
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের মাটি, শস্য ও ভবিষ্যৎ—সবকিছুই কৃষকদের ঘামে ও পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে। দেশের প্রতিটি ধানগাছ, ফসল ও সবজিক্ষেতে তাদের সহনশীলতা ও সংগ্রামের গল্প লুকিয়ে আছে। বিএনপি সেই কৃষকদের হাতকেই শক্তিশালী করতে চায়।
বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সত্যিকারের খাদ্য নিরাপত্তা কেবল তখনই সম্ভব, যখন সরকার, কৃষক, উদ্যোক্তা ও জনগণ একসঙ্গে কাজ করবে।’
তিনি স্মরণ করেন, কীভাবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দুর্ভিক্ষপীড়িত সময় থেকে বাংলাদেশকে আত্মনির্ভরতার পথে নিয়ে গিয়েছিলেন— সেচ সম্প্রসারণ, খাল খনন ও বহুমুখী ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন। পরে বেগম খালেদা জিয়া সেই ঐতিহ্যকে ধরে রেখে কৃষকদের সার ভর্তুকি, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন ও ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচির মাধ্যমে আরও ক্ষমতায়িত করেন।
তারেক রহমান বলেন, আজ যখন দেশ জলবায়ু সংকট, পানিসংকট ও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির মুখোমুখি, তখন সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নতুনভাবে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের কথাও উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে ১১.৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় তারা এখন মাসে মাত্র ছয় ডলারের খাদ্য সহায়তায় বেঁচে আছে।’
এই পরিস্থিতিতে তিনি সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, দাতা দেশ ও এনজিওগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানান, যাতে খাদ্য সহায়তা পুনরুদ্ধার ও জীবিকায়নের সুযোগ বাড়ানো যায়। তারেক রহমানের মতে, বিশ্বজুড়ে গাজা, সুদান, ইয়েমেন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পর্যন্ত খাদ্য অনিরাপত্তা বাড়ছে— তাই বাংলাদেশের কৃষি হতে হবে মানবিক, উদ্ভাবনী ও টেকসই।
বিএনপির খাদ্য ও কৃষি নিরাপত্তার পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিটি কৃষককে দেওয়া হবে নিরাপদ ডিজিটাল আইডি, যার মাধ্যমে তারা সরাসরি সার, ভর্তুকি, ঋণ, ফসল বিমা ও সরকারি ক্রয়ে অংশ নিতে পারবেন— কোনো মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই।
তিনি আরও জানান, বিএনপি ২০ হাজার কিলোমিটার নদী ও খাল পুনঃউদ্ধার, তিস্তা ও গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ, এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সেচব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের পরিকল্পনা নিয়েছে। পাশাপাশি ‘অলটারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রায়িং’ পদ্ধতিতে ধান চাষ বাড়ানো হবে, যা পানি সাশ্রয় ও কার্বন নিঃসরণ কমাতে সহায়তা করবে এবং বাংলাদেশকে কার্বন ক্রেডিট থেকে আয় করার সুযোগ দেবে।
নারীদের ক্ষমতায়ন ও পুষ্টি নিরাপত্তায় ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ও ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ কর্মসূচি চালুর উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এতে নারীরা পরিবারপ্রধান হিসেবে সিদ্ধান্তগ্রহণে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
এছাড়া খাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও রপ্তানিমুখী শিল্পে ১৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। আধুনিক গুদাম, কোল্ড স্টোরেজ ও কৃষি বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কৃষকের আয় ও খাদ্য সংরক্ষণ দুই-ই বাড়ানো হবে। তরুণদের কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে যান্ত্রিকীকরণ, ড্রোন প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ ফান্ড প্রদান করা হবে।
তারেক রহমান বলেন, ‘বিশ্ব যখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে, বাংলাদেশ তখন উদাহরণ হতে পারে— যেখানে খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষকের মর্যাদা ও টেকসই উন্নয়ন একসঙ্গে বাস্তবায়িত হয়। বাংলাদেশের শক্তি সেই হাতে, যে হাত মাটিতে চাষ করে। বিএনপি সেই হাতগুলোকেই ক্ষমতায়িত করবে— যাতে তারাই গড়ে তোলে বাংলাদেশের আগামী।’