Image description

অমর একুশে বইমেলা বাঙালির সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাণের এ মেলা কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণে বইপ্রেমিক ও দর্শনার্থীর ঢল নামে। দর্শনার্থীর এ ঢল কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যেই মেলায় নানা অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শোনা যায়। সেজন্য মেলা ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ওপর জোর দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন মেলা সংশ্লিষ্টরা। তবে এবারের মেলায় পর্যাপ্ত সেই নিরাপত্তার ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রকাশক ও বিক্রয় কর্মীরা। মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশকদের অনেকে অভিযোগ করে বলেন, স্টলগুলোর নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

জলধি প্রকাশনার প্রকাশক নাহিদা আশরাফী বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা বেশি থাকলেও তাদের কাজ যথাযথ হচ্ছে না। মূল ফটকের সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর থাকলেও মুক্তমঞ্চের দিকে লোকজন অবাধে যাতায়াত করছে। কিন্তু সেদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

ইকবাল মাহমুদ নামে এক দর্শনার্থী বলেন, অমর একুশে বইমেলা আমার কাছে বড় উৎসবের মতো মনে হয়। এখানে না এলে অনেকটা অপূর্ণতা থেকে যায়। তবে এবার গত বছরের তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। মেলার ভেতর ধূমপান করা নিষেধ থাকলেও অনেককেই ধূমপান করতে দেখা যাচ্ছে।

অ্যাডর্ন প্রকাশনার প্রকাশক জোহরা বেগম কালবেলাকে বলেন, মেলার পরিবেশ তার কাছে মোটেও ভালো লাগছে না। যথেষ্ট পরিমাণ নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত নেই বলে তিনি জানান। সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন ধরনের মানুষের আনাগোনা চলে বিশেষ করে মুক্তমঞ্চের দিক দিয়ে লোকজনের চলাচল একটু বেশি। তিনি অভিযোগের স্বরে বলেন, মেলায় ধূমপান করা নিষেধ, কিন্তু মেলায় অবাধেই সবাই ধূমপান করে বেড়াচ্ছে, দেখার কেউ নেই। মুক্তমঞ্চের দিকে মাদক বেচাকেনা হয় বলে তিনি জানান।

রাবেয়া বুক হাউসের বিক্রয় কর্মী ঊর্মী দাস জানান, মেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন এবং ধুলাবালুর মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে, সেদিকেও প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন।

কিংবদন্তি প্রকাশনীর প্রকাশক অঞ্জন হাসান পবন কালবেলাকে বলেন, আগের বছরগুলোতে বইমেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেরকম প্রটোকল দিত, কিন্তু এবার সেরকম প্রটোকল দিচ্ছে না। দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করছে। পাঠক এবং দর্শনার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে বইমেলার পরিবেশ নষ্ট হবে। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি এবং পুলিশ প্রশাসনের এ বিষয়টির প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন।

মেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন কালবেলাকে বলেন, এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব, তবে আমাদের পক্ষ থেকে আমরা বিষয়টি দেখব।

এ বিষয়ে রমনা থানার এডিসি মির আসাদুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, আমরা বাংলা একাডেমিকে পরামর্শ দিয়েছিলাম তারা যেন মেলার উদ্যান অংশের চারপাশে টিনের বেষ্টনীর ব্যবস্থা করে। কিন্তু তারা করেনি। ফলে এ ধরনের অভিযোগ আসছে। তবে আমরা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব।

এদিকে, বইপ্রেমীরা চাইছেন বইমেলা যেন নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়। তারা মনে করেন, বইমেলার পরিবেশ রক্ষার জন্য শুধু প্রশাসন নয়, সবারই সচেতন হওয়া জরুরি। আর প্রকাশকদের আশা, কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। যাতে বইমেলা সবার জন্য আনন্দময় ও নিরাপদ হয়ে ওঠে।

এদিকে, গতকাল মেলায় নতুন এসেছে ৪৭টি নতুন বই। বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কুমুদিনী হাজং: জুইলী তারা, তারালা জুঁই’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আতাহার খান, কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি আবদুল হাই শিকদার, কবি সোহেল হাসান গালিব। এ ছাড়া গতকাল ছিল তাহমিনা সারোয়ার পরিচালিত সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উপাস্তিক থিয়েটার’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী স্বর্ণময়ী মণ্ডল, অনুপম হালদার, নুরিতা নুসরাত খন্দকার, দিদারুল করিম এবং অমৃত চন্দ্র বণিক। আজ বুধবার বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘হোসেনউদ্দীন হোসেন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আহমেদ মাওলা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শহীদ ইকবাল এবং আবুল ফজল। সভাপতিত্ব করবেন মঈনুল আহসান সাবের।

গত ১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির ঘাড়ে ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। অভ্যুত্থানে আমাদের সাহসী তরুণদের অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এ বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ইস্পাত কঠোর প্রতিজ্ঞা।

এবার গণঅভ্যুত্থানের বইমেলা নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে। এবারের একুশের প্রেক্ষিত আমাদের নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।