
ইসরাইলি নির্দেশনার পর গাজা সিটির বাসিন্দারা মরিয়া হয়ে পালাচ্ছে। পালাতে পালাতে সাগরপারে গিয়ে ঠেকেছে। রোববার ভূমধ্যসাগরের কূলঘেষা দক্ষিণ গাজার লম্বা সৈকতে হাজার হাজার উদ্বাস্তু কাফেলা দেখা যায়। হেঁটে, পিকআপ ট্রাকে করে রাস্তা পাড়ি দিচ্ছিল অসহায় ফিলিস্তিনিরা। সেসব যানবাহনে ভারী ভারী আসবাবপত্র দেখা যায়। গাজা সিটির দক্ষিণে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে উপকূলীয় রাস্তা ধরে ছুটছিল নিরুপায় পরিবারগুলো। অপরদিকে বর্বর ইসরাইলের হামলায় এক দিনে অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর আলজাজিরা।
ইসরাইলি বাহিনী রোববার বড় বড় ভবনগুলোকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে। মুহূর্তে ধসে পড়ে ২০ তলা/১০ তলার মতো আকাশ ছোঁয়া আবাসিক ভবনগুলো। সে সময় আকাশের ওপর কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখা যায়।
গাজা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত তাল আল-হাওয়া জেলার বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সি উম্মে আলা শাবান বলেন, “ভোর থেকে বোমাবর্ষণ বন্ধ হয়নি। আমরা সারা রাত ঘুমাইনি... গোলাবর্ষণ এবং বিস্ফোরণের শব্দ এখনো থামেনি।”
এর আগে গাজা সিটির রেমাল এলাকায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী আবারও জোরপূর্বক উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়। সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র এক বার্তায় বলেন, “আপনার নিরাপত্তার জন্য আপনাকে সরাসরি দক্ষিণে আল-মাওয়াসি মানবিক অঞ্চলে চলে যেতে হবে।”
গাজা সিটিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বাস। ইসরাইলি হুকুমে ইতোমধ্যেই ২ লাখ ৫০ হাজার বাসিন্দা শহর ছেড়ে পালিয়েছে।
এ বিষয়ে ইউনিসেফের মুখপাত্র টেস ইনগ্রাম আলজাজিরাকে জানান, গাজার কোনো এলাকা নিরাপদ নয়, এমনকি ‘মানবিক অঞ্চল’ও নয়। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে-সরাসরি বা পরিকল্পিতভাবে স্কুল, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন, মসজিদ ও অন্যান্য নাগরিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করছে ইসরাইল।
অপরদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলায় একদিনে আরও ৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ক্ষুধাজনিত কারণে উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪২২ জনে পৌঁছেছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরাইলি বাহিনী গাজায় নতুন অভিযানে এক দিনে আরও অন্তত ৫৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং গাজা সিটির ১৬টি ভবন ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে তিনটি আবাসিক টাওয়ারও রয়েছে। এই অভিযান উত্তরাঞ্চলের নগর কেন্দ্র দখল ও সেখানকার জনগণকে উৎখাতের লক্ষ্যেই পরিচালিত হচ্ছে।
রোববার নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অপুষ্টিতে আরও দুজন মারা গেছেন। এ নিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪২২ জনে।
গাজা সিটির রেমাল এলাকার দক্ষিণে আল-কাওসার টাওয়ারে ইসরাইলি বাহিনী বিমান হামলা চালিয়ে টাওয়ারটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। অব্যাহত বোমাবর্ষণে হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনি মারওয়ান আল-সাফি বলেন, “আমরা জানি না কোথায় যাব। এই পরিস্থিতির সমাধান দরকার... আমরা এখানে মরছি।”
গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর ইসরাইলের ‘পদ্ধতিগত বোমাবর্ষণ’র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এর উদ্দেশ্য আসলে গণহত্যা ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইল দাবি করছে তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তারা ‘স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শহর ও আবাসিক ভবন, তাঁবু এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থার দপ্তর’ ধ্বংস করছে।
শীর্ষনিউজ