
বর্ষার সঙ্গে জোবায়েদ ও মাহিরের প্রেমের কথা বর্ষার পরিবারের সবাই জানতো। মেয়ের মা মাহিরকে পছন্দ করত না। এছাড়া জোবায়েদকে কোন প্রফেশনাল কিলার খুন করেনি। মাহির নিজেই খুন করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র। বুধবার (২২ অক্টোবর) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জোবায়েদের হত্যার চাঞ্চল্যকর এ তথ্য জানায় সূত্রটি। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড রইছ উদদীন জোবায়েদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন রাখে। এর জবাবে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি এসব উত্তর দেন।
সূত্র জানায়, অনেকেই অনেক রকম প্রশ্ন করছে। অনেক নানানিধ কথা বলছে। কিন্তু প্রেমের সম্পর্ক থেকেই হত্যার ঘটনাটা ঘটে। এদিন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড রইছ উদদীন জোবায়েদের খুনের বিষয়ে কোন প্রফেশনাল কিলার খুন করেছে কিনা প্রশ্ন তোলে।
তবে সূত্র জানায়, জোবায়েদকে কোন প্রফেশনাল কিলার হত্যা করেনি। মাহির রহমান নিজেই হত্যা করেছে। পৃথক জায়গা থেকে দুইটা ছুরি কিনলেও একটি ছুরি দিয়েই মারা হয় জোবায়েদকে। অন্য ছুরিটি ব্যবহার হয়নি। মাহিরের বন্ধু আইলানকে পেছন থেকে ছুরি মারার কথা থাকলেও সে মারেনি। কিন্তু মাহির ছুরি মেরে চলে আসার সময় মাহির আইলানকে ছুরি উঠাতে বলে। আমরা একটাই ছুরি উদ্ধার করি স্পট থেকে। ছুরি দিয়ে একটা আঘাতেই তাকে হত্যা করা হয়। ফলে একাধিক জখম বা একাধিক আঘাত করা লাগেনি। এটির নির্ভরযোগ্য তথ্য হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন পোস্টমর্টেম এর সঙ্গে যুক্ত থাকা ডাক্তারের উক্তি।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিশ্চিত করে পোস্টমর্টেম শেষে ডাক্তার জানায়, গলার রক্তনালীতে আঘাত করা হয় জোবায়েদের। রক্ত নালি কেটে যাওয়াতে খুবই স্বল্প সময়ে রক্তক্ষরণের মাধ্যমে তার মৃত্যু হয়। সূত্র জানায়, এসকল কথা আদালতে আসামিরা জবানবন্দিতেও স্বীকার করেছে।
এসময় তদন্তের বিশারদে বর্ষার বাবা-মা বা, পরিবার ওই বাসার সকল সদস্যদের সঙ্গে কোন কথা হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে সূত্র জানায়, আমরা গতকালের আগে কথা বলেছিলাম কিন্তু আজ আর কোন কথা বলা যায়নি। আমরা আজ খোঁজ নিই। বাসায় কেউ ছিলো না। এজন্য কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তদন্তের জন্য আমরা আবার কথা বলবো।
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এসেছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে সূত্র জানায়, এখনই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসেনি। এটি আসতে সময় লাগে। নতুন আর কোন তথ্য আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে সূত্র জানায় আমরা কয়েকটি টিম তদন্ত করছি। তদন্তের স্বার্থে অনেক পাওয়া তথ্যও গোপন করতে হচ্ছে।
এদিকে মামলার এজাহারের বিষয়ে অভিযোগ তুলে বাদী পক্ষের আইনজীবী ইশতিয়াক জিপু বলেন, হত্যাকন্ডের পর বর্ষা জোবায়েদের এক বন্ধুকে বলেছে, কে বা কারা জোবায়েদকে মেরে ফেলেছে। এটা সূচনা বক্তব্য। কিন্তু এসব কিছুই উল্লেখ করেনি পুলিশ। এছাড়া এই মামলায় ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেফতার করা হবে। এই প্রত্যাশা পুলিশের কাছে।
জোবায়েদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে নিজ বিভাগ (পরিসংখ্যান) বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভাস্কর্য চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এ সময় পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিপন রউফ সহ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত রোববার জোবায়েদ হোসেন পুরান ঢাকার আরমানীটোলায় ১৫, নুরবক্স লেনে রৌশান ভিলা নামের বাসায় বর্ষা নামের এক ছাত্রীকে প্রতিদিনের মতোই পড়াতে যান। গত এক বছর ধরে তিনি ওই ছাত্রীকে পড়াতেন। এদিন আনুমানিক বিকাল ৪ টার ৪৫ মিনিটের দিকে ছাত্রীর বাসার তিন তলায় উঠতে সিঁড়িতে তিনি খুন হন। বাসার নিচ তলার সিঁড়ি থেকে তিন তলা পর্যন্ত সিঁড়িতে রক্ত পড়েছিলো। গত সোমবার জোবায়েদকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।