Image description
 

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের (আবু ইব্রাহিম) মৃত্যুর প্রথম বার্ষিকীতে হামাস বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছে, ‘আল-আকসা বন্যার শিখা কখনো নিভবে না।’

 

 

লেবাননের হিজবুল্লাহ ঘনিষ্ঠ গণমাধ্যম আল-মানার টিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শহীদ নেতাদের রক্ত প্রজন্মের পর প্রজন্মের জন্য প্রতিরোধের পথকে আরও মজবুত করে, তাদের আদর্শে অটল থাকার অঙ্গীকার পুনর্নিশ্চিত করে এবং তাদের ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতি আনুগত্যকে স্থায়ী করে তোলে—যতক্ষণ না ভূমি ও পবিত্র স্থানের মুক্তি অর্জিত হয়।’

 

হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এক বছর কেটে গেছে সেই বীরত্বগাথার পর, যা বিশ্ব দেখেছিল—যেখানে আল-আকসা বন্যার যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহীদ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। তিনি তার জিহাদ ও আত্মত্যাগের জীবন শেষ করেছেন সম্মুখসমরে দাঁড়িয়ে, কখনো পিছিয়ে না গিয়ে—হাতে লাঠি উঁচিয়ে দখলদার শক্তির বর্বরতা ও অপরাধের সামনে অটল থেকে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মহান জাতীয় নেতার শাহাদাতের এক বছর পর আমাদের জনগণ ধৈর্য ও দৃঢ়তার সঙ্গে, আর আমাদের প্রতিরোধ শক্তি সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে একটি জাতীয় অর্জন সম্পন্ন করেছে।” হামাস দাবি করে, সাম্প্রতিক এক চুক্তির মাধ্যমে “দখলদারের আগ্রাসন, গণহত্যা, অনাহার, বাস্তুচ্যুতি ও জাতিগত নিধনের সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।’ 

তাদের ভাষায়, “‘ফ্লাড অব দ্য ফ্রি’ নামে সেই চুক্তির আওতায় ১,৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেতে যাচ্ছেন, যা দখলদার কারারক্ষীদের অহংকার ভেঙে দেবে।’

বিবৃতিতে হামাস সিনওয়ারের জীবনের প্রশংসা করে বলে, ‘তিনি কৈশোর থেকেই একজন মুজাহিদ ছিলেন, ২৩ বছরের কারাবাসে নিজের বন্দিদাতাদের পরাস্ত করেছিলেন। মুক্তির পরও তিনি প্রস্তুতি, সংগঠন ও পরিকল্পনার পথে অটল ছিলেন, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে আল-আকসা বন্যার সূচনার মধ্য দিয়ে পরিণতি পায়। তিনি দখলদারকে পরাস্ত করেন, তাদের সামরিক শক্তির মিথ ভেঙে দেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে শাহাদাত বরণ করেন।’

হামাস জানায়, ‘আমাদের ভাই নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারসহ যেসব নেতা ও প্রতীক শহীদ হয়েছেন, তাঁদের শাহাদাত আমাদের আন্দোলন, জনগণ ও প্রতিরোধকে আরও দৃঢ়, অটল ও অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আল-আকসা ইন্তিফাদার শিখা জ্বলতে থাকবে—অধিকার রক্ষার চেতনায় প্রজ্বলিত হয়ে। আমাদের মহান জনগণের আত্মায় এই শিখা কখনো নিভে যাবে না, যত বড় ত্যাগই দিতে হোক না কেন।’ 

হামাস অঙ্গীকার করে, ‘আমরা আমাদের শহীদ নেতাদের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বস্ত। পতাকা কখনো মাটিতে পড়বে না; এটি উঁচুতে উড়বে—প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দায়িত্ব হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে—যতক্ষণ না সম্পূর্ণ মুক্তি ও জেরুজালেম রাজধানীসহ একটি পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।’

 

 

সিনওয়ারকে উদ্দেশ করে হামাস বলে, ‘তোমার শাহাদাতের প্রথম বার্ষিকীতে, আবু ইব্রাহিম, শান্তিতে বিশ্রাম নাও। তুমি তোমার দায়িত্ব পূর্ণ করেছ, শত্রুর পতাকা নামানোর জন্য লড়েছ। যদিও তোমার দেহ গাজার মাটিতে আর নেই, তোমার আত্মা ছড়িয়ে আছে সমগ্র বিশ্বজুড়ে—ফিলিস্তিনের জন্য চিরন্তন গৌরব রচনা করে।’

বিবৃতির শেষ অংশে হামাস জানায়, ‌‘শহীদ বীর ইয়াহিয়া সিনওয়ার (আবু ইব্রাহিম), এবং আমাদের সব শহীদ, নেতা ও জনগণের সন্তানদের প্রতি রইল দোয়া, গৌরব ও চিরন্তন শ্রদ্ধা। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি তাঁদের নবী, সত্যবাদী, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের সঙ্গে সর্বোচ্চ জান্নাত দান করেন—আর তারাই শ্রেষ্ঠ সঙ্গী।’