
ঘটনা এক থানায়, মামলা হয়েছে আরেক থানায়। আবার এক ঘটনায় মামলা হয়েছে একাধিক। সবই গত বছরের ৫ আগস্টের পর। অনুসন্ধানে অন্তত ৬৬ ঘটনায় একাধিক মামলা হওয়ার তথ্য মিলেছে।
ভোলার নির্মাণশ্রমিক রিয়াজ (৩৫) গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় ঢাকার আমলি আদালতে একটি মামলা হয়। পরে যাত্রাবাড়ী থানায় ২২ জুলাই আরেকটি মামলা হয়। এ ঘটনায় তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন রিয়াজের স্ত্রী ফারজানা। সে মামলার নকল কাগজপত্র তুলে জাহিদুল নামে এক ব্যক্তি ভাটারা থানায় আরেকটি মামলা করেন। এ মামলায় আসামি করা হয় ইসমাঈল হোসেন প্রধানিয়াকে। একই ঘটনায় আরও একটি মামলা হয় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায়। সেখানেও রিয়াজের পরিচয় ব্যবহার করা হয়। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের মনিটরিং সেল সূত্র বলছেন, রিয়াজ হত্যার প্রকৃত মামলা তদন্ত করছে যাত্রাবাড়ী থানা।
জানা যায়, জাহিদুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় পাঁচটি প্রতারণা মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। জাহিদুল প্রশ্নফাঁস মামলায় আলোচিত ড্রাইভার আবেদ আলীর সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, মিরপুর-১০ চত্বরে পুলিশবক্সের সামনে সিফাত হোসেন নামে যুবক নিহতের ঘটনায় গত বছরের ২৫ আগস্ট মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা হয়। অন্তত ৮০ জনের নামে মামলাটি করেন ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার লোকমান নামে এক ব্যক্তি। সিফাতের দুলাভাই মাকসুদ আলম এ প্রতিবেদককে জানান, তাঁর শ্যালকের লাশ নিয়ে মিরপুরে মিথ্যা মামলা করেন লোকমান। যারা লাশ দাফনে সহায়তা করেছিলেন তাদেরই আসামি করে হয়রানি করেন লোকমান। তিনি আসামিদের কাছে চাঁদাও দাবি করেন। বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তরের নজরে এলে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে চলতি বছরের ১৩ আগস্ট পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানায় আরেকটি মামলা করেন সিফাতের মা আকলিমা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে শাকিল হাসান মানিক নামে যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট তার বাবা মোকলেছার রহমান মামলা করেন। তার বাড়ি বগুড়ার গাবতলীতে। ওই মামলার ৪৮ নম্বরে মালু নামে ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। তাকে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। তার বাড়ি ডেমরার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে। অথচ আওয়ামী লীগের ওই ওয়ার্ডের কমিটিতে মালুর নাম পাওয়া যায়নি। যেখানে ৩৭ সদস্যের ওই কমিটির কেউ আসামির তালিকায় নেই। অথচ মালু আওয়ামী লীগের আমলে ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে করা চারটি মামলার আসামি ছিলেন। মালু জানান, স্থানীয় কিছু লোকজনের যোগসাজশে ওইসব মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা চার্জশিটে তাঁর নাম দিয়েছিলেন।
আরও যেসব ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে : গত বছরের ৪ আগস্ট সানি আহমদ নিহতের ঘটনায় ২৭ আগস্ট গোপালগঞ্জ মডেল থানায় মামলা হয় এবং ১১ সেপ্টেম্বর একই থানায় আরও একটি মামলা হয়। গত বছরের ১৯ জুলাই নরসিংদীর শিবপুরে আমজাদ হোসেন নিহতের ঘটনায় ৮ সেপ্টেম্বর এবং ১১ অক্টোবর শিবপুর মডেল থানায় দুটি মামলা হয়। এ ছাড়া গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে জিহাদ হাসান, ২০ জুলাই মিরপুরের প্রশিকা মোড়ে শামিম হাওলাদার, ৫ আগস্ট উত্তরার আজমপুরে আলমগীর হোসেন, ১৯ জুলাই ময়মনসিংহে রিদওয়ান হোসেন এবং প্রগতি সরণিতে শেখ রাকিব, ২০ জুলাই ময়মনসিংহে জুবায়ের আহমেদ, ৫ আগস্ট গুলিস্তানে রমজান মিয়া জীবন, ২০ জুলাই ময়মনসিংহে নূরে আলম রাকিব এবং বিপ্লব হাসান, একই দিন সাভারে তুহিন আহমেদ, ১৯ জুলাই একই স্থানে আল আমীন এবং ১৮ জুলাই চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে হৃদয়চন্দ্র তরুয়া নিহতের ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে। একই থানায় কিংবা ভিন্ন থানায় একাধিক মামলার হওয়ার সংখ্যা এ পর্যন্ত অন্তত ৬৬টি পাওয়া গেছে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি বাহারুল আলম জানান, ৫ আগস্টের পর অনেক ভুয়া মামলা হয়েছে। একাধিক মামলাও হয়েছে। সেগুলো যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘একটি ফৌজদারি ঘটনায় একাধিক মামলা হতে পারে না। ভুয়া মামলা দ্রুত বাতিল করে প্রকৃত মামলার তদন্ত হওয়া উচিত।’