Image description
সম্পর্ক নতুন মাত্রায় নিতে চীন সফর

দেশে শক্তিশালী অবস্থানের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বন্ধু বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শক্তিশালী তুরস্কের সাথে জামায়াতের আগে থেকেই ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সাথেও দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে দলটির। এর পাশাপাশি সম্পর্ক উন্নয়নে সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন দলটির আমির। সর্বশেষ বিশে^র অন্যতম পরাশক্তি চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছে জামায়াত। দলটির আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে চীন সফরে রয়েছে। দলটির নেতারা মনে করছেন, এ সফরের মাধ্যমে চীনের সাথে বাংলাদেশ ও জামায়াতের সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রায় পৌঁছে যাবে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন জরিপে জামায়াতের জনমত বৃদ্ধির আভাস মিলেছে। এ জন্য বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে ক্ষমতার কাছাকাছি রয়েছে জামায়াত। আগামী নির্বাচনে দলটি জোটবদ্ধভাবে ক্ষমতায় যাওয়া বা প্রধানবিরোধী দল হতে পারে বলেও অনেকে মনে করেন। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বন্ধু বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জামায়াত। এর অংশ হিসেবে বিগত কয়েক মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসঙ্ঘের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন দলটির নেতারা। এসব বৈঠকের বেশির ভাগই বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের আগ্রহে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে চীনকে সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক বৃদ্ধির ব্যাপারে আগ্রহী দেখা গেছে। সে জন্য গত বছরের ২৮ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে দলটির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আট দিনের সফরে চীন যায়। এ সময় তারা সেখানে চীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে বৈঠকের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সাথেও বৈঠক করেন। এর পর চীনের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে চীন সরকার জামায়াতের আরেকটি প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানায়। এ জন্য গত ১০ জুলাই রাতে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পাঁচ দিনের সফরে চীন গেছেন। সফরে জামায়াত আমিরের সাথে আরো রয়েছেন, দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম ও মাওলানা মুহাম্মাদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, সংগঠনের শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি ডা: আনোয়ারুল আজিম, জামায়াত আমিরের পিএস নজরুল ইসলাম এবং আইটি এক্সপার্ট ওমর হাসিব শফিউল্লাহ।

১১ থেকে ১৫ জুলাই উচ্চপর্যায়ের এ সফর শেষে আগামী ১৬ জুলাই তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। জামায়াত নেতাদের চীন সফরের আগের দিন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন দলটির নেতাদের সম্মানে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এ ছাড়া ওই দিন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে বিদায় জানান। বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমির ডা: শফিকুর রহমান চীন সফর প্রসঙ্গে বলেন, আমরা মূলত চীন সরকার ও সিপিসির (চীনা কমিউনিস্ট পার্টি) দাওয়াতে যাচ্ছি। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ককে কীভাবে নতুন মাত্রায় নেয়া যায়, সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করব। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভালো সরকার আনতে আলোচনা হবে। তিনি আরো বলেন, চীনের আশ্চর্যজনক অভ্যুত্থান বিশ্বের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়। আমরা আশা করি চীনের কাছ থেকে এ সফরের মধ্য দিয়ে ভালো কিছু শিখব, জানবো এবং তারাও আমাদের সম্পর্কে আরো জানার সুযোগ পাবে।

এ সময় চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, জামায়াতে ইসলামীর এ সফর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্কে আরো দৃঢ় করবে। পাশাপাশি দুই দেশের উন্নয়ন ব্যবস্থা আরো জোরালো হবে।

জামায়াত নেতাদের চীন সফর প্রসঙ্গে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াত আমিরসহ প্রতিনিধিদলের এ সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন একটি শক্তিশালী দেশ। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশে^ অন্যতম অবস্থানে রয়েছে। এ জন্য তাদের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য কিভাবে বাড়ানো যায়, তাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক কতটা জোরদার করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে। তিনি জানান, জামায়াত শুধু চীন নয়, আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে অন্য শক্তিশালী দেশগুলোর সাথে আলোচনা করছে, সম্পর্ক বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। যাতে আগামীতে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত।

এ প্রসঙ্গে দলটির প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ নয়া দিগন্তকে বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশ ও দলের অবস্থান সুদৃঢ় করতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে জামায়াত। এর অংশ হিসেবে আমাদের আমির ইতঃপূর্বে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর করে সেখানকার সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ তিনি চীন সফরে গেছেন। এ সফরে আমাদের মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সাথে চীন সরকার ও জামায়াতের সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং চীনের সাথে দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক মজবুত করা। তিনি বলেন, আমরা ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’ নীতিতে সব দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। এ জন্যই নেতারা বিভিন্ন দেশ সফর করছেন।