Image description

উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে ফুলে ফেঁপে ওঠা তিস্তা ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। একইসঙ্গে বেড়েছে পদ্মা নদীর পানি। এতে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পানিতে নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। নিম্নাঞ্চলে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটে বানের জলে ভাসছে মানুষ। টানা ১৫ দিন পানিবন্দি রয়েছেন ৫০ হাজার বানভাসি। প্রতিটি ঘরে হাঁটু সমান পানি। তলিয়ে গেছে রান্নার চুলা। ভেসে গেছে হাঁড়ি, পাতিল ও গবাদিপশু। সারাদিন ব্যারেজ পয়েন্টে হুহু করে ঢুকছে পানি। এ কারণে খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট। এখানে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে লোকালয়ে পানি ঢুকছে, আর নতুন নতুন এলাকা হচ্ছে প্লাবিত। জেলার ৫ উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বানভাসি মানুষগুলো ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন স্কুল-কলেজ ও উঁচু স্থানে। এসব স্থানে গরু ও মানুষ একই ঘরে থাকছেন। বানভাসিদের মাঝে খাবার নেই। নেই বিশুদ্ধ পানি। তলিয়ে গেছে শৌচাগার। শুকনো মুড়ি-চিড়া খেয়ে বসবাস করছে পরিবারগুলো। 

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীতে তিস্তা পাড়ের গ্রামগুলোর প্রায় ২০ হাজার মানুষ হাঁটু থেকে কোমড় পানিতে আটকা পড়েছেন। এরই মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার খবর পাওয়া গেছে। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির রোপা আমনসহ উঠতি ফসলের ক্ষেত। বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তিস্তার উজানে ভারতের সিকিম ও উত্তরবঙ্গে টানা বর্ষণের ফলে তিস্তার বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে জানান, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরগুলো প্লাবিত হয়েছে। ফলে চরাঞ্চলের মৎস্য চাষিদের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তিস্তার নিম্নাঞ্চলে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। এতে প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তার ভাটি কাউনিয়াতেও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে বিকাল ৩টায় পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। 

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা, বহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ডুবে গেছে চরাঞ্চলের কৃষি জমি। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি বাড়ায় নদীর অববাহিকার বেশকিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আসন্ন বন্যা মোকাবিলায় বন্যাপ্রবণ জেলার ৬টি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে জেলা প্রশাসন। এসব উপজেলাগুলো হলো- ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, চিলমারী ও চর রাজীবপুর।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার পানি বাড়ায় সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। সড়ক ডুবে প্রভাব পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি, উজানের ঢল ও ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ায় নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। যদিও পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়েই বইছে। কিন্তু জেলার সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের ৫টি ইউনিয়নের ৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। 

রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার। পদ্মার পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠা বস্তিবাসীরা রয়েছেন চরম বিপাকে। বাঘা উপজেলার চকরাজাপুরে অনেক ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়া গোদাগাড়ী উপজেলার চরআষাড়িয়াদহ, পবার চর মাজারদিয়া এবং নগরের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকেছে। তবে গতকাল থেকে রাজশাহী পয়েন্টে পানির উচ্চতা স্থিতিশীল রয়েছে। রাজশাহী শহরের জন্য পদ্মার পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৪ মিটার। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত পানির উচ্চতার পরিমাপ ছিল ১৭.৫০ মিটার পরিমাপ একই ছিল। নদীর পানি প্রাহিত হচ্ছে বিপদসীমার মাত্র ৫৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। পদ্মা পাড়ের বস্তিগুলোর মানুষরা নদীর পানি কমে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছেন।