Image description

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বাড়ছেই। মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং এরই মধ্যে ঘোষিত প্রার্থীদের নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা চলছে হাটে-মাঠে-বাটে। চলছে ভোটের আগাম প্রচারণা, চলছে আগাম হিসাব-নিকাশও। রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং এরই মধ্যে ঘোষিত প্রার্থীরা।

বিএনপি থেকে প্রতিটি আসনে মনোনয়ন পেতে চলছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কর্মসূচির প্রতিযোগিতা। জেলার সব আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষণা করেছে তিন মাস আগেই। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে বেশ কয়েকজন নেতা ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জেলার বেশির ভাগ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীর সঙ্গে।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে মূলত জেলার সব আসনেই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচিই বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে। অন্য কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়নি এখনো। জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে আজ শেষ পর্বে তুলে ধরা হলো ৮ থেকে ১৬ নম্বর আসনের সর্বশেষ পরিস্থিতি।

চট্টগ্রাম জেলায় বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জামায়াতে ইসলামী থেকে ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা রয়েছেন।
এর মধ্যে বিএনপি থেকে আছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো. আসলাম চৌধুরী, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মধ্যে আছেন দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। কমিউনিষ্ট পার্টি থেকে আছেন দলটির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ আলম।

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী-পাঁচলাইশ আংশিক) : এখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান এবং মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ। এখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী বিএমএ নেতা ডা. আবু নাসের।
এলডিপি থেকে ভোটযুদ্ধে নামতে চান দলের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন আলম এবং এনসিপি থেকে দলের দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জোবায়রুল হাসান আরিফ।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) : এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, বাংলাদেশ পাটকল জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাঈদ আল নোমান এবং বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামসুল আলম। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ডা. এ কে এম ফজলুল হক। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে ভোটযুদ্ধে নামতে চান দলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ।

চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর) : এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান এবং যুবদল চট্টগ্রাম নগর কমিটির সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী। এখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চসিকের সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী। এ আসনে এনসিপি থেকে ভোটের মাঠে লড়তে চান দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব সাগুফতা বুশরা মিশমা।

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা-ডবলমুরিং-ইপিজেড) : এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং তাঁর ছেলে ইস্রাফিল খসরু। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আগেও এ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী চসিকের সাবেক কাউন্সিলর শফিউল আলম।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) : এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য গাজী মো. শাহজাহান জুয়েল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়া, পটিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদুল আলম এবং এস আলমের বিভিন্ন ব্যাংকে দায়িত্ব পালনকারী সৈয়দ হাবিব হাসনাত। এখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ডা. ফরিদুল আলম। গণঅধিকার পরিষদ থেকে লড়তে চান দলের দক্ষিণ জেলা শাখার সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডাক্তার এমদাদুল হাসান।

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) : এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন সাবেক এমপি সরওয়ার জামাল নিজাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জিয়া উদ্দিন আশফাক, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন এবং দলের জেলা কমিটির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। এখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী দলের দক্ষিণ জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। এই আসনে এনসিপি থেকে লড়তে চাইছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য জোবায়ের ইসলাম মানিক।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) : এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম, সাবেক বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন, জেলা বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার এবং চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন চৌধুরী। এখানে জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত প্রার্থী চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাদৎ হোসাইন। এ আসনে সাবেক মন্ত্রী ও এলডিপির প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তিনি অংশ না নিলে আগামী নির্বাচনে তাঁর ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক অংশ নিতে পারেন। এখানে এনসিপি থেকে ভোটযুদ্ধ করতে চাইছেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আলী।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া) : এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী। এই হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনে লড়তে চান দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসহাব উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ওসমান চৌধুরী এবং লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তাফা আমিন।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) : এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর দুই ছেলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক লিয়াকত আলী চেয়ারম্যান। তবে এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী সাবেক বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম। এ আসনে এনসিপি থেকে লড়তে চান দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক।