Image description
♦ নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ ঘিরে দলের সামনে অর্ধ ডজন ইস্যু ♦ তারেক রহমানের দেশে ফেরা ♦ আসনভিত্তিক প্রার্থী চূড়ান্তকরণ ♦ ইশতেহার প্রণয়ন ♦ দেশব্যাপী গণসংযোগ

চার মাস পরই জাতীয় নির্বাচন। এ পুরো সময়টাই প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচিতে কাটাবে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ ঘিরে অর্ধ ডজনের বেশি ইস্যু নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে দলটি। চার মাসব্যাপী এ কর্মসূচিতে থাকছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা। আসনভিত্তিক দলীয় প্রার্থী চূড়ান্তকরণ। দলীয় ইশতেহার প্রণয়ন। সারা দেশে নির্বাচনমুখী গণসংযোগ, ভোট গ্রহণ তদারকি এবং সঠিক ফলাফল ঘোষণা নিশ্চিত করা। দলের নীতিনির্ধারণী মহল সূত্রগুলো এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কারণে কোনো দলের সঙ্গে সংঘাত, সংঘর্ষ বা পাল্টা কর্মসূচিতে যাবে না বৃহত্তম এ দলটি। তার পরিবর্তে নির্বাচনকেন্দ্রিক চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রার্থী বাছাই, দলীয় ৩১ দফা তুলে ধরে ইতিবাচক কাজের প্রচার, ভোটারের মন জয় করতে বাড়ি বাড়ি যাওয়া, নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি প্রদান ও সময়োপযোগী নির্বাচনি ইশতেহার তৈরিতে মনোনিবেশ করতে চাইছে বিএনপি। নির্বাচনের আগে টানা চার মাস দলটি তাদের কর্মকাণ্ড নির্বাচনকেন্দ্রিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দুই-তিন দিনের মধ্যে লন্ডন যাচ্ছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তিনি লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে তাঁর দেশে ফেরার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাবেন। এরপরই তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। দলীয় নেতারা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মাঠে দলের বিদ্যমান অবস্থায় তারেক রহমান দেশে ফিরলে পরিস্থিতি পুরো পাল্টে যাবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সবশেষ বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অংশ নেন।

জাতীয় স্থায়ী কমিটির এ বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা, জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য না হলে এর প্রতিক্রিয়ায় কী হতে পারে, অথবা সরকারের দিক থেকে অমীমাংসিত সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া হলে এর পরিণতিতে কী হতে পারে- এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি রাজনীতিতে স্থিতিশীলতায় বিশ্বাসী। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাইলে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে কেউ কমর্সূচি দিয়ে দেশ অস্থিতিশীল করলে- তাদের রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, সব জায়গাতেই ঐকমত্য হবে না। কিছু চাওয়া বা দাবি-দাওয়াতেও কোনো অসুবিধা নেই। তবে সেজন্য তাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। স্থায়ী কমিটির অপর এক সদস্য বলেন, বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক কৌশলের বিপরীতে মাঠের কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্যের মাধ্যমে জবাব দেওয়াটাই সমীচীন হবে। বিএনপি মনে করে মাঠপর্যায়ে নির্বাচনি হাওয়া উঠে গেলে বিরোধীদের সব চক্রান্ত এবং অযৌক্তিক দাবি হারিয়ে যাবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জামায়াতসহ কয়েকটি ইসলামি দলের পিআর দাবিতে আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, রাজনৈতিক দলের দাবি নিয়ে আন্দোলন করার অধিকার আছে। তবে আমরা রাস্তায় কে কয়টা জনসভা করলাম, কে কয়টা মিছিল দিলাম তার ওপর কি পিআর নির্ধারিত হবে? সেটার জন্য তো একটা প্রক্রিয়া আছে, আলোচনার টেবিলে আসতে হবে। সে আলোচনার টেবিলে আমরা আছি। সেটা এখনো অব্যাহত আছে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের বিষয়ে বাকি চার মাস সময় কাজে লাগিয়ে বিএনপি পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে চাচ্ছে। এ লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ভোটের হাওয়া তৈরির কথাও বিবেচনায় রয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। নির্বাচনি অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি হিসেবে দ্রুত সময়ের মধ্যে যুগোপযোগী নির্বাচনি ইশতেহার তৈরিরও কাজ শুরু হয়েছে। ইশতেহার তৈরির জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থ-বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ব্যক্তিদের দেওয়া দায়িত্ব তারা ইতোমধ্যেই পালন শুরু করেছেন। দলের নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জনপ্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকারের পাশাপাশি সংস্কার ও বাস্তবমুখী ইশতেহার হবে এবার।

জানা গেছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দেশব্যাপী ৩০০ আসনের বিপরীতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। তারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই শুরু করেছেন। বিভিন্ন উইং থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে আসনভিত্তিক মাঠপর্যায়ের বাস্তব চিত্র। তাদের সবার আমলনামা নিয়ে বসেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তফসিলের আগেই প্রার্থী চূড়ান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। এ জন্য দলের সিদ্ধান্তেও নানা পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নানা হিসাবনিকাশ করেই এবার আসনভিত্তিক একক প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তুতি কার্যক্রম চলছে।

স্থায়ী কমিটির এর আগের বৈঠকে সারা দেশে জাতীয় নির্বাচনের ঢেউ সৃষ্টি এবং মানুষকে নির্বাচনমুখী করে তুলতে মাঠের কর্মসূচি শুরুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষ না হওয়ায় বিএনপি মাঠের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকে।

জামায়াতসহ কয়েকটি দলের কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় কর্মসূচি ঘোষণা করাটা স্ববিরোধিতা। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, এই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে, সেটা দেখতে হবে। এটা কি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে, নাকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে, নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে? এটা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার কোনো কৌশল কি না, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে।