
রাজধানীর মতিঝিল, কমলাপুর ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এছাড়াও রয়েছে দেশের নামিদামী সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। রয়েছে বেশকিছু ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়। এই কমলাপুর টিটিপাড়া এলাকায় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আন্ডারপাস নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। টিটিপাড়া-কমলাপুর সড়কটিতে আন্ডারপাস নির্মাণের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন সময় অতিক্রম হলেও চালু হয়নি সড়কটি। তাই প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। তবে আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, আন্ডারপাসটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। নির্মাণ কাজ শেষ হলেই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। এতে কমবে মানুষের ভোগান্তি।
এতোদিনে সড়কটিতে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানা গেলেও এখনো শেষ পর্যায়ের কাজ রয়েছে অসমাপ্ত। তবে প্রতিদিনই নিয়মিত চলছে উন্নয়ন কাজ। কমলাপুর টিটিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্টেডিয়ামের সামনের সড়ক থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনের দিকের সড়কে নির্মাণাধীন আন্ডারপাস এলাকায় শ্রমিকরা পুরোদমে কাজ করছেন। আন্ডারপাসের নিচের অংশের সড়কের মিডিয়ানে লাগানো হয়েছে নানা ধরনের ফুলের গাছ। সড়কটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন শ্রমিকরা। উপরের অংশে ভেহেকোর সাহায্যে ও শ্রমিকরা নিজেরা কাজ করছেন। এসময় তারা জানিয়েছেন, এই আন্ডারপাসটির গুরুত্বপূর্ণ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। এখন চলছে শেষ সময়ের কাজ। এই কাজগুলো শেষ হলেই খুলে দেয়া হতে পারে আন্ডারপাসটি। আন্ডরপাসটি খুলে দিলে এই সড়কে চলাচলকারী যানবাহন সহজেই গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবে।
জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় কমলাপুরের টিটিপাড়ায় আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের নভেম্বরে। চায়না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই আন্ডারপাসটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়কপথের রেলক্রসিং যানজটের ভোগান্তি দূর করতে রাজধানীর টিটিপাড়া-কমলাপুর সড়কে নির্মাণ করা হচ্ছে এই আন্ডাপাসটি। এই নির্মাণ হলে নির্বিঘেœ ট্রেন চলাচল করবে এই রেলপথ দিয়ে। সড়কপথের যানবাহন চলতে যাতে সমস্যা না হয় এজন্য মূল সড়ক থেকে ১১ মিটার নিচ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে আন্ডারপাসটি। আন্ডারপাসে যান চলাচলের জন্য রয়েছে পৃথক সড়ক। পথচারী পারাপারের জন্য রয়েছে ফুটপাথ। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের অর্থায়নে আধুনিক এই আন্ডারপাসটি নির্মাণ করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই আন্ডারপাসটি নির্মাণ করা হচ্ছে। টিটিপাড়া রেলক্রসিং দিয়ে ঘন ঘন ট্রেন চলাচল করায় প্রায় সময় যানবাহন বন্ধ রাখতে হয়। ফলে ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে টিটিপাড়ায় রেল ক্রসিংয়ের পরিবর্তে আন্ডারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় টিটিপাড়ায় আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য টিটিপাড়া-কমলাপুরগামী সড়ক বন্ধ করা হয়। সেসময় টিটিপাড়া-কমলাপুরগামী সড়কে চলাচলকারীদের বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়। কমলাপুর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এই সড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন রাজধানীর কমলাপুর, মতিঝিল, রাজারবাগ, মালিবাগ ও মৌচাকসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষ চলাচল করে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও বিআরটিসি বাস ডিপোর সাধারণ যাত্রী ও আন্তর্জাতিক যানবাহনের যাত্রীদের যাতায়াত ব্যাহত হয় এই সড়কটি বন্ধ থাকার কারণে। এছাড়া মতিঝিল এলাকায় রয়েছে নামিদামি বেশকয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা এই সড়ক দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে। আন্ডারপাস নির্মাণকাজের কারণে বিশ্ব রোডের যানজটে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন সড়কটি বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ হচ্ছে বলে জানান কমলাপুর ও টিকাটুলীর স্থানীয়রা।
এই সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী মতিঝিলের চাকরিজীবী কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, টিটিপাড়ার এই সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগে সায়েদাবাদ-কমলাপুর-মালিবাগ-মহাখালী হয়ে গাজীপুরের বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস নিয়মিত চলাচল করতো। এছাড়াও অন্যান্য এলাকার গাড়িও চলাচল করতো। কিন্তু সড়কটি বন্ধ থকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। তাই আন্ডারপাসটি দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানান তারা।
তারা আরো বলছেন, রাজধানীর মতিঝিল হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ব্যাংকপাড়াও বলা হয়ে থাকে। প্রায় দেড় থেকে দুই ডজন রুটের বাস মতিঝিল হয়ে চলাচল করছে। তাই আন্ডারপাসটি দ্রুত খুলে দেয়া প্রয়োজন।
মুগদা এলাকার বাসিন্দা আনিসুজ্জামান খান বলেন, সড়কটিতে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে অনেক দিন ধরে। আমার বাসা থেকে বের হলেই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অফিসে যেতে অন্য সড়ক ব্যবহার করতে হয়। এতে সময় বেশি ব্যয় হচ্ছে। রিকশা ভাড়া বেশি লাগছে। এছাড়াও রাজধানীর মুগদা, মানিকনগর, বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকাবাসী কমলাপুর, মতিঝিল আসার জন্য টিটিপাড়া মোড় হয়ে আসা সড়কটি ব্যবহার করেন। সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এলাকাবাসীকে খিলগাঁও অথবা টিকাটুলী হয়ে যাতায়াত করতে হয়।
রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর রেল লাইন প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি রেলপথ নির্মাণ হয়েছে। ইতোমধ্যে টিটিপাড়া আন্ডারপাস নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সড়কে প্রচন্ড যানজট তৈরি হতে পারে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে টিটিপাড়া লেভেল ক্রসিংয়ে একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। আন্ডারপাস সড়কে যানবাহন চলাচলের জন্য পৃথক লেন থাকবে। টিটিপাড়া-কমলাপুর সড়কের আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য সড়কটি বন্ধ রাখা হয়েছে। কাজ শেষ হলে সড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।