Image description
বিটিআরসিকে চিঠি । চায় নিবেদিত সংযোগ ও পর্যবেক্ষণবিহীন আইপি। স্থাপন করা হয়েছে চার গেটওয়ে, ৩৫ অ্যান্টেনা। আলোচনার জন্য স্টারলিংককে ডেকেছে বিটিআরসি।

বাংলাদেশকে ইন্টারনেট সরবরাহের আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে ব্যবসা করতে চায় স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা- দানকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। এ জন্য অনুমোদন চেয়ে তারা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি পাঠিয়েছে।

জানা গেছে, স্টারলিংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করে প্রযুক্তিগত, আইনগত এবং ব্যবসায়িক বিষয়গুলো ভালোভাবে মূল্যায়ন করার পর অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চায় বিটিআরসি। এ জন্য আগামীকাল বুধবার আলোচনার জন্য স্টারলিংককে ডাকা হয়েছে।

জানতে চাইলে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং ও অপারেশনস শাখার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিউল আজম পারভেজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা স্টারলিংকের ই-মেইল পেয়েছি। তারা আইপিএলসি এবং আনফিল্টার্ড আইপি চেয়েছে। তাদের সঙ্গে মুখোমুখি না বসে শুধু চিঠি চালাচালির মাধ্যমে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। ৮ অক্টোবর তাদের আমরা ডেকেছি; কিন্তু তারা আসবে কি না, এখনো জানায়নি।’

আইপিএলসি (ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজড সার্কিট) হলো দুই দেশের মধ্যে নিরাপদ, উচ্চক্ষমতার ডেটা স্থানান্তরের জন্য একটি নিবেদিত যোগাযোগ লাইন। আর আনফিল্টার্ড আইপি হলো সরাসরি এবং সীমাহীন ইন্টারনেট রুট, যা দেশীয় ফিল্টারিং বা পর্যবেক্ষণ এড়িয়ে যায়।

বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, স্টারলিংক তাদের ই-মেইলে বলেছে, বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে তারা তাদের বাংলাদেশের ‘পয়েন্ট অব প্রেজেন্স’ (পপ) বা ডেটা হাবকে সিঙ্গাপুর ও ওমানের হাবের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চায়। এরপর বাংলাদেশ থেকে নেপাল ও ভুটানে ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করবে। এ সংযোগ স্থাপনের জন্য তারা সরকার অনুমোদিত স্থানীয় কোম্পানি ‘ফাইবার অ্যাট হোম’ এবং ‘বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল’ থেকে আইপিএলসি সেবা নেবে।

দেশের ইন্টারনেট সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম মনে করেন, স্টারলিংককে অনুমতি দেওয়ার আগে আমাদের দেশের ব্যান্ডউইডথের সরবরাহ এবং চাহিদার বিষয়টি মূল্যায়ন করা উচিত। না হলে স্টারলিংককে ব্যান্ডউইডথ দিতে ভারত থেকে কিনতে হতে পারে।

আমিনুল হাকিম বলেন, ‘বিএসসিপিএলসির (বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌লস পিএলসি) কাছ থেকে আমরা পাচ্ছি ৭ টিবিপিএসের (টেরাবিট পার সেকেন্ড) মতো। আমাদের দেশের বর্তমান চাহিদা হচ্ছে সাড়ে ৮ টিবিপিএস, যেটা প্রতি মাসে বাড়ছে। বাকি ব্যান্ডটা আইটিসি অপারেটরদের মাধ্যমে ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। এখন যদি স্টারলিংক আমাদের দেশ থেকে ব্যান্ড নিয়ে পাশের দেশে দেয়, তার মানে হচ্ছে আমাদের অপারেটরগুলো আইটিসি থেকে ব্যান্ডটা আমদানি করবে। তার মানে ভারতকে ডলারটা পেমেন্ট করতে হবে।’

ইন্টারনেট রুটের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবনার বিষয় বলে মনে করেন অনেকে। তবে টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির মনে করেন, এখানে বাংলাদেশের নিরাপত্তাঝুঁকি থাকার কথা নয়।

পর্যাপ্ত তথ্য পাচ্ছে না বিটিআরসিএ

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে চারটি গেটওয়ে স্থাপন করেছে স্টারলিংক। এর মধ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে রয়েছে একটি পপসহ দুটি এবং রাজশাহী ও যশোরে রয়েছে একটি করে গেটওয়ে। এসব গেটওয়েতে ৩৫টি অ্যান্টেনাও বসানো হয়েছে।

গত আগস্টে এই গেটওয়েগুলো পরিদর্শন করে বিটিআরসি। এরপর বিটিআরসির কমিশন সভায় পরিদর্শনের তথ্যাবলি তুলে ধরা হয়। সেখানে জানানো হয়, স্টারলিংকের বাণিজ্যিক কার্যক্রম-সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। তবে তাদের এনটিটিএন (ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোম, সামিট এবং বিএসসিপিএলসির পক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, স্টারলিংক তাদের কমার্শিয়াল ট্রাফিক আদান-প্রদান করছে। যদিও এলআই (ল ফুল ইন্টারসেপশন) মেনে তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারিনি বিটিআরসি। স্টারলিংক বাংলাদেশে স্থাপিত গেটওয়ে কিংবা অন্য দেশের গেটওয়ে ব্যবহার করে তাদের ট্রাফিক সঞ্চালন করছে কি না, তা বিটিআরসির পরিদর্শনে স্পষ্ট হওয়া যায়নি।