
দলের ভেতরে শৃঙ্খলায় নজর দিয়েছেন সিলেট বিএনপি’র নেতারা। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরও। তিনি নিজেই বৈঠকে উপস্থিত থেকে দিচ্ছেন নানা পরামর্শ। গতকাল সিলেট বিএনপি’র শীর্ষ চার নেতাকে সঙ্গে নিয়ে দেয়া হয়েছে শেষ বার্তা। এতে বলা হয়েছে; দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড কেউ করলে আর মাফ করা হবে না। এখন থেকে দলীয় অ্যাকশন শুরু করা হবে। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সিলেট বিএনপিতে নানা ঘটনা ঘটে গেছে। এসব ঘটনার বিপরীতে অটল ছিলেন সিলেটের নেতারা। যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা। বিএনপি নেতাদের মতে, সিলেটের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্নভাবে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। একইসঙ্গে চলেছে শুদ্ধি অভিযানও। এতে করে কয়েক মাসের মধ্যে দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তবে দু’টি বিষয়ে গলদ রয়ে গেছে। ওই দু’টি বিষয় হচ্ছে; বিএনপি’র নামে ভুয়া সংগঠন করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে গ্রুপ-উপগ্রুপে ভাগ হয়ে আড্ডা দেয়া। একইসঙ্গে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডে বিরক্ত সিলেট বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব।
গত সপ্তাহে এ নিয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির জেলা ও নগর বিএনপি’র সিনিয়র চার নেতা ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে কঠোর সতর্ক বার্তা দেয়া হলেও পরবর্তীতে দেখা গেছে শৃঙ্খলা অনেকেই ভঙ্গ করেছেন। আর এ বিষয়টি দলের চেইন অব কমাণ্ডে আঘাত করে। এই অবস্থায় গতকাল ফের বৈঠক করেছেন সিলেটের নেতারা। দলের শৃঙ্খলা রক্ষা ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের সার্বিক পর্যালোচনা শেষে এ বৈঠকে জেলা ও মহানগর বিএনপি’র নেতারা পূর্বের দেয়া কঠোর হুঁশিয়ারি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। দুপুরে মেন্দিভাগস্থ একটি ল’ এসোসিয়েট অফিসে অনুষ্ঠিত নীতিনির্ধারণী বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। বৈঠকে জানানো হয়- বিভিন্ন মার্কেট, সড়কপথ ও জনসমাগমস্থলে বসে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কিছু ব্যক্তি বেআইনিভাবে অবস্থান নিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন।
একইসঙ্গে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন্নও করছেন। এ ধরনের বেআইনি ও বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ার করে জানান, ভবিষ্যতে কেউ যদি অনুমোদনহীন সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি পালন বা জনদুর্ভোগে যুক্ত থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে দল কোনো প্রকার ছাড় দেবে না। সব নেতাকর্মীকে দলের গঠনতন্ত্র, শৃঙ্খলা ও অনুমোদিত কাঠামোর আওতায় থেকেই দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়। বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, নগরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নানা কর্মকাণ্ড তাদের কানে আসছে। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে দলের ভেতরে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হচ্ছে। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বার বার সতর্ক করা হচ্ছে। এতে অনেকেই সতর্ক হচ্ছেন আবার অনেকেই হচ্ছেন না। ফলে সবাই যাতে সতর্ক থাকেন সেজন্য ঘন ঘন বৈঠক করে এসব বিষয়ে সতর্ক বার্তা দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে জাতীয়বাদীর নাম নিয়ে কিছু কিছু ভুঁইফোঁড় সংগঠনের জন্ম হয়েছে। আর এসব সংগঠনের কর্মকাণ্ডে বিএনপি পদবিধারী নেতারা মাঝে মধ্যে অংশ নিচ্ছেন। এতে করে দলের নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্ধে পড়েন। ফলে তালিকাভুক্ত অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাড়া কেউ যাতে ভুঁইফোঁড় সংগঠনের অনুষ্ঠানে না যান সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
সিলেট নগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী জানিয়েছেন, দলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করা গর্হিত কাজ। কেউ যদি তা করেন তাহলে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হয়। আমাদের তরফ থেকে বার বার সতর্ক করা হচ্ছে। এতে কেউ কেউ সতর্ক হচ্ছেন, কেউ কেউ হচ্ছেন না। এবার ফাইনাল সিগন্যাল দেয়া হলো। এই সিগন্যালে কেউ সতর্ক না হলে সরাসরি দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তার মতে, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, পাড়ায় পাড়ায় বখাটেপনা, রাস্তা দখল করে নগরের মোড়ে মোড়ে আড্ডা এসব দৃষ্টিকটু কর্মকাণ্ড। সুতরাং মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন কাজ থেকে দলের সকলকে বিরত থাকতেই শেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, যে বৈঠক হয়েছে সেটিকে সাংগঠনিক বৈঠক বলতে পারেন। সংগঠনের প্রয়োজনে আমরা বসছি, বার্তা দিচ্ছি। তবে আমরা কোনোভাবে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডকেও সাপোর্ট করবো না। তিনি বলেন, যারা দলের শৃঙ্খলা মানেননি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগামীতেও যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবেন তাদের বিরুদ্ধে একইভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।