
যশোরের নওয়াপাড়ায় টিপু নামে এক ব্যবসায়ীকে গর্তে পুঁতে নির্যাতন করে ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেছে পদচ্যুত এক বিএনপি নেতা। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর যৌথ বাহিনী তাকে আটক করেছে। অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান জনি যশোর পৌর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের পর চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়লে তার দলীয় পদ স্থগিত করা হয়। তারপরও থেমে থাকেনি তার অপকর্ম। সম্প্রতি এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের পর ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে গতকাল সকালে খুলনা রয়েল এলাকার আবাসিক হোটেল ‘রোজ গার্ডেন’ থেকে তাকে আটক করা হয়। যশোর ডিবি পুলিশের একটি আভিযানিক দলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুলনা জেলা পুলিশের সহযোগিতায় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে। গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপি’র পদ স্থগিত এই নেতা শিল্প শহর নওয়াপাড়া থেকে পালিয়ে খুলনায় এক বিএনপি নেতার আশ্রয়ে ওঠেন। গ্রেপ্তারের পর আসাদুজ্জামান জনিকে নিয়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা নওয়াপাড়ায় তার মালিকানাধীন কণা ইকো পার্কসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। এদিকে, জনি আটকের খবরে শিল্প শহর নওয়াপাড়ায় তার চাঁদাবাজির শিকার ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস করছেন। জনির আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলীম।
আসাদুজ্জামান জনি নওয়াপাড়া পৌর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ৫ই আগস্ট দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর দলীয় বিশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে জনি ও তার অনুসারীরা। জনির চাঁদাবাজির প্রতিবাদে নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। এসব অভিযোগে যশোর জেলা বিএনপি’র সভাপতি এড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নির্দেশে আসাদুজ্জামান জনির পদ স্থগিত করা হয়। একইসঙ্গে তাকে কেন স্থায়ীভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না- মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশও প্রদান করা হয়।
গত বছরের ২রা সেপ্টেম্বর অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার শাহনেওয়াজ কবীর টিপুকে জনির নির্দেশে তার লোকজন জনির মালিকানাধীন কণা ইকো পার্কে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে তার কাছে ৪ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। টিপু এই চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে জীবন্ত কবর দেয়ার উদ্যোগ নেয় জনি ও তার ক্যাডাররা। তারা মাটিতে বুক সমান গর্ত করে টিপুকে পুঁতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কয়েক দফায় ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে। এ বিষয়ে টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুন বাদী হয়ে অভয়নগর থানায় এবং যৌথ বাহিনীর ক্যাম্পে চলতি মাসের ১ তারিখে অভিযোগ করেন ।
ওই চাঁদাবাজির ঘটনার ১১ মাস পর চলতি বছরের ২রা আগস্ট আসাদুজ্জামান জনি ও তার সহযোগী নওয়াপাড়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দপ্তরিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানা পুলিশ মামলা রেকর্ড করে। মামলা দায়েরের দিনই নওয়াপাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ক্লাব সদস্যরা জরুরি বৈঠক করে মফিজুর রহমান দপ্তরিকে প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ৩রা আগস্ট এ খবর মানবজমিনসহ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পরদিন জনি নওয়াপাড়া ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান।