
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতির নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে রাজধানীতে পৃথক পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলনসহ সমমনা দলগুলো। গতকাল দুপুরের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ গেট, পুরানা পল্টন ও প্রেস ক্লাব এলাকায় দফায় দফায় এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সভাপতি নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। বক্তব্য রাখেন- দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ।
আসন্ন নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির দাবি জানিয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পরবর্তী সরকার এসে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে- এটা গণআকাঙ্ক্ষা নয়। জাতীয় নির্বাচনের আগেই সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে দেশ মহাদুর্যোগে পড়ে যাবে। এ সরকারই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে পারে- কারণ এটাই উপযুক্ত সময়। প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি বলেছিলেন যে, বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার করবেন। আপনি রেফারেন্ডাম এর মধ্য দিয়ে এ সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন করুন।
একটি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন- যতই সংস্কার করা হোক ক্ষমতায় গেলে তারা তা মুছে দেবেন। তাদের ইচ্ছার মধ্যে দুরভিসন্ধি আছে। ঐকমত্য কমিশন বলেছে, ১০ বছরের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না, জুডিশিয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় নিয়োগ হবে না। সংস্কার যদি এখন না হয়, এ কাঠামোতে নির্বাচন হলে আরেকটা হাসিনা তৈরি হবে, আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম হবে। আমরা আর ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে দেবো না। ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিষিদ্ধ করতে হবে।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, অনেকে বলছেন আলোচনা করছি আবার আন্দোলন করছি কেন? কারণ আলোচনায় সফলতার মুখ দেখতে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে কোনো চাপের মুখে পড়ে সরকার কোনো শুভঙ্করের ফাঁকির দিকে যাচ্ছে। সংস্কার যদি এখন না করেন, তাহলে আলোচনা কেন এতদিন করলেন? জরিপে দেখা যাচ্ছে ৭০ শতাংশ লোক পিআর’র পক্ষে। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো দূর করার জন্যই এত জীবন দিয়েছে জনগণ। আমরা আলোচনার টেবিলে আশাবাদী পিআর দিতে হবে। গণভোট দিন জনগণ যদি পিআর মানে তাহলে দিতে হবে, আর যদি না মানে তাহলে জামায়াতে ইসলামী তা মেনে নেবো।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, কাগুজে সংস্কারের মূল্য নেই। আইনি ভিত্তি লাগবে। তা নাহলে জনগণ রাজপথে নেমেছে, দাবি আদায় করে রাজপথ ছাড়বে। সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তি না হলে সরকার অবৈধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, পাঁচ দফা গণদাবি পূরণে সরকারকে বাধ্য করা হবে। জনগণ যদি আপনাদের বাসভবন ঘেরাও করে পালানোর পথ পাবেন না।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল পল্টন মোড় হয়ে মৎস্য ভবনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় গুলিস্তান পল্টন মোড় প্রেস ক্লাব হাইকোর্ট এলাকায় তীব্র যাজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, রক্তক্ষয়ী একটি গৌরবময় গণ-অভ্যুত্থানের পরে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা, হত্যাকারীর বিচার এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের উৎপাত বন্ধ করার মতো গণদাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করা লাগবে তা চিন্তাও করি নাই।
শায়েখে চরমোনাই বলেন, আমাদের দাবি স্পষ্ট। সংস্কার করতে হবে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে, বিচার দৃশ্যমান হতে হবে এবং পিআর-এ নির্বাচন হতে হবে। এটা জনতার দাবি। সংস্কার ও বিচারের আগেই যদি নির্বাচন র্নিবাচন করেন তাহলে আমরা ধরে নেবো সরকার কোনো দল বিশেষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন।
ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান বক্তা উত্তরের সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, ঐকমত্য কমিশনে আমরা বিগত ৫ মাস ৫ দিন ধরে নানাভাবে চেষ্টা করেও যখন নিম্নকক্ষে পিআর’র বিষয়টা আলোচনায় আনতে ব্যর্থ হয়েছি; তখনই আমরা রাজপথে এসেছি। ঐকমত্য কমিশন বলে, ওপরের নির্দেশে পিআরকে তারা এজেন্ডাভুক্ত করতে পারছে না। আমরা জানতে চাই, কারা সেই ওপরে থাকা শক্তি? সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ইমতেয়াজ আলম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান কেবল নির্বাচনের জন্য না। রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারই ছিল মূল লক্ষ্য। সেই সংস্কার এই আমলেই করতে হবে। নির্বাচনের পরে সংস্কার করার যে কথা বলা হচ্ছে তার ওপরে আস্থা রাখা যায় না। ৫ই আগস্টের পরে সামান্য সুযোগ পেয়েই সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির যে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে তাতে নির্বাচনের পরে সংস্কারের চিন্তাও করা যায় না।
গণসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, দলের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আব্দুল কাউয়ুম, মুফতি রেজাউল করীম আবরার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, কেএম শরীয়তুল্লাহ, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাকি, মাওলানা খলিলুর রহমানসহ কেন্দ্র ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল পল্টন মোড় হয়ে বায়তুল মোকাররমে এসে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।