Image description
নির্বাচনমুখী দলগুলো

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফ্যাসিস্টবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদলগুলোকে ৫০ আসন ছাড়ার প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। শর্ত সাপেক্ষে ঐকমত্যের ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে ২০-২৫টির বেশি হবে না। তবে সব প্রার্থীরই এলাকায় জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা  থাকতে হবে।

ইতোমধ্যেই যোগ্য ও পরিচ্ছন্ন  প্রার্থী চূড়ান্ত করতে কাজ শুরু হয়েছে বিএনপিতে। আগামী মাসের মধ্যেই দল ও জোটের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে চায় দলটি। প্রার্থী চূড়ান্ত করার দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যত দ্রুত সম্ভব তালিকা প্রকাশ করে প্রচারণায় মাঠে নামতে চায় দেশের এই সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলটি। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, এবার জোটবদ্ধ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবে না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে যারা জাতীয় নির্বাচনে আসন ছাড়ের সহযোগিতা চাচ্ছে তাদের প্রায় সবাইকেই আসন ছাড়ের আওতাভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তবে আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এখন পর্যন্ত জোটের সম্ভাবনা নেই বিএনপির। বরং পিআর পদ্ধতির দাবি নিয়ে জামায়াত পানি ঘোলা করার মাধ্যমে বিএনপিকে ঠেকানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে ধারণা দলটির নীতিনির্ধারকদের। এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বীক্রম। তিনি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে কমপক্ষে ৭০ ভাগ আসনে একক প্রার্থী দিতে চায় তাঁর দল। এরই মধ্যে অর্ধেক আসনে প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পেয়েছে ত্যাগ, অভিজ্ঞতা, জনপ্রিয়তা ও ক্লিন ইমেজ। শিগগিরই এই তালিকা প্রকাশ করে মাঠে নামবে বিএনপি। আর জনপ্রিয়তা বিবেচনায় যুগপৎ আন্দোলনে মিত্রদলগুলোর জন্য ৫০টি আসন ছাড়তে প্রস্তুত দলটি।

জামায়াতকে এখনো শত্রু না ভাবলেও দলটির কিছু নেতার বক্তব্য বিব্রতকর উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, পিআরের দাবি বিএনপিকে ঠেকানোর কৌশল। আগামী নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এনসিপি ও গণঅধিকার দুটি দলের একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ার শুভকামনা করে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, নির্বাচনের মাঠে তাদের বিষয়ে বিএনপির কোনো ভাবনা নেই। জানা গেছে, তরুণ ছাত্রনেতাদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিএনপির সঙ্গে কৌশলগত ঐক্য করতে চাইলে তাদেরও শেষ পর্যন্ত এই আসন ছাড়ের আওতাভুক্ত করতে পারে বিএনপি। এ নিয়ে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে। তা ছাড়া সারা দেশে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা তৈরির চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জানা যায়, বিলুপ্ত ২০-দলীয় জোটের বেশির ভাগ শরিক দল তথা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এর আগে দফায় দফায় আলোচনা করেছে বিএনপি। নির্বাচনি আসন বণ্টন নিয়েও তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, এলডিপি, ১২-দলীয় জোট, সমমনা জোট, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিজেপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, বিভিন্ন ইসলামি, বামপন্থি দলসহ সর্বস্তরের দলের নেতার সঙ্গে বিএনপির একাধিকবার আলোচনা হয়। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনের আগে নতুন জোট হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছে সেই দলগুলোর সঙ্গে একটা সমঝোতা হতেই পারে। তা ছাড়া ডান ও বামপন্থি অন্য দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট হতে পারে। এটা সময়মতোই পরিষ্কার হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী  ফেব্রুয়ারির মধ্যে যে কানো মূল্যে সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি। এজন্য অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নেই। নির্বাচনের আগে জোট গঠন হবে, না আসন সমঝোতা হবে- তা সময়ই বলে দেবে। তবে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলনে যাঁরা যুগপৎভাবে অংশ নিয়েছেন, জনগণের রায় পেলে নির্বাচনের পর তাঁদের সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’