
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকালে দেশের ৪১টি জেলায় ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকা- ঘটেছে। ৫০টির বেশি জেলায় পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি ব্যবহার করেছে প্রাণঘাতি অস্ত্র। সাক্ষ্যে এমন তথ্য দিয়েছেন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো: আলমগীর হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দেন মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা মো: আলমগীর। ট্রাইব্যুনাল তার সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন আলমগীর। তিনি এ মামলার ৫৪ তম সাক্ষী। সাক্ষ্যের এক পর্যায়ে বলেন, গত বছর জুলাই-আগস্টে অভ্যুত্থান চলাকালে ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্পটে হতাকা- সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫০টিরও বেশি জেলা প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এ সময় ট্রাইব্যুনাল জানতে চান, জুলাই হত্যাকা- বা নৃশংসতা চললো, এসব বন্ধে আসামিরা কোনো পদক্ষপে নিয়েছিলেন কি না ? আপনি তদন্তে কী পেয়েছেন ?
জবাবে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা মো: আলমগীর বলেন, না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকা-ে নৃশংতা বন্ধ করার জন্য আসামিরা কোনো পদক্ষেপ নেননি। একই সঙ্গে যারা হত্যা-গুম-জখম করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মূলত: জুলাই আন্দোলনসহ গত ১৫ বছরে খুন-গুম, নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
ট্রাইব্যুনালে গতকাল প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও গাজী এম.এইচ. তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।
এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন মো: আলমগীর। সাক্ষ্যে তিনি বহু অজানা তথ্য তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তার জব্দকৃত জুলাই হত্যাকা-ের নৃশংসতা নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদন প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া গতবছর ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়িতে পুলিশের হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। এমনকি জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানকালে ছাত্র-জনতার ওপর ৩ লাখ ৫ হাজার গুলি ছোড়া হয়েছে বলে জানান।
এদিকে গতকাল ৫৪তম সাক্ষী হিসেবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দী সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে। এদিন বিবিসি, আল-জাজিরা, ও একটি পত্রিকার মাল্টিমিডিয়ায় প্রচারিত প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনের মতো সাক্ষ্য দেন এই তদন্ত কর্মকর্তা। ওইদিন তিনি তার জব্দকৃত ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে দেখানো হয়। এসব ভিডিওতে জুলাই-আগস্টের নির্মমতা ফুটে ওঠে। পরে এই সাক্ষীকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো: আমির হোসেন।