Image description
ভুয়া কার্ডধারীর সংখ্যা অন্তত ২০ হাজার হবে -জেলে সমিতির সভাপতি ইসরাইল পন্ডিত

বরিশালে ভুয়া জেলে কার্ডের ছড়াছড়ি। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে বিলি করা এই ভুয়া কার্ডের সংখ্যা কয়েক হাজার বলে ধারণা করা হচ্ছে। নদী ও সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে জেলে সম্প্রদায়কে কিছু সুবিধা দিতে এসব কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি বছরই সরকার কার্ডধারীদের খাদ্যপণ্য দিয়ে থাকেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ভুয়া কার্ডধারীর কেউ রিকশা চালান, কেউবা চালান ভ্যান। আছেন জনপ্রতিনিধিসহ অন্যান্য পেশায় নিয়োজিতরাও। ইউনিয়ন পর্যায়ে ভোটের রাজনীতি আর আধিপত্য বজায় রাখতে এদের জেলেদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির নেতাদের। বরিশালের ১০ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৮৫ হাজার ১৭৭ জন। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ইসরাইল পন্ডিত বলেন, আওয়ামী লীগ ও মৎস্যজীবী লীগ নেতারা প্রভাব খাটিয়ে জেলেদের তালিকায় এই ভুয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার সংখ্যা বরিশাল জেলাতেই কমপক্ষে ২০ হাজার। এদের জন্য প্রকৃত জেলেরা দুর্দশায় রয়েছেন। কার্ডধারী প্রত্যেক জেলে পাচ্ছেন ২৫ কেজি করে চাল।

তথ্যমতে, বাকেরগঞ্জের ৩ নম্বর দাড়িয়াল ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য কাওছার আহমেদ ফিরোজ কোনো দিনও জেলে ছিলেন না। ইউনিয়নের উত্তর কাজলাকাঠি গ্রামের আওয়ামী লীগ সমর্থিত পরিবারের সদস্য হওয়ায় তিনি কার্ড পেয়েছেন। হয়েছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র জেলে সমিতির নেতাও। কার্ড পেয়েছেন এই ইউনিয়নের চরবিশারীকাঠি গ্রামের ভ্যানচালক আবদুর রহমান। তিনি ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের কর্মী হওয়ায় কার্ড পেয়েছেন রহমান। বাকেরগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর দুর্গাপাশা ইউনিয়নের বিশারীকাঠি গ্রামের খোকন খা কোনো দিনও নদীতে জাল ফেলেননি। তিনি কার্ডধারীর সব সুবিধা ভোগ করছেন।

মুলাদী উপজেলায়ও একই অবস্থা। উপজেলার কাজীর চর ইউনিয়নের চরকমিশনার গ্রামের ইদ্রিস ফরাজি তো দূরের কথা তার বংশেরও কেউ জেলে ছিলেন না। তিনি কাজীর চর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মন্টু বিশ্বাসের ফুটফরমায়েশ খাটতেন। একই উপজেলার কাঞ্চন হাওলাদারের ছেলে সোহেল গ্রামে বালুর ব্যবসা করেন। তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে জেলেদের তালিকায় স্থান করে নেন। মুলাদী উপজেলার সাত ইউনিয়নে এরকম আরও অসংখ্য ভুয়া নামের খোঁজ পাওয়া গেছে।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আলামিবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা হোটেল শ্রমিক রমজান আলী। তিনি দীর্ঘদিন হোটেল কর্মীর কাজ করলেও তার রয়েছে জেলেদের কার্ড। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আ.লীগ সরকারের আমলে কার্ডটি বাগিয়ে নেন তিনি।

হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের কেরামত আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি হলেও তার রয়েছে জেলেদের কার্ড। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যরা তাদের ক্ষমতার বলয়ের পাশাপাশি ভোট ব্যাংক ঠিক রাখতে কেরামত আলীর মতো আরও বহু মানুষকে এই কার্ড দিয়েছেন। একই দৃশ্য জেলার বাবুগঞ্জ, উজিরপুর, বানারীপাড়া, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া উপজেলায়ও। ফলে প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারিভাবে দেওয়া সুবিধা থেকে। সরকারি তালিকার বাইরে থাকা বরিশাল সদর উপজেলার জেলে মজিবর হাওলাদার বলেন, অতীতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে পারেননি বলে জেলে তালিকায় তার নাম ওঠেনি। এ কারণে নিষেধজ্ঞার সময় সরকার থেকে দেওয়া সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন তিনি। তাই নিষেধাজ্ঞার সময় চরম অর্থ সংকটে দিন কাটে বলে জানান মজিবর।

বাকেরগঞ্জের সাবেক ইউপি সদস্য অমৎস্যজীবী কাওছার আহমেদ ফিরোজ জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। ২০১১ সালে তার জেলে কার্ড তৎকালীন জনপ্রতিনিধি বাতিল করে দিয়েছেন। তিনি আগে মাছ ধরতেন, এখন ধরেন না। জেলে না হয়েও কিভাবে জেলে নেতা হলেন? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি। এছাড়া অন্যান্য অমৎস্যজীবীর অধিকাংশ নিজেদের জেলে বলে দাবি করেছেন। অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এই বিষয়ে বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, অমৎস্যজীবীদের তালিকা থেকে বাদ দিতে হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মৎস্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যানুযায়ী প্রত্যেক এলাকায় তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। আমরা অমৎস্যজীবীদের বাদ দিয়ে তালিকায় প্রকৃত জেলেদের অন্তর্ভুক্ত করছি। এই কার্যক্রম প্রতিদিনই চলছে।

মা ইলিশ রক্ষায় নদী-সাগরে শিকার বন্ধে ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা।