Image description

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রাজনীতি জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রিক। আশি ও নব্বইয়ের দশকে জামায়াত এলাকায় সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তুললেও জনমানসে বিএনপির জনপ্রিয়তা দীর্ঘদিনের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ দুই দলের প্রভাবই জেলার রাজনৈতিক চিত্র গঠন করেছে।

২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একটি নতুন রাজনৈতিক আবহ গড়ে উঠেছে, যেখানে একদিকে অন্য দলগুলোর কার্যকলাপ প্রায় শিথিল, অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতই মাঠ দখল করতে তৎপর।
বর্তমানে জেলার তিনটি আসনে অন্তত ২৪ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয়, যাঁরা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বিএনপি এখনো দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত না করলেও জামায়াত আরো আগেই দলের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী সক্রিয় থাকলেও জামায়াতের নির্ধারিত প্রার্থী মাঠে কাজ করছেন। তবে গণঅধিকার পরিষদসহ বেশ কয়েকটি দলের প্রার্থী ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনে  প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে নামতে পারেন।

এদিকে প্রকাশ্যে জামায়াতের কোনো গ্রুপিং চোখে না পড়লেও প্রতিটি আসনেই বিএনপির স্থানীয়, জেলা ও কেন্দ্রভিত্তিক গ্রুপিং রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) : একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনে বিএনপির মনোনয়নের জন্য এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন চারজন।

এই আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইছেন পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়া। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় আরো রয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত, বেলাল-ই-বাকী ইদ্রিশী এবং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাদিকুর রহমান।

এ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন ড. কেরামত আলী, যিনি রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য এবং শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের দুইবারের চেয়ারম্যান।

বিএনপি নেতা অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক জীবনে দল-মত-নির্বিশেষে সবার সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। শিবগঞ্জ বিএনপির দুর্গ। মনোনয়ন পেলে এ আসনে অতীতের মতো আমি আবারও জয়ী হব বলে আশাবাদী।’

জামায়াতের প্রার্থী ড. কেরামত আলী বলেন, ‘জামায়াতের সব শ্রেণির নেতাকর্মী এবং নারী কর্মীরাও মাঠে রাত-দিন কাজ করছেন।
আমার দল এখানে জয়লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।’

মাঠের দখল নিতে তৎপর দুই দল

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট) : তিনটি উপজেলা, দুটি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির ১২ জন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সহসম্পাদক এবং সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত নারী আসন) ও সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতা হারুনুর রশীদের স্ত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মাসউদা আফরোজ হক শুচি, ভোলাহাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুস সোবহান, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম তুহিন, উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সেন্টু, রহনপুর পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মেয়র তারিক আহম্মদ, সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা আসাদুল্লাহ আহমদ, রহনপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক এনায়েত করিম তকি, ড. সাহাফুজ আলম অপু, সাবেক ছাত্রদল নেতা প্রকৌশলী ইমদাদুল হক মাসুদ এবং মরহুম সৈয়দ মঞ্জুর হোসেনের ভাতিজা আতাউর রহমান মিলন।

এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ড. মু. মিজানুর রহমান।

সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া বলেন, ‘দলের জন্য আজীবন কাজ করেছি। আশা করি, বিএনপি আমাকেই মনোনয়ন দেবে এবং আমি জয়লাভ করব।’

জামায়াতের প্রার্থী ড. মু. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিগত দিনের তুলনায় জামায়াতের এখন জনপ্রিয়তা বেড়েছে। অবাধ, সুষুম ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে দাঁড়িপাল্লার বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) : সদর আসনে বিএনপির হয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী পাঁচজন। এর মধ্যে রয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, চারবারের এমপি, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. হারুনুর রশীদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম (চাইনিজ), ব্যবসায়ী নেতা ও চেম্বার সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ এবং সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ওবায়েদ পাঠান।

এই আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল।

বিএনপির নেতা গোলাম জাকারিয়া বলেন, ‘আমি জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ওই সময় থেকে দলকে সুসংহত করছি। দলের দুর্দিনে হাল ধরে রেখেছি। দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মীই আমার পক্ষে আছেন। তাই দলের প্রার্থী হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘হাসিনা সরকারের পতনের পর মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছে। দেশের জনগণ ৫৪ বছর অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখেছে। তারা এবার জামায়াতকে ঘিরেই নতুন স্বপ্ন দেখতে চায়।’