
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী ভোটার টানতে ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি। তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের সংগঠিত করতে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় গঠিত নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের দুই শীর্ষ নেত্রীকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটি সারা দেশে দলীয় সাবেক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর, সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী সদস্যদের পাশাপাশি নারী ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রথমে জেলাভিত্তিক মতবিনিময় করবে। এরপর সাবেক নারী জনপ্রতিনিধিরা আসনভিত্তিক এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়বেন। এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধি, রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে নানা যুগান্তকারী পদক্ষেপ ‘ডোর টু ডোর’ গিয়ে নারীদের কাছে তুলে ধরা হবে। এ কাজে সহায়তা করবেন স্থানীয় নারী নেতাকর্মীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৬ কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার ৭৬০ জন, যা মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে জানান, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকারের সময় নারী উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ সফল হয়েছিল। আগের সফল উদ্যোগগুলোর সঙ্গে এবার যোগ হবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভাবনা। জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নারীর ক্ষমতায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নিয়ে ‘ডোর টু ডোর’ যাবেন নারী নেতাকর্মীরা। দেশে নারীর মর্যাদা, সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নে যথাযথ পদক্ষেপের কথাও বিএনপির ৩১ দফায় উল্লেখ আছে। যা ক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারীর ক্ষমতায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। নারী ও শিশুদের জীবনমান বিকাশের জন্য যুগোপযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্যসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণের কথাও রয়েছে। এছাড়াও নারীদের কর্মসংস্থানসহ নানা বিষয়ে বিশাল পরিকল্পনা নির্বাচনের ইশতেহারেও থাকবে।
সূত্রমতে, সম্প্রতি এ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভাচুর্য়ালি নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের শীর্ষ দুই নেতা জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে সংগঠনটির শীর্ষ এই দুই নেত্রীকে এই দায়িত্ব দেন। পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরকে সারা দেশে নির্বাচিত সাবেক ও বর্তমান নারী জনপ্রতিনিধির নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে বলা হয়। কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের মাধ্যমে সেই তালিকা সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেত্রীর কাছে দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগ দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হবে। বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা জেলা ও মহানগর জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে খুলনায় ১৪ অক্টোবর মতবিনিময় করবেন। এরপর যশোর মাগুরা, নড়াইল ও ঝিনাইদহের জনপ্রতিধিদের নিয়ে ১৫ অক্টোবর যশোরে এবং কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চূয়াডাঙ্গা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কুষ্টিয়ায় ১৬ অক্টোবর মতবিনিময় সভা হবে। পর্যায়ক্রমে একসঙ্গে দু-তিনটি জেলার জনপ্রতিনিধিদের একসঙ্গে নিয়ে মতবিনিময় সভা হবে। এই মতবিনিময়ের পর সাবেক ও বর্তমান নারী জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় ছড়িয়ে পড়বেন। স্থানীয় নারী নেত্রীদের সঙ্গে সমন্বয় করে টিম গঠনের মাধ্যমে ধানের শীষের পক্ষে প্রচার চালাবেন। এর মাধ্যমে প্রতিটি নারী ভোটারের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বিএনপি নেতারা জানান, বিএনপি সরকারে থাকার সময় খালেদা জিয়া নারী শিক্ষা ও উন্নয়নের জন্য নানা যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার শাসনামলে মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে পড়াশোনা ও উপবৃত্তি চালু, নারীনির্যাতন প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন এবং মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ছিল তার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রতিফলন। বিএনপি সরকারের সময়ই নারীদের নিয়ে অনেক ভালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে পারলে নারীদের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক সেলিমা রহমান যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাবেক নারী জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা সভা করব। সেখানে কিছু দিকনির্দেশনা বা পরামর্শ দেওয়া হবে, যা তারা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করবেন।
সংগঠনটির সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সচেতনতার জায়গা থেকে সাবেক সব নারী জনপ্রতিনিধি যেন মাঠপর্যায়ে কাজ করেন-সেজন্য আমরা তাদের নিয়ে মতবিনিময় করব। নির্বাচনি গণসংযোগে তারা বিএনপির আদর্শ, নারীদের প্রতি দলের ভূমিকা, আগামী দিনে নারীদের নিয়ে দলের ভাবনা, নারীর ক্ষমতায়ন-সব বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করবে। এজন্য বিভাগীয় পর্যায়ের জেলাগুলোকে ভাগ করে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হবে।
২০১৯ সালের আগস্টে দেশের নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ গঠন করে বিএনপি। কমিটিতে চিকিৎসক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, ব্যবসায়ী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গঠনের পর থেকে সংগঠনটিকে সারা দেশে নারী ও শিশুদের অধিকার নিয়ে সরব থাকতে দেখা গেছে।