
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বগুড়ায় বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন। তারা ভোট কেন্দ্র কমিটি গঠন ছাড়াও উঠান বৈঠকসহ বিভিন্নভাবে দলীয় প্রচারণা শুরু করেছেন।
জেলা নির্বাচন অফিস, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, কেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা নির্ধারণসহ বিভিন্ন কাজ এগিয়ে নিয়েছেন। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়ায় সাতটি আসনের মধ্যে পাঁচটির প্রার্থীকে ফোন করে সবুজ সংকেত দেওয়ায় প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত হয়েছেন। তারা জোরেশোরে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। এলাকায় নির্বাচনি আমেজ ছড়িয়ে পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এরপর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বগুড়ার সাতটি আসনে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, নাগরিক ঐক্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে নামতে শুরু করেন।
জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। তবে প্রতিটি আসনে বিএনপির ৪-৫ জন প্রার্থী হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রচারণা শুরু করেন। প্রতিটি আসনে উঠান বৈঠক, ভোট কেন্দ্র কমিটি গঠন ছাড়াও প্রার্থীরা গত শারদীয় দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সরব হয়েছেন।
জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে সাতটি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা এবং তাদের পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর থেকে ওই সব প্রার্থী ও তাদের লোকজন এলাকায় ব্যাপক সরব হয়েছেন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে জনসভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
বিএনপি, জামায়াত, নাগরিক ঐক্য পূজামণ্ডপগুলোতে সাধ্যমত আর্থিক সহযোগিতা দেয়। যা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করা হয়।
নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীরা এতদিন জানতেন তাদের সভাপতি বগুড়া-২ আসনে বিএনপি জোটের হয়ে ভোট করবেন। কিন্তু বিএনপি সেখানে প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়ায় নাগরিক ঐক্যের লোকজন হতাশ হয়েছেন।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সন্ধ্যায় ফোনে বগুড়ার সাতটি আসনের মধ্যে পাঁচটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সবুজ সংকেত দিয়েছেন।
ওইসব প্রার্থীরা হলেন- বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা সভাপতি মীর শাহে আলম, বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মুহিত তালুকদার, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন এবং বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ।
বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসন দুটি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। তাই এ দুটি আসনে কাউকে সংকেত দেওয়া হয়নি। সবার ধারনা, বগুড়া-৬ আসনে খালেদা জিয়া ও বগুড়া-৭ আসনে তারেক রহমান প্রার্থী হবেন।
হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পাওয়া সম্ভাব্য প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম, মীর শাহে আলম, আবদুল মুহিত তালুকদার, মোশাররফ হোসেন এবং গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফোন করে তাদের প্রার্থী হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামার নির্দেশ দেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও জয়লাভের ব্যাপারে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রার্থীরা সবাই নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে ব্যাপক আশাবাদী।
এদিকে তারেক রহমানের সবুজ সংকেত প্রদানের পর বগুড়ার পাঁচটি আসনের প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত হয়েছেন। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য প্রার্থী ও তাদের লোকজন হতাশ হয়েছেন। তারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
তারা বলেন, প্রার্থী হতে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে কাজ করছেন। তারেক রহমানের ৩১ দফার প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। জনগণকে ধানের শীষে ভোট প্রদানে উদ্বুদ্ধ করছেন। এরপরও হাইকমান্ড যাকে প্রার্থী করবেন সবাই তার পক্ষে কাজ করবেন।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বগুড়ার সাতটি আসনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। নাগরিক ঐক্য এখন পর্যন্ত বগুড়া-২ আসনে কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রচারণা চালাচ্ছেন। বগুড়া-১ আসনে জামায়াতের অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন ও ইসলামী আন্দোলনের এবিএম মোস্তফা কামাল পাশা, বগুড়া-২ আসনে জামায়াতের মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান ও ইসলামী আন্দোলনের মুফতি জামাল পাশা, বগুড়া-৩ আসনে জামায়াতের নূর মোহাম্মদ আবু তাহের ও ইসলামী আন্দোলনের অধ্যাপক শাজাহান তালুকদার, বগুড়া-৪ আসনে জামায়াতের ড. মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ ও ইসলামী আন্দোলনের অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, বগুড়া-৫ আসনে জামায়াতের দবিবুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলনের অধ্যাপক মীর মাহমুদুর রহমান চুন্নু, বগুড়া-৬ আসনে অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল ও ইসলামী আন্দোলনের আনম মামুনুর রশিদ এবং বগুড়া-৭ আসনে জামায়াতের গোলাম রব্বানী ও ইসলামী আন্দোলনের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম শফিক চূড়ান্ত প্রার্থী।
এছাড়া বগুড়ার সাতটি আসনে অন্যান্য দলের নেতা ও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত কারো প্রার্থিতা নিশ্চিত হয়নি। এরপরও বগুড়ার সাতটি আসনে নির্বাচনি প্রচারণা জমতে শুরু করেছে।
তবে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মামলা-হামলায় জর্জরিত। প্রতিটি মামলায় ৩০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অনেকের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। শত শত নেতাকর্মী মামলা মাথায় নিয়ে এলাকা ছাড়া হয়েছেন। অনেক বাড়ি এখনও পুরুষশূন্য। অনেক মামলার বাদী আসামিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কোটিপতি বনে গেছেন। কেউ কেউ টিনের ঘরে এসি লাগিয়েছেন।
তাদের মতে, এসব মামলা করেছে বিএনপির লোকজন। তাই মামলা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার আওয়ামী লীগের ভোটাররা নির্বাচনে বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। আর এ ধারণা সঠিক হলে অনেক আসনে জামায়াত প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপি প্রার্থীর জয়লাভ করা কঠিন হয়ে পড়বে।