
ভারতে আসন্ন ধনতেরাস ও দীপাবলি উৎসবের আগে হু হু করে বেড়ে গেছে স্বর্ণ চোরাচালান। সরকারি ও শিল্প খাতের কর্মকর্তাদের বরাতে এমনটাই জানিয়েছে রয়টার্স।
স্বর্ণের রেকর্ড মূল্য ও সরবরাহ সংকট এই প্রবণতাকে আরও উসকে দিয়েছে বলে তারা জানাচ্ছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বর্ণ ক্রেতা দেশ ভারতে গত বছর সরকার আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশে নামানোর পর চোরাচালান কিছুটা কমেছিল। তবে সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে তা আবার বেড়েছে। দেশটির শুল্ক দপ্তর ও রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদপ্তর (ডিআরই)। দেশজুড়ে একাধিক বিমানবন্দরে স্বর্ণ পাচারের নানা প্রচেষ্টা আটকে দেওয়া হচ্ছে।
চেন্নাইয়ের এক বুলিয়ন ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, ‘আগে ভারতে স্বর্ণ এনে বিক্রি করতে ঝুঁকি ও সময় দুই-ই লাগত। কিন্তু আসন্ন উৎসব উপলক্ষে চাহিদা বেড়েছে। আর সরবরাহ কম থাকায় পাচারকারীরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা বিক্রি করে ফেলতে পারছে।’
ভারতে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ধনতেরাস ও দীপাবলি উৎসবকে ঘিরে স্বর্ণ কেনাবেচার মৌসুম জমে ওঠে। এই সময়ে স্বর্ণ কেনা শুভ বলে মনে করা হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার ভারতে স্বর্ণের দাম ১০ গ্রামে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৯৫ রুপির নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছে। এর ফলে ৬ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ৩ শতাংশ স্থানীয় বিক্রয় কর ফাঁকি দিয়ে এই দামে ১ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করে কালোবাজারিরা সর্বনিম্ন ১১ লাখ ৫০ হাজার রুপি লাভ করতে পারছেন।
মুম্বাইয়ের এক জ্যেষ্ঠ স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেন, ‘স্বর্ণের দাম যত বাড়ছে, পাচারকারীদের লাভও তত বাড়ছে। এখন তাদের জন্য এটা ভয়ংকরভাবে লোভনীয় এক ব্যবসা।’
গত জুলাইয়ে যখন আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছিল, তখন পাচারকারীদের প্রতি কেজিতে লাভ নেমে এসেছিল ৬ লাখ ৩০ হাজার রুপিতে। কিন্তু এখন বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণ কেনার হিড়িক পড়ায় বাজারে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে।
কলকাতার এক জুয়েলারি বিক্রেতা বলেন, ‘ব্যাংকগুলো এখন পুরো চাহিদা মেটাতে পারছে না। ফলে তারা সীমিত সরবরাহের ওপর বিপুল প্রিমিয়াম নিচ্ছে।’
দেশজুড়ে এই সপ্তাহে ভারতীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি আউন্সে ২৫ ডলার পর্যন্ত প্রিমিয়াম নিচ্ছেন—যা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে (যা মার্চে শেষ হয়েছে) ভারতীয় সংস্থাগুলো ৩,০০৫টি স্বর্ণ চোরাচালান মামলা রেকর্ড করেছে এবং ২.৬ মেট্রিক টন স্বর্ণ জব্দ করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দীপাবলি পর্যন্ত এই চোরাচালানের প্রবণতা আরও বাড়তে পারে, কারণ উৎসবের মৌসুমে ভারতীয়দের কাছে স্বর্ণ এখনো শুধু গয়না নয়—অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রতীক।