
‘জাতীয় সরকারের মডেল’-বিএনপির র্দীঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। এজন্য মিত্রদের জন্য অন্তত ৫০টি আসন ছাড়ের চিন্তা বিএনপির। এক্ষেত্রে তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যে তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।
এটিকে নতুন দল এনসিপির সাথে নির্বাচনী জোটের ইঙ্গিত হিসেবেও দেখছেন অনেকে। জোটবদ্ধ নির্বাচন নাকি এককভাবে লড়াই করবে এনসিপি? এখনই এমন প্রশ্নের উত্তর না মিললেও পর্দার আড়ালে বিএনপি ও জামায়াতের সাথে সমানতালে এনসিপির আলোচনার গুঞ্জন রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এদিকে, নির্বাচনী জোট নাকি বিএনপি জয়ী হলে শুধু সরকারের অংশীদার হবে এনসিপি, এমন আলোচনা নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে নারাজ বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে যারা সংগ্রাম করেছে, আন্দোলন করেছে, অনেকে জেল খেটেছেন, নানা নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন, নিঃসন্দেহে তো তাদেরও দাবি আছে। বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল, কিন্তু তাদেরকেও তো কিছু ছাড় দিতে হবে। কীভাবে সমন্বয় করা যায় নির্বাচনের ক্ষেত্রে, মনোনয়নের ক্ষেত্রে, পরে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে (যদি নির্বাচিত হই); সব বিষয়েই সমন্বয় করা হবে।
নির্বাচনী জোট নিয়ে জামায়াত ইসলামী ও এনসিপির দায়িত্বশীল নেতাদের কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে জামায়াত বলছে, জোট করার বিষয়ে এখনও আলোচনা শুরু হয়নি।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, কোন দল কীভাবে জোট করলো বা কে কার সাথে নির্বাচন করবে, সেদিকে আপাতত নজর নেই জামায়াতের।
তিনি আরও বলেছেন, জামায়াত জোটে যাবে এই সিদ্ধান্ত এখনও নেয় নাই। তবে যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল, দীর্ঘ গণতন্ত্রতান্ত্রিক আন্দোলনে ছিল, দেশের স্বার্থে যারা সবসময় কাজ করেছে তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে এবং ভোটের নির্বাচনেই যদি আমরা জনগণের আস্থা, ভালোবাসা, গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারি তাহলে কে কীভাবে জোট করলো, কার সাথে নির্বাচন করলো এটার দিকে আমাদের দৃষ্টি নাই।
নতুন দল হিসেবে নির্বাচনী জোট নিয়ে এনসিপি কী ভাবছে? যখন একদিকে বিএনপি জয়ী হলে ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার হাতছানি, অন্যদিকে জামায়াতের বেশি আসন ছাড়ের প্রস্তাব। এ নিয়ে কৌশলী অবস্থান এনসিপি নেতাদের।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বিএনপি বা জামায়াত বা অন্য কোনও দল কার সঙ্গে আমাদের জোট হতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। বাংলাদেশের সামগ্রিক স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়েই আমরা জোটের কথা চিন্তা করতে পারি। এখন পর্যন্ত আমাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত হলো আমরা আমাদের সক্রিয়তা বজায় রেখে আমাদের সামর্থ্যের মধ্য দিয়েই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই।
দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, আমরা মনে করি যে জোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্তটা মাসখানেকের মধ্যে আমরা নিতে পারবো। মানে এই আলোচনাটা একটা পরিণতির দিকে যাবে। আমরা যাদের সাথেই জোটে যাই না কেন বা আমাদের নেতৃত্বে যদি কোনও জোট করি, তাহলে আমরা দুইটা জিনিসের কয়েকটা জিনিসের নিশ্চিয়তা চাই। একটা হচ্ছে যে আমরা কোনও চাঁদাবাজি কিংবা এই যে মাঠ পর্যায়ের সহিংস রাজনীতি এটার ব্যাপারে আমাদের রিজার্ভেশন আছে; তো আমরা সেটা জানাবো, আমরা এটা এটা করতে চাই না। কতগুলো জিনিসের ব্যাপারে আমরা ছাড় দিবো না; মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান— এগুলোকে আমরা বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে চাই। এগুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ।
স্বকীয়তা বজায় রেখে সামর্থ্য অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, এমনটা বলছেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা।