Image description
শেওড়াপাড়ায় দুই বোন খুন

কোরবানির ঈদের জন্য চাপাতি কিনে রাখা হয়েছিল তোশকের নিচে। রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে হত্যায় এই চাপাতি ব্যবহার করা হয়। খুনে অংশ নিয়েছে এক যুবক। যার অবয়ব ধরা পড়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায়। ওই ফ্ল্যাট থেকে স্বর্ণালংকার বা টাকা কিছুই খোয়া যায়নি। তবে আলমারির একটি ফাইলের ভেতরে থাকা কাগজপত্র নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এসবের জন্য এই খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। খুনি নিহত দুই বোনের পূর্বপরিচিত হতে পারে।

পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, খুনি ওই ফ্ল্যাটের ভেতরের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার হার্ডডিস্কও নিয়ে গেছে। 

গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়া শামীম সরণির ৬৪৯ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয়তলার ফ্ল্যাটে মরিয়ম বেগম ও সুফিয়া বেগম নামের দুই বোন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। বাড়িটি সচিবের বাড়ি বলে পরিচিত। তবে গতকাল বাড়িটিতে গিয়ে জানা যায়, এই বাড়ির মালিক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহানের বাবা।

গতকাল দুপুরে বাসায় বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটটিতে সব কিছু তছনছ অবস্থায় পড়ে আছে। খুনের শিকার মরিয়মের মেয়ে নুসরাত কান্নাকাটি করছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনরা। ওই সময় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদেরও দেখা যায় সেখানে।

নুসরাত জাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, হয়তো পরিচিত কেউ সকালে বাসায় এসেছিল। অন্যথায় বাসার ভেতরে ঢোকার সুযোগ পেত না। বাসায় কোরবানির জন্য একটি চাপাতি ছিল। এটি মায়ের (মরিয়ম) বিছানার তোশকের নিচে থাকত। খুনি সেই চাপাতি দিয়ে মাকে আঘাত করেছে। এ ছাড়া মা ও খালাকে রান্নাঘরের শিল দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক জখম করে।

পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় এক যুবককে দেখা গেছে। তবে সেই ছবি অস্পষ্ট থাকায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। ভিডিওতে দেখা গেছে, জিন্সের প্যান্ট পরা এক যুবক ওই বাসায় প্রবেশ করে। দীর্ঘ সময় পর সে নিচে নেমে আসে। নিজে চাবি দিয়ে তালা খুলে ভবন ত্যাগ করে। তবে প্রবেশের সময় যে শার্ট পরা ছিল, বের হওয়ার সময় ভিন্ন পোশাকে দেখা গেছে। এ সময় তার মাথায় মুখ আড়াল করা একটি ক্যাপ ছিল।

স্বজনরা জানান, নিহতদের শরীরে থাকা স্বর্ণালংকার ও আলমারিতে থাকা নগদ অর্থ খোয়া যায়নি। তবে আলমারিতে থাকা একটি ফাইলের কাগজপত্র নেই। ফাইলের ওপর রক্তের দাগ রয়েছে। স্বজনরা ধারণা করছেন, ওই ফাইলের জন্যই পূর্বপরিকল্পিভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হতে পারে।

মরিয়মের স্বামী সাবেক বন কর্মকর্তা কাজী আলাউদ্দিন এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।

বাড়ির মালিকের স্ত্রী ও সচিব নাসরিন জাহানের মা মালেকা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, দোতলায় বি-১ ফ্যাটে ভাড়া থাকতেন মরিয়ম বেগম ও তাঁর মেয়ে নুসরাত জাহান। প্রায় ২০ বছর ধরে তাঁরা ভাড়া থাকছেন। গত রোজার ঈদে মরিয়ম বেগমের মা মারা যান। এরপর প্রায় দুই মাস ধরে তাঁর ছোট বোন সুফিয়া বেগম তাঁদের সঙ্গে থাকতেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।

পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া মাজেদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, মরিয়ম বেগমের স্বামী বরিশালের বাবুগঞ্জে থাকেন। তিনি বন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা। শুনেছি তিনি সেখানে বাড়ি করেছেন, এ ছাড়া নিজস্ব গরুর খামার, চাষাবাদ ব্যবস্থা ছাড়াও বেশ কিছু ব্যবসা রয়েছে। দু-এক মাস পর পর তিনি এখানে আসতেন। মরিয়াম বেগমও কিছুদিন পর পর বরিশাল স্বামীর কাছে যেতেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আত্মীয় জানান, কাজী আলাউদ্দিন সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন ২০১৯ সালে। চাকরিজীবনের শুরুর দিকে তাঁর অনেক শত্রু ছিল। একবার তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তবে সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে কারো কোনো বিবাদ দেখিনি। তিনি বরিশালে স্থায়ীভাবে থাকতেন। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী মরিয়ম ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে স্থায়ী হতে চেয়েছিলেন।

বাড়ির মালিকের বাসার গৃহকর্মী আছিয়া বেগমের ভাষ্য, দুপুর দেড়টার দিকে কাজ শেষ করে নিচে নামার সময় বি-১ ফ্ল্যাট থেকে চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পাই। দারোয়ানকে বিষয়টি জানাতে দৌড়ে নিচে যাই। সেখানে তাকে দেখতে না পেয়ে মূল দরজায় তালা লাগিয়ে দিই। তবে ওপরে আসার পর থেকে ওই ফ্ল্যাটে আর কোনো শব্দ পাইনি।

দারোয়ান রাজু মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই পরিবারের কাছে প্রায়ই বিভিন্ন আত্মীয় আসতেন। আত্মীয়দের পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন বিভিন্ন লোক পার্সেল নিয়ে আসতেন। অধিকাংশ সময় মেয়ে দরজা খুলে পার্সেল সংগ্রহ করতেন। তবে মেয়ে না থাকলে মা ওই সব পার্সেল সংগ্রহ করতেন।

ঘটনা তদন্ত করতে পুলিশের পাশাপাশি মাঠে কাজ করছেন ডিবি ও পিবিআই সদস্যরা। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার ভাষ্য, খুনি বাড়ির ভেতরে থাকা সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক নিয়ে গেছে। তবে বাড়িটির বাইরে একাধিক সিসি ক্যামেরা আছে। সেগুলোর ফুটেজ নিয়ে খুনিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।