Image description

সৈয়দ আবদাল আহমদ

দেশের মানুষের আগ্রহ এখন নির্বাচন। যত আলোচনা হচ্ছে, তা নির্বাচন ঘিরেই। নির্বাচনই এখন দেশের মুখ্য আলোচনায় পরিণত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। এ সময়সীমার ব্যাপারে প্রথমদিকে কিছুটা ভিন্নমত দেখা গেলেও বর্তমানে কারো কোনো দ্বিমত নেই। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে এটা সব দলই মেনে নিয়েছে।

ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। ডিসেম্বরে তারা নির্বাচনের চূড়ান্ত তারিখ অর্থাৎ তফসিল ঘোষণা করবে। যতটুকু শোনা যাচ্ছে, ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ। ভোটযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য দলগুলোর তৎপরতাও ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। রোববার ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে একটি মহোৎসব, যা জাতির জন্য নবযাত্রার সূচনা ঘটাবে।

 

নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কতটা, তা সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে লক্ষ করা গেছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে হারজিতের চেয়েও ভোট দেওয়ার আগ্রহই ছিল বেশি। ২৫ সেপ্টেম্বর রাকসু নির্বাচন এবং ১৫ অক্টোবর চাকসু নির্বাচন নিয়েও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ সব জায়গায় নির্বাচন হোক এটা সবাই চাচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনে ৭৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। অর্থাৎ ৪০ হাজার ভোটারের মধ্যে ৩১ হাজারের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন। জাকসু নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৭ শতাংশ।

 

শেখ হাসিনার শাসনামলে নির্বাচনের কালচার উধাও হয়ে গিয়েছিল। ১৭ বছর ধরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ভোট কী জিনিস নতুন প্রজন্ম জানেই না। ভোটদানের বয়স হলেও তারা ভোট দিতে পারেনি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছেন। বিনাভোট, রাতের ভোট ও ডামি নির্বাচন নামে এগুলো চিহ্নিত। এর মাধ্যমে দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়। শেখ হাসিনার পতন এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর নির্বাচন নিয়ে দেশব্যাপী আগ্রহের সৃষ্টি হয়। নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও সুন্দর করা যায়, এটি যেমন সরকার চাচ্ছে, তেমনি দেশের মানুষও চাচ্ছে। যেনতেন নির্বাচন যেন আর হতে না পারে, সেটাই সবার চাওয়া। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোরও এ নিয়ে দ্বিমত নেই। সুষ্ঠু ভোটে জনগণ তাদের প্রতিনিধি বেছে নেবে—এটাই তাদের প্রত্যাশা।

 

জুলাই সনদ ও আরেকটি ১/১১

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত না থাকলেও মাঝেমধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথাও শোনা যাচ্ছে। কিছুদিন আগে ব্যাপক কানাঘুষা হয় যে, নির্বাচন হচ্ছে না। আরেকটি ১/১১-এর মতো সরকার গঠনের প্রচেষ্টা চলছে পর্দার আড়ালে। ওই সরকারের জন্য যারা কাজ করছেন এবং যাদের নাম শোনা যাচ্ছিল, তাদের অনেককেই আবার শনিবার একটি গোলটেবিলে অংশ নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য দিতেও দেখা গেছে। এর কারণ কী? ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।

 

ড. ইউনূসের সরকার সরিয়ে ১/১১-এর আদলে সরকার আনার ষড়যন্ত্রে যারা মেতেছিলেন, তারা তাদের ওই প্রচেষ্টা থেকে সরে এসেছেন বলে মনে হয়। তারা বুঝতে পারছেন ১/১১-এর মতো একটি সরকার গঠন করা সম্ভব হবে না। দেশের ছাত্র-জনতা সোচ্চার আছেন, রাজনৈতিক দলগুলোও সক্রিয়। তাছাড়া বিশ্ব প্রেক্ষাপটও অনুকূল নয়। মানুষ এখন নির্বাচিত সরকার চাচ্ছে, গণতন্ত্র চাচ্ছে। তারপরও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পরাজিত শক্তি খুবই তৎপর।

 

প্রতিবেশী ভারতের কলকাতা ও দিল্লি থেকে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। কলকাতায় আওয়ামী লীগের গোপন অফিস খোলা হয়েছে। দিল্লিতে শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে বাংলাদেশবিরোধী সেমিনার হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হতে পারে না বলে বক্তব্য এসেছে। শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। তাই সজাগ দৃষ্টি না রাখলে যেকোনো অঘটন ঘটানো অস্বাভাবিক নয়। বাজারে একটি কথা চালু আছে, কোনোভাবে নির্বাচনটি পেছাতে পারলেই হলো। এরপর আওয়ামী লীগ ছাড়া আর নির্বাচন হতে পারবে না। এ জন্যই ১/১১-এর মতো সরকার আনার অপচেষ্টা। তাই ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত নির্বাচন হওয়াটা খুবই জরুরি।

 

সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মোটামুটি একটি ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জটিলতা রয়ে গেছে জুলাই সনদ নিয়ে। গত ৫ আগস্ট জুলাই সনদ স্বাক্ষর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে ঐকমত্য না আসায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর হয়নি। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থাকায় সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জটিল আকার ধারণ করেছে। দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি মনে করে, সংবিধান-সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো শুধু আগামী সংসদ ছাড়া বাস্তবায়নের আইনগত ভিত্তি নেই। বিএনপির মতে, এখনই সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে তা কার্যকর করতে গেলে দেশে দুটি সংবিধান চালু হওয়ার মতো এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হবে, যা ভবিষ্যতে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি মনে করে, ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সফল করতে হলে নির্বাচনের আগেই এই সংস্কারগুলো কার্যকর করতে হবে। তারা রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশ, গণভোট বা গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে এর আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে চায়। তাদের যুক্তি হলো, যদি সংস্কারের দায়িত্ব পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান অর্থহীন হয়ে পড়বে এবং স্বার্থান্বেষী মহল রাষ্ট্রকে আবার বিপদে ফেলতে পারে। নিজ নিজ অবস্থানে রাজনৈতিক দুই পক্ষই অনড়। এই অনড় অবস্থান জুলাই বিপ্লবের মূল চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দলগুলো যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে একমত হতে না পারে, তাহলে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠান বাধাগ্রস্ত হবে এবং গণতন্ত্রে উত্তরণ দুরূহ হয়ে উঠবে। আর এই সুযোগ নিয়ে পরাজিত ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে আসার আশঙ্কা দেখা দেবে।

 

গত বছর ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয় এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশব্যাপী যে আকাঙ্ক্ষা জোরালো হয়, তা হচ্ছে রাষ্ট্রসংস্কার। এই আকাঙ্ক্ষার আলোকে অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য কমিশন দেশের ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দুই পর্বে আলোচনা করে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তগুলো নিয়েই তৈরি করা হচ্ছে জুলাই সনদ। কিন্তু সেই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তার পদ্ধতি নিয়ে এখন চলছে জটিলতা। দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে রাজনৈতিক দলগুলোকে নমনীয় হতে হবে। জুলাই চেতনার ধারক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য এবং বিরোধ কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাদের প্রধান শত্রুকে তা চিহ্নিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরাজিত ফ্যাসিবাদ এবং প্রতিবেশী ভারতের ‘ডিপ স্টেট’ এখন তাদের প্রধান শত্রু। এই দুই শত্রুর ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া যাবে না। যদি কোনো ভুলের কারণে শত্রুরা ছাড় পেয়ে যায়, তবে সবকিছু এলোমেলো করে দেবে। ইতোমধ্যেই লক্ষ করা গেছে, প্রতিবেশী দেশের ‘ডিপ স্টেট’ আমাদের এখানে নানা অঘটন ঘটিয়ে চলেছে।

 

জুলাই সনদ স্বাক্ষরে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বসতে যাচ্ছে। জুলাই সনদের বিষয়ে দলগুলো তাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাঠাচ্ছে। কমিশন সনদ স্বাক্ষরের জন্য ৩০টি দলের কাছে প্রতিনিধি পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছিল। বিএনপি, এনসিপিসহ ১৫টি দল তাদের প্রতিনিধির নাম পাঠিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ বাকি দলগুলো এখনো প্রতিনিধির নাম পাঠায়নি। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আশা করছেন, সবগুলো দলই তাদের প্রতিনিধির নাম পাঠাবে এবং আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেবে। এরপরই সনদ নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত।

 

এই সনদ স্বাক্ষর নিয়ে রাজনীতিতে কিংবা নির্বাচন অনুষ্ঠানে যাতে নতুন করে কোনো অনিশ্চয়তার সৃষ্টি না হতে পারে, দেশের মানুষ সেটাই চাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সব দলকেই তাদের দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থকেই প্রাধান্য দিতে হবে। আগেই বলেছি, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচ মাস বাকি আছে। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর একটিই আওয়াজ হবে—পরাজিত ফ্যাসিবাদকে ছাড় নয়। জুলাই ঐক্য যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে।

 

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে সরকারের শক্ত ভূমিকা

ঢাকায় আয়োজিত এক গোলটেবিলে অংশ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ঘোষিত নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে শক্ত ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন না হলে দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরির পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ওই আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, দেশে একটি ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জুলাই বিপ্লবে সেটি উৎখাত হয়েছে। দেশের রাষ্ট্রকাঠামোর ক্ষেত্রে কতগুলো পরিবর্তন নিশ্চিত করার জন্যই আগামী নির্বাচন। এই পরিবর্তনগুলোর ব্যাপারে একমত হওয়া না গেলে নির্বাচন হলেও কোনো লাভ হবে না। তাই দেশের স্বার্থে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কার্যকর নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতেই হবে। আর এই নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে জুলাই সনদও বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

বক্তারা বলেন, ৩০টি রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ ৮৪টি সংস্কারের বিষয়ে একমত হয়েছে। শুধু বাস্তবায়ন প্রশ্নে এটা আটকে যেতে পারে না। এখানে সবাইকে আন্তরিকতা দেখাতে হবে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের পথ হলো আলোচনার টেবিল। সেখানে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচনে বিএনপি জিতে যাবে এবং তারা কিছুই করবে না, এমন ধারণা করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি বড় দল হিসেবে বিএনপিরও ভাবা উচিত বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে তারা কীভাবে আমলে নেবে। আলোচকদের মতে, দেশে যত দ্রুত নির্বাচিত সরকার আসবে, ততই ভালো। তবে নির্বাচনটি হতে হবে একটি কার্যকর নির্বাচন।

 

‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জনমানুষের ভাবনা ও প্রত্যাশা’বিষয়ক এক জরিপেও উঠে এসেছে একটি কার্যকর নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। জরিপ প্রকাশ করে সেখানে গোলটেবিলে আলোচনায় অংশ নেন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের ব্যক্তিরা। এতে বলা হয়, নির্বাচনটি তখনই সফল হবে, যদি তার মাধ্যমে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মানুষের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে রাষ্ট্রসংস্কার। সেই সংস্কার অগ্রাধিকার পেতে হবে। শুধু নির্বাচন হলেই হবে না, এমন নির্বাচন হতে হবে এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণ হতে হবে, যাতে মানুষের আশার বাস্তবায়ন হয়। সে জন্য সফল ও টেকসই উত্তরণের জন্য প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে।

 

নির্বাচনি মেরূকরণ

জাতীয় নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, দলগুলোর তৎপরতা ও প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ ততই বাড়ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ আসনে এখন ব্যস্ত। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা মেরূকরণও চলছে। বিএনপি তার সমমনা দল ও কিছু ইসলামি দল নিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নেওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী অন্যান্য ইসলামি দলগুলো নিয়ে একটি জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। তরুণদের নতুন দল এনসিপি মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। আপাতত তারা বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামী কোনো দিকেই যাচ্ছে না। এনসিপি, এবি পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন একসঙ্গে রয়েছে। তারা স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে নির্বাচন করার জন্য চিন্তাভাবনা করছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ১৭ বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ফিরছেন বলে দলীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।

 

হিমালয়কন্যা নেপালেও ছাত্র গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এতে তৎকালীন সরকারের পতন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন সে দেশের প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি। প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছিলেন। সে জন্য ছাত্রদের তাকে পছন্দ হয়। আমাদের নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের সরকারের মতেই নেপালে বিপ্লবী ছাত্রদের পৃষ্ঠপোষকতায় সুশীলা এসেছেন সরকারে। তবে নেপালে ছাত্ররা সরকারে যোগ দেয়নি। সুশীলা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই ঘোষণা করেছেন, আগামী ৫ মার্চ দেশটির পরবর্তী নির্বাচন। সেখানেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্ররা।

 

দুর্নীতি, জবরদখল, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসনে মানুষ ত্যক্ত-বিরক্ত। মানুষ চায় ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিরা ক্ষমতায় আসুক। নির্বাচিত প্রতিনিধি হোন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে ত্রয়োদশ নির্বাচনেও মানুষের চাওয়া ‘ক্লিন ইমেজ’-এর প্রার্থীদের। দুর্নীতি করার জন্য কিংবা বাড়াবাড়ি ও ক্ষমতা দেখানোর জন্য যারা প্রার্থী হবেন, তাদের লাল কার্ড দেখাবে মানুষ। আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনে এবার চার লাখ নতুন ভোটার ভোট দেবেন। তারা নতুন প্রজন্ম। তারা দেশকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। দুর্নীতি পছন্দ করেন না। নির্বাচনে তারাই হবেন বড় ফ্যাক্টর। যে দল ভালো মানুষকে প্রার্থী দেবে, তারাই জিতে আসবেন। কালো টাকা ও পেশিশক্তি এবারের নির্বাচনে কাজ দেবে না। নির্বাচনে জিততে হলে দলগুলোকে সে পথে না গিয়ে ‘ক্লিন ইমেজ’-এর প্রার্থী খুঁজতে হবে। এছাড়া এবার নির্বাচন জেতার উপায় নেই।

 

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, আমার দেশ