
দেশে গ্যাসের মজুত ধীরে ধীরে কমে আসছে। ফলে উৎপাদনও কমতির দিকে। চাহিদা মেটাতে আমদানি বাড়ছে এলএনজির। বিদ্যুৎ, সার উৎপাদন, শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক ও বাসাবাড়িসহ সব জায়গাতেই গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। নতুন কূপ খননের মাধ্যমে উৎপাদন ৮২ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। এখন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে বড় পরিসরে উৎপাদন বৃদ্ধির পথ খুঁজতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে এ সংক্রান্ত কাজগুলো চলমান রাখা কঠিন হবে। এ পরিস্থিতিতে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞ মতামত এবং নানা সমীক্ষা বলছে, দেশে গ্যাসের মজুত এখন ৮ থেকে ৯ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট)। গ্যাসের নতুন মজুত আবিষ্কার করে উৎপাদন সক্ষমতা না বাড়ানো গেলে এই মজুত আগামী ১০-১১ বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে উৎপাদন ২৭০০ থেকে ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আমদানিকৃত এলএনজিসহ এই হিসাব বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। গ্যাস সংকট সমাধানে ২টি এলএনজি টার্মিনাল করার প্রক্রিয়া চলমান। এটি হলে আরও ১২শ মিলিয়ন এলএনজি সরবরাহ করা যাবে।
সূত্র জানায়, পেট্রোবাংলা অনেক দিন থেকেই বড় গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন বড় ফিল্ড শনাক্ত হয়নি। ছোট আকারে বেশ কিছু কূপ পাওয়া গেছে। এগুলোতে কিছু গ্যাস মিলেছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় খুব বেশি নয়। তাদের মতে বর্তমানে প্রয়োজন বড় গ্যাস ফিল্ড। যেখান থেকে চাহিদার বড় অংশের জোগান আসবে। কিন্তু সে ধরনের গ্যাস ফিল্ডের সন্ধান না মেলায় গ্যাসের উৎপাদ বৃদ্ধিতে চ্যালেঞ্জ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশ অ্যান্ড মাইন্স) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, গ্যাস উত্তোলন করায় এর রিজার্ভ কমে, এটাই স্বাভাবিক। ৫০ কূপ এবং ১০০ কূপ খননের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মাটির নিচে কি আছে তা আমরা কেউ বলতে পারি না। খনন করার পরই প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। দেশের দুটি বড় গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি বিবিয়ানা ও তিতাস গ্যাস কূপ থেকে উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ১৩০১.১ মিলিয়ন ঘনফুট এবং ৪৪৩.৯ ঘনফুট। ২০২২ এর ০৯ জানুয়ারি এই উৎপাদন বিবিয়ানায় ১১৬১.৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং তিতাসে ৪০৭.২ ঘনফুট। ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি গ্যাসের উৎপাদন বিবিয়ানায় ১০১৮.১ মিলিয়ন ঘনফুট এবং তিতাসে ৩৬৯.৯ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বিবিয়ানায় গ্যাসের উৎপাদন ৮৮৭.২ মিলিয়ন ঘনফুট এবং তিতাসে ২৯০.৪ ঘনফুট। গ্যাসের উৎপাদন দিনে দিনে কমছে সেটি এখানে প্রতীয়মান।
বর্তমানে এলএনজি আমদানির মাধ্যমে গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। তবে ২০২২ সালেই পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পেট্রোবাংলার সূত্র বলছে গ্যাস সংকট কাটাতে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান, সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য ৫০ এবং ১০০টি কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৫০টি কূপের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য মোট উৎপাদন ধরা হয়েছে ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ১৯টি কূপের সফল সংস্কার ও উন্নয়ন শেষে ৮২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছে। এগুলো হলো, টবগী-১, ইলিশা-১, ভোলা নর্থ-২, শরীয়তপুর-১, শ্রীকাইল নর্থ-১, সুন্দলপুর-৩, বেগমগঞ্জ-৪, জামালপুর-১, তিতাস-৮, তিতাস-১৪, তিতাস-১৬, তিতাস-২৪, বিয়ানীবাজার-১, কৈশালটিলা-২, রশিদপুর-২, রশিদপুর-৫, সিলেট-৭, সিলেট-১০, কৈলাশটিলা-৮।
অন্যদিকে ৩১টি ওয়ার্কওভার কূপের সম্ভাব্য গ্যাস সমন্বয় ধরা হয়েছে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তার মধ্যে কৈলাশটিলা-৭ এর কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে অনুসন্ধান ও উন্নয়ন আরও ৬৯টি কূপের তালিকা করা হয়েছে। জানা গেছে, ২০২৬ সালে এসব কূপ খননের কাজ শুরু হবে।