Image description
আলু সংরক্ষণ

হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ভাড়া কেজিপ্রতি ১ টাকা বাড়িয়েছে হিমাগারের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। এ বছর কেজিতে ভাড়া পড়বে ৮ টাকা। এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে অ্যাসোসিয়েশন চিঠি পাঠিয়েছে সব হিমাগারে। এ ছাড়া সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বস্তায় ৫০ কেজির বেশি আলু না রাখার নির্দেশনা দিয়ে হিমাগারগুলোতে পোস্টারও লাগানো হচ্ছে।

এসব সিদ্ধান্তে এবার কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আলু সংরক্ষণের খরচ বাড়বে। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভও হয়েছে। তাঁরা বলছেন, কোনো আলোচনা ছাড়াই হিমাগারমালিকদের সমিতির এই সিদ্ধান্তে তাঁদের খরচ বাড়বে ৩০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকা। কারণ, গত বছর তাঁরা ৫০ কেজির বস্তায় ৭০-৮০ কেজি আলু সংরক্ষণ করলেও ভাড়া দিয়েছেন বস্তায় ৫০ কেজি হিসাবে।

ভাড়া বাড়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে হিমাগারের মালিকেরা বলছেন, বিদ্যুৎ খরচ, ব্যাংকের সুদহার, শ্রমিকের মজুরিসহ বিভিন্ন খরচ হিসাব করে এ বছর প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের ভাড়া ১ টাকা বাড়ানো হয়েছে। অথচ সার্বিক হিসাব করলে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে খরচ ৯ টাকার বেশি। গত বছর ছিল ৭ টাকা।

কৃষি বিভাগ বলছে, এবার ৪ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ১৩ লাখ ৬৭ হাজার টন। এ পর্যন্ত মাঠের ১২ শতাংশ আলু তোলা হয়েছে। এবার ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

হিমাগারমালিকদের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ৩৫০টি হিমাগার চালু রয়েছে। এসব হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা ৩০ লাখ টন বা ৩০০ কোটি কেজি, যা মোট উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশ। একটি হিমাগারের প্রায় ২ লাখ টন আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারির পর থেকে আলু সংরক্ষণ শুরু হবে। মৌসুমে ১০-১২ দিনেই একটি হিমাগার আলুতে ভরে যায়। এত অল্প সময়ে ২ লাখ টন আলু মাপা সম্ভব নয়। কিন্তু বের করা হয় আস্তে আস্তে। কোনো কোনো হিমাগার থেকে আলু বের হতে ৬ থেকে ৮ মাসও লাগে। তাই এবার হিমাগারের ভাড়া নির্ধারণ করা হবে আলু বের করার সময়। গত বছরও আলু রাখার সময় ভাড়া নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের গত ২৩ নভেম্বরের কার্যনির্বাহী বৈঠকে সংরক্ষণ ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত ১৫ জানুয়ারি হিমাগারমালিকদের কাছে পাঠানো হয়। অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার প্রামাণিক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, হিমাগারের বিপরীতে নেওয়া ঋণের সুদ, বিদ্যুৎ খরচ, লোড-আনলোডিং ও পাল্টানোর খরচ, কর্মচারীদের বেতন, বোনাস, বিমা খরচ, গ্যাস বিল, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বিশ্লেষণ করে প্রতি কেজি আলুর সংরক্ষণ ব্যয় দাঁড়ায় ৯ টাকা ৬২ পয়সা। তবে সার্বিক বিবেচনায় এবার হিমাগার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে কেজিপ্রতি ৮ টাকা। অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ এসব হিসাব বৈঠকে তুলে ধরেন।

মালিকেরা বলছেন, গত বছর ব্যাংক সুদের হার ছিল ৯-১০ শতাংশ। এ বছর বেড়ে ১৬-১৭ শতাংশ হয়েছে। জানতে চাইলে সুশান্ত কুমার বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি এসব নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে।

হিমাগারে সংরক্ষণ ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ করেছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। রাজশাহীতে মহাসড়কে আলু ফেলে প্রতিবাদ জানানো হয়। সূত্র বলেছে, এবার প্রতি কেজি আলুর সংরক্ষণ ভাড়া ১ টাকা বাড়ানো হলেও কৃষকের প্রকৃত খরচ বাড়বে আরও বেশি। কারণ, আলু মেপে রাখা সম্ভব নয় বলে গত বছর পর্যন্ত প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি ধরে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি ৭ টাকা হিসাবে ৩৫০ টাকা ভাড়া দিয়েছেন। তবে প্রতি বস্তায় আসলে তাঁরা আলু রাখতেন ৭০-৮০ কেজি পর্যন্ত। এতে কেজিতে ভাড়া পড়ত সাড়ে ৪ থেকে ৫ টাকা। কেজিতে ভাড়া ১ টাকা বাড়লে কৃষকদের গাঁট থেকে যাবে ৩০০ কোটি টাকা। তবে কৃষকদের হিসাবে বাড়তি খরচ দাঁড়াতে পারে ৯০০ কোটি টাকা।

রাজশাহী জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নূরুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর পর এ বছর আলুর উৎপাদন ভালো হয়েছে। হঠাৎ হিমাগার সমিতি ৪ টাকার ভাড়া ৮ টাকা করেছে। বেশি আলু চাষ দেখেই হিমাগারের মালিকেরা সিন্ডিকেট করে কৃষকদের শোষণের জন্য এ কাজ করেছেন। এটি অযৌক্তিক, এটি মানা যায় না।

হিমাগারের মালিকেরা বলছেন, ২০২১ সালে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে ভাড়া ছিল ৫ টাকা, পরের বছর সাড়ে ৫ টাকা, এরপর ৬ টাকা এবং গত বছর ৭ টাকা নির্ধারিত ছিল। খরচ বাড়ার কারণে প্রতিবছর ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। তাঁরা বলছেন, গত বছরও কৃষকেরা ৫০ কেজির বস্তায় ৭০-৮০ কেজি আলু রেখে ভাড়া দিয়েছেন বস্তা হিসাবে ৩৫০ টাকা। এতে হিমাগারের লোকসান হয়েছে। এ জন্য এবার ৫০ কেজির বস্তায় ৫০ কেজি আলু সংরক্ষণের পদ্ধতি চালু করা হবে। এ জন্য সফটওয়্যার ডেভেলপ করা হয়েছে। কৃষক বা ব্যবসায়ী যখন আলু হিমাগার থেকে বের করবেন, তখন ওজন দিয়ে প্রতি কেজি ৮ টাকা হিসাবে ভাড়ার রসিদ তৈরি হবে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, সব সময়ই হিমাগারের ভাড়া কেজিতে নির্ধারিত ছিল, বস্তাপ্রতি নয়। কিন্তু সংরক্ষণকারীরা এটা মানতেন না। তাঁরা প্রতি বস্তায় ২০ থেকে ৩০ কেজি বাড়তি আলু রাখতেন। এতে কৃষকের লাভ হলেও লোকসান হতো হিমাগারমালিকদের। তাই এবার তাঁরা কঠোর না হয়ে পারছেন না। তিনি বলেন, এ বছর শুধু ব্যাংকের সুদহার বাড়ার কারণেই প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে ব্যয় বেড়ে ৫ দশমিক ৮ টাকা দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুতে ব্যয় হয় ১ দশমিক ১০ টাকা। অথচ গত বছর সব খরচ মিলিয়ে ব্যয় ছিল কেজিতে ৬ টাকা।