবে না।
তিনি বলেন, প্রতীক না থাকলে আমরা কী নিয়ে নির্বাচন করবো। ‘শাপলা’ ছাড়া অন্য কোনও প্রতীকে আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো না। দ্বিতীয়ত, আমরা নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। নির্বাচন কমিশনের গঠন প্রক্রিয়া, কমিশনের বর্তমান আচরণ আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এটা নিরপেক্ষ হচ্ছে না। এটা স্বচ্ছ হচ্ছে না এবং নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেভাবে কার্যক্রম করার কথা ছিল, সেটা করছে না। কিছু কিছু দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখা যাচ্ছে এবং কোনও দলের প্রতি বিমাতা সুলভ আচরণ করছে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে দায় সরকারের ওপর আসবে। তাই এ বিষয়ে সরকারকে আমরা বলেছি। আমরা মনে করি এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রয়োজন।
নাহিদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে আমরা অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জুলাই গণহত্যার বিচারের বিষয়টি। আমরা আজকে দেখেছি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এবং অভিযোগের কারণে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে আদালতে আনা হয়েছে। আমরা এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছি। সরকার এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতি আমরা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি। ন্যায়বিচারের একটি ধাপ আমরা আগাচ্ছি।
তিনি বলেন, এর পাশাপাশি সারাদেশে শহীদ এবং আহত পরিবারের পক্ষ থেকে যেসব মামলা হয়েছে, সেই মামলাগুলোর বিষয়ে সরকারের কি পদক্ষেপ। পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখতে পাচ্ছি জামিনে আসামিরা ছাড়া পাচ্ছে। শহীদ পরিবার এবং আহতদের হুমকি দিচ্ছে। শহীদ পরিবার, আহতদের নিরাপত্তা এবং বিচারের যে রোডম্যাপ আমরা চেয়েছি সেই রোডম্যাপ যেন প্রকাশ করা হয়। ৮০০ এর অধিক যে মামলাগুলো হয়েছে সে মামলাগুলোর এখন কি অবস্থা, সেগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে, কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ বলেন, জনপ্রশাসনের যে বদলি হচ্ছে সেগুলো কিসের ভিত্তিতে হচ্ছে। সেগুলো দক্ষতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে হচ্ছে কি-না? আমরা দেখতে পাচ্ছি এবং শুনতে পাচ্ছি যে, প্রশাসনের বিভিন্ন ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে। বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে যারা পরিচয় দেয় তারা প্রশাসন, এসপি, ডিসি ভাগ বাটোয়ারা করছে। নির্বাচনের জন্য তারা তালিকা করছে এবং সেগুলো সরকারকে দিচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদের ভেতর থেকেও সেই দলগুলোকে সহায়তা করা হচ্ছে। এভাবে চললে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। উপদেষ্টা পরিষদে যাদের বিরুদ্ধে এই সংশ্লিষ্টতাগুলো রয়েছে তাদের বিষয় যেন প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেন।