
সিলেটের সড়কে কয়েক বছর আগেও গলার কাঁটা ছিল টমটম (ইজিবাইক)। এখনো কোথাও কোথাও হাইওয়েতে এই টমটম চলছে। তবে নগরের বেশির ভাগ প্রধান সড়ক ছেড়ে গলিপথে ঢুকে গেছে। এতে কিছুটা স্বস্তি। তবে অস্বস্তি বাড়িয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। নগরে দুঘর্টনার অন্যতম কারণও ওই রিকশা। নেই কোনো অনুমোদন। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর জমানায়ও ব্যাটারিচালিত রিকশাকে বৈধতা দেয়ার মতো সুযোগ হয়নি। এর কারণ ছিল ব্যাটারচালিত রিকশার জন্য কোনো সুনির্দ্দিষ্ট আইন নেই। এ জন্য সিটি করপোরেশন থেকে বৈধতা দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে, ওই সময় চালকদের আন্দোলনের মুখেও পিছু হটেননি মেয়রসহ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তাদের অনঢ় অবস্থানের কারণে নগরের সর্বত্র ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের সুযোগ দেয়া হয়নি। এখনো প্রশাসন অনঢ় অবস্থানে। এ কারণে ব্যাটারিচালিত রিকশা নগরের ট্রাফিক সিগন্যাল এড়িয়ে চলে। সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এখন নগরে কয়েক হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। এসব রিকশার নেই কোনো অনুমোদন। আর এই অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে নামতে যাচ্ছে সিলেটের পুলিশ প্রশাসন। নবাগত পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী সিলেটের সড়ক থেকে রিকশা সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নিয়েছেন। সময় দিয়েছেন রিকশার চালক ও মালিকদের। রোববারই শেষ হচ্ছে সেই সময়। এরপর সোমবার থেকে শুরু করা হবে অভিযান। গতকালও সিলেটের সড়কে পরিদর্শনের সময় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার একই বিষয়ে পুনরাবৃত্তি করেছেন।
তিনি বলেছেন- ব্যাটারিচালিত রিকশা অনুমোদিত নয়। এর চালকরা প্রশিক্ষিত নন এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এ জন্য মহানগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে পারবে না। সিলেট শহরকে নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করতে আমরা যা প্রয়োজন সবই করবো। প্রায় ১০ দিন আগে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হয়েছেন আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী। তিনি যোগ দিয়েই নগরে অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে অভিযান জোড়ালো করেছেন। একইসঙ্গে মামলার আসামি গ্রেপ্তারেও সক্রিয় হওয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছেন। বুধবার তিনি এসএমপি কার্যালয়ে বৈঠক করেন সিলেটের পরিবহন সেক্টরের কর্মকর্তাদের নিয়ে। সেখানে তিনি পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন। নানা বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করলেও পরিবহন সেক্টরের নেতারা সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। বৈঠকের পর সিলেট নগরীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও যানজট কমাতে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ৫টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে নির্দেশনায়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে- সিলেটকে যানজটমুক্ত রাখতে নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং রেজিস্ট্রেশনবিহীন ও ভুয়া নাম্বার প্লেটযুক্ত কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। অনুমোদিত স্ট্যান্ডে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাখা যাবে না। অননুমোদিত কোনো স্ট্যান্ডে গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। মোটরসাইকেল চালক ও সহযাত্রী উভয়কে হেলমেট পরিধান করতে হবে। সকাল ৮টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত নগরীতে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি প্রবেশ করতে পারবে না। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এসএমপির নির্দেশনায় জানানো হয়। এদিকে নির্দেশনার ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছে সিলেট ট্রাফিক বিভাগ। এর আগে সিলেটের নবাগত জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম যোগদান করেই পরিবহন সেক্টরের নানা অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। ইতিমধ্যে তিনি সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসক নগরে চলাচলকারী অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, যেসব সিএনজি অটোরিকশা অবৈধ রয়েছে সেগুলো যেন নগরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে- ফুটপাথ অবৈধ দখলমুক্ত, অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়ায় জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন গণদাবি পরিষদের নেতারা। গতকাল সিলেটে এক সভায় তারা এ ধন্যবাদ জানান।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এডভোকেট আব্দুল খালিকের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. বদরুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের পরিচালনায় সভায় বক্তারা সিলেটের জেলা প্রশাসক ও সিলেট সিটি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে অবৈধ ফুটপাথ, ক্বীন ব্রিজ পরিষ্কার, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সিএনজি’র ভাসমান স্ট্যান্ড উচ্ছেদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সভায় সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আশপাশ ও পুলিশ সুপার অফিসের আশপাশের ফুটপাথ অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য জোর দাবি জানান। সভায় বক্তব্য রাখেন এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, এডভোকেট আনোয়ার হোসেন, এডভোকেট আব্দুল অদুদ, কামরুজ্জামান তারা, ডা. হাবিবুর রহমান, সাংবাদিক এম.এ হান্নান প্রমুখ।