Image description
নেতৃত্বে সম্ভাবনাময়ী যারা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভরাডুবির পর নেতৃত্বে পরিবর্তনের গুঞ্জন উঠেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে। সেক্ষেত্রে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এবং এক নম্বর ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার কমিটিতে আসতে পারে নতুন নেতৃত্ব। তবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে কমিটি ভাঙা নিয়ে সংশয়ও বিরাজ করছে পদপ্রত্যাশীদের মাঝে।

তারা আরও জানান, ছাত্র সংগঠন হিসেবে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়েও ক্যাম্পাসগুলোতে সংগঠন প্রত্যাশা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছে যেতে পারেনি। অথচ ছাত্রশিবির এই জায়গাটায় অনেকটাই সফল। তাছাড়া, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর, জেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠনে ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগের কারণেও বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের নেতাকর্মী অনেকের মাঝে অসন্তোষ দেখা গেছে। আরও নানা কারণে সংগঠনটি স্থিতিশীলতা ও স্বকীয়তা হারাতে বসেছে। যার কারণে, সংগঠনের গতিশীলতা ফেরাতে নতুন নেতৃত্বের কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সামনে জাতীয় নির্বাচনের কারণে এ ভাবনার প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদলের ডাকসু ও জাকসুকেন্দ্রিক বিপর্যয় এবং সার্বিক বিষয়ে আপডেট ও জবাবদিহিতা নিতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সম্প্রতি তারেক রহমান সংশ্লিষ্টদের নিয়ে স্কাইপিতে একাধিক ভার্চুয়াল সভা ডেকেছেন। তাছাড়া বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায়ও এ নিয়ে হয়েছে আলোচনা। 

এরই মধ্যে গতকাল বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা মতবিনিময় সভা করেছেন বলে জানা গেছে। এতে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন পরবর্তীতে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা, কমিটিহীন শাখাগুলোতে কমিটি দেওয়া, ২০টি জেলা কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হয়। তাছাড়া, এ সভায় বিএনপি নেতারা ছাত্রদলের নেতাদেরকে কেন্দ্র ও ঢাবির নতুন কমিটি নিয়ে চিন্তা না করার নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে।

তারপরও ছাত্রদলের কেন্দ্র ও ঢাবি শাখার পদপ্রত্যাশী নেতারাও সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। এছাড়া, তাদের অনেকেই নিজেদের সিভি বা বায়োডাটা ও পোর্টফোলিও প্রস্তুতের কাজও সম্পন্ন করে ফেলেছেন এবং সেগুলোর মাধ্যমে নিজেদের কর্মযজ্ঞ সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে ধরে নিজেদের যোগ্য প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ মর্যাদার এক নেতা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব দেওয়ার পরিকল্পনার গুঞ্জন আমরা শুনতে পাচ্ছি। যেকোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, ছাত্রদল ঘিরে নানা আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। যার কারণে, বর্তমান কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটি নিয়ে দলে অসন্তোষ আছে। তবে সিনিয়র নেতারা কী ব্যবস্থা নেবেন, সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নেতৃত্বে পরিবর্তন নিয়ে আপাতত দলে আলোচনা শুরু হয়নি। তবে নানা ত্রুটিবিচ্যুতি এবং বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করে যখন সংশ্লিষ্টদের পরামর্শের ভিত্তিতে পরিবর্তন হবে, তখন তা সবাই জানতে পারবে।

ডাকসু নির্বাচনের পরাজয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদলের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টিকে বিএনপি কীভাবে বিবেচনা করছে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত-ডাকসুতে নির্বাচিতদেরকে দলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত-নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। তৃতীয়ত-এক ভোটেও পরাজয়, এক হাজার ভোটেও পরাজয়। সুতরাং কথা বলার আগে সামগ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে হবে। ডাকসু নির্বাচনে সাবেক ডাকসু ও ছাত্র নেতারা নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার কারণে ক্যাম্পাসে যেতে পারেননি। স্বাভাবিকভাবেই এটাকে একটা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যা কখনো সার্বজনীনতা পেতে পারে না।

কারা আসতে পারে নতুন নেতৃত্বে?
সূত্র জানিয়েছে, এবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদে ২০১০-১১ সেশন থেকে ২০১২-১৩ সেশনের (ঢাবি) নেতারা কমিটির জন্য বিবেচিত হতে পারে। এ হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারহান মো. আরিফুর রহমান আলোচনায় রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ ও তারিকুল ইসলাম তারেক আলোচনায় রয়েছেন। এর বাইরে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস এই সেশনের থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে ডাকসু নির্বাচনের দিন অসদাচরণ করার জন্য বিতর্কিত হয়েছেন।

যদি ২০০৯-১০ সেশন থেকে যদি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হয়, তাহলে বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান এবং ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানকে বিবেচনা করা হতে পারে। কারণ তাদের দুইজনেরই বেশ জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি আছে।

তাছাড়া ২০১১-১২ সেশন থেকে আলোচনায় রয়েছেন নাহিদুজ্জামান শিপন, দ্বীন ইসলাম খান, মো. নাছির উদ্দিন শাওন, তারেক হাসান মামুন, গাজী সাদ্দাম হোসেন, মিনহাজ আহমেদ প্রিন্স, রাজু আহমেদ, সাইদুর রহমান, ইব্রাহিম খলিল, মাহমুদ ইসলাম কাজল, হাসান আবিদুর রেজা বায়েজিদ, শামিম আকতার শুভ, আব্দুল্লাহ আর রিয়াদ প্রমুখ।

২০১২-১৩ সেশন থেকে আলোচনায় রয়েছেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি সৈকত মোর্শেদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম ভূঁইয়া ইমন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে আসতে পারেন যারা
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নম্বর ইউনিট হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এ শাখায় ২০১৩-১৪ সেশন থেকে শুরু করে ২০১৫-১৬ সেশনের নেতাদের মধ্য থেকে নেতৃত্বে আসতে পারে বলে জানা গেছে। ২০১৩-১৪ সেশন থেকে ঢাবি শাখা ছাত্রদলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমাম আল নাসের মিশুক, আল আমিন ও জসিম খান আলোচনায় রয়েছেন।

এছাড়া ২০১৪-১৫ সেশন থেকে আলোচনায় রয়েছেন ঢাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিএম কাওসার। এছাড়া ফেরদৌস আলম, সাইফ খান, আলমগীর হোসেন, আকিব জাবেদ রাফি সাইফ খান, মিনহাজুল ইসলাম নয়ন, বজলুর রহমান বিজয়, নুরুল আমিন নুর এবং আখতারুজ্জামান বাপ্পিও আলোচনায় রয়েছেন।

এর বাইরে, সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় ডাকসুর প্যানেলে থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করা ২০১৫-১৬ সেশনের আবিদুল ইসলাম খান, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে আরিফুল ইসলাম, জিএস পদে হামিম বারী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে মো. মেহেদী হাসান এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচন করা আবু হায়াত মো. জুলফিকার জিসানকে ঢাবি শাখার নেতৃত্বের জন্য বিবেচনা করা হতে পারে বলে জানা গেছে। এছাড়া রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়াজ মোহাম্মদ ইমনের নামও।