ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলার পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। মাঠপর্যায়ে দল পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ে দেওয়া হচ্ছে নতুন কমিটি। জেলায় জেলায় সম্মেলন চলছে। সব জেলায় সম্মেলন শেষে জাতীয় পর্যায়ে সম্মেলনের আশাও করছে দলটি। এরই মধ্যে দলীয় কোন্দল মিটিয়ে দলকে শক্তিশালী করার জন্য মূল দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। মূলত ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে তৃণমূলের কমিটি পুনর্গঠন করতে গত বছরের ২৫ নভেম্বর বেশ কয়েকটি টিম গঠন করেছে বিএনপি। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তৃণমূলের সব কমিটি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে দলটি। সেই সঙ্গে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সর্বস্তরের জনশক্তিকে সক্রিয় করতে সদস্যপদ নবায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মাধ্যমে দলের জন্য বৈধ তহবিল সংগ্রহ ও মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো এবং দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ফেরাতে চায় দলটির হাইকমান্ড।
জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়নের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সদস্যপদ নবায়ন কার্যক্রম শেষ হলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিএনপি নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নামবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদের দোসর কেউ যাতে দলে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে নেতাকর্মীরা সতর্ক রয়েছেন। জেলা উপজেলা কমিটি পুনর্গঠনসহ দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমগুলো সরাসরি তদারক করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি তার পরামর্শ নিচ্ছেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে বিএনপি অন্তত কুড়িটি সাংগঠনিক জেলা শাখায় কমিটি হালনাগাদ করেছে। গত রোববার এক দিনেই ১৩ জেলায় নতুন আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে। এসব কমিটিতে যেমন ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, তেমনি কিছু পুরোনো মুখও স্থান পেয়েছে। ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদের বিভিন্ন কমিটির শীর্ষ পদসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে, যা পার্টিতে ‘চমক’ হিসেবে বলছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। তবে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে আগের কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কোনো কোনো জেলায় কমিটি গঠনের অভিযোগও উঠেছে। দলের ভেতরে আধিপত্য বিস্তার ও কমিটি গঠনকে ঘিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেককে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা গেছে। আলাপকালে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা কালবেলাকে বলেন, ‘তারা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন দেখতে চান, দেখাতে চান। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিএনপির সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল করার পরিকল্পনাও আছে। আগামীতে যারা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পদে থাকবেন, তাদের জেলা বা তৃণমূলের নেতৃত্বে না রাখার সম্ভাবনা আছে। অর্থাৎ কেন্দ্র ও জেলার নেতৃত্ব হবে আলাদা। সেজন্য বর্তমান বাস্তবতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে মাথায় রেখে অপেক্ষাকৃত তরুণ, উদ্যমী, মেধাবী সাবেক ছাত্র নেতাদের দলের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হচ্ছে। কমিটি গঠন ও নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মেধা, পরিশ্রমের পাশাপাশি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় আন্দোলনে ভূমিকা ও ত্যাগের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। যাতে করে তরুণ নেতৃত্ব দেশের নতুন প্রজন্মমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারে। দক্ষতার সঙ্গে কাজ করলে তাদের আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জায়গা হবে বলে এরই মধ্যে বিএনপির হাইকমান্ড ইঙ্গিত দিয়েছে।
তৃণমূলে মজবুত সংগঠন বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, ‘দেশ ও জাতি গঠনে তরুণদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের ভূমিকা অতুলনীয়। ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তরুণদের এগিয়ে আসার পথ খোলা রাখতে হবে। তাদের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। তরুণদের মধ্যে যারা দক্ষ, যোগ্য, ত্যাগী এবং আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে, তারা এরই মধ্যে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এ কারণে তাদের সুযোগটা আরও বাড়ানো উচিত। অবশ্য দল পরিচালনায় নবীন-প্রবীণের সমন্বয় জরুরি। গুরুত্বপূর্ণ পদে তরুণদের এগিয়ে নেওয়ার কারণ হলো যাতে তাদের কাছ থেকে ভালো সেবা পাওয়া যায়। অপেক্ষাকৃত তরুণরা যেহেতু বেশি পরিশ্রম করতে পারবেন, দীর্ঘ সময় নেতৃত্বে টিকে থাকতে পারবেন, সে কারণে সাবেক ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে আনা হচ্ছে।’
নির্বাচন সামনে রেখে সাজানো হচ্ছে মাঠ জানা গেছে, ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর বিএনপির ওপর হামলা, মামলা, গুম-খুন, চাঁদাবাজি, হয়রানি, গায়েবি মামলা, নির্যাতন-নিপীড়নসহ নানামুখী ক্র্যাকডাউন শুরু হয়। নির্যাতন এড়াতে দলটির অসংখ্য নেতাকর্মী ছিলেন বছরের পর বছর ফেরারি জীবনে; এমনকি অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। বহু ত্যাগী নেতাকর্মী নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় এসে রিকশা-ভ্যান চালিয়েছেন, কুলি-মজুরের কাজ কিংবা উবার পাঠাও চালিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছেন। অনেকে দিনের পর দিন মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে খোলা আকাশের নিচে, বনে জঙ্গলে রাত যাপন করেছেন। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে দিন পার করেছেন। অনেকে দিনের পর দিন শত শত মামলায় হাজিরা দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে তারা ভয়হীন নিরাপদ জীবনে ফিরেছেন। এমনটাই মনে করেন দলের নেতারা। তারা জানান, নির্যাতন সইতে না পেরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ তৃণমূলের নেতারা সাজানো মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় কারাবন্দি ছিলেন। তারা অনেকেই মা-বাবা এমনকি স্বজনের মুখটিও শেষ পর্যন্ত দেখতে পারেননি। এখন বিদেশে থাকা নেতাদেরও প্রায় সবাই দেশে ফিরেছেন। তারা দলকে পুনর্গঠনে কাজ করছেন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দল পুনর্গঠনে মনোযোগ দেয় বিএনপির হাইকমান্ড। ওই সময় সরকার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে বেশি মনোযোগী হওয়ায় তৃণমূল সাজানোর কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি দলনি। তাছাড়া হামলা ও মামলায় অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে ও কারাগারে থাকায় কমিটিগুলো করা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী আজ্ঞাবহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জিঘাংসার কারণে তৃণমূল গোছানো সম্ভব হয়নি। এখন তাদের হাতে অবারিত সুযোগ এসেছে। এখন বিভিন্ন জেলা ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি পুনর্গঠনে মনোযোগী হয়েছে বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানায়, সারা দেশে বিএনপির সাংগঠনিক জেলা শাখা কমিটি (মহানগরসহ) ৮২টি। ২০১৯ সালে বেশিরভাগ শাখায় আংশিক এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে যার অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। ফলে দীর্ঘ এই সময়ে বিভিন্ন ইউনিট কমিটি হালনাগাদও করা হয়েছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে সারা দেশে তৃণমূলের নতুন নেতৃত্ব বাছাই করতে চায় বিএনপি। সেই লক্ষ্যে গত বছরের ২৫ নভেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ৯০ দিনের মধ্যে সব কমিটি পুনর্গঠন করার সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়। ঢাকা বাদে দলটির নয় সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বে দেওয়া হয় নয় জন কেন্দ্রীয় নেতাকে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী তৃণমূলের কমিটি গঠন শেষ করে সাংগঠনিক জেলা কমিটির নেতৃত্ব ঠিক হবে সম্মেলন বা কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে। সে হিসাবে বেঁধে দেওয়া সময়ের দুই মাস ইতোমধ্যে পেরিয়েছে।
বিগত ৫ আগস্টের পর কিছু বিতর্কিত অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের কারণে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের একাধিক জেলা, উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। সেগুলোও পুনর্গঠন করা হচ্ছে।
এদিকে সর্বশেষ গত রোববার যে ১৩ জেলায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে, মেহেরপুর, কুড়িগ্রাম, মাগুরা, নাটোর, বান্দরবান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা। এর মধ্যে আফরোজা খান রীতাকে আহ্বায়ক করে মানিকগঞ্জ জেলার সাত সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি; মিজানুর রহমান সিনহাকে আহ্বায়ক ও মহিউদ্দিন আহমেদকে সদস্য সচিব করে মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিটি; মামুন মাহমুদকে আহ্বায়ক করে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচ সদস্যের কমিটি; ফজলুল হক মিলনকে আহ্বায়ক করে গাজীপুর জেলার তিন সদস্যের কমিটি; মাহবুব আলমগীর আলোকে আহ্বায়ক ও হারুনুর রশিদকে সদস্য সচিব করে নোয়াখালী জেলার পাঁচ সদস্যের কমিটি এবং জাকারিয়া তাহের সুমনকে আহ্বায়ক ও আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমকে সদস্যসচিব করে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমিরুল ইসলাম খান আলীমকে আহ্বায়ক করে ১৮ সদস্যের সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৪ নভেম্বর দশটি জেলা ও মহানগরে পূর্ণাঙ্গ ও আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। তার মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক এবং চট্টগ্রাম মহানগর, বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এবং সিলেট মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়। একই দিনে মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, ময়ময়নসিংহ দক্ষিণ এবং শেরপুর জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদিত হয়েছে। পরে সেগুলো আংশিক পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। সদ্য ঘোষিত বিএনপির সাংগঠনিক জেলা কমিটি ও জেলার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সেগুলোতে ছাত্রদল ও যুবদল থেকে নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নেতাদের মতে, ‘এসব কমিটি গঠনের পেছনে জাতীয় কাউন্সিল ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরও যোগসূত্র রয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব ভালো ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করলে তাদেরই হয়তো বিভিন্ন আসনে (নিজ এলাকায়) প্রার্থী করা হবে; এমন চিন্তাও রয়েছে। তবে এসব কমিটিতে এমন কয়েকজন নেতাও পদ পেয়েছেন, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন না-এমন অভিযোগও উঠেছে। এসব নিয়ে তৃণমূলের অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
কদর বেড়েছে সাবেক ছাত্র নেতাদের গত রোববার ঘোষিত ১৩টি জেলার নতুন কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ‘প্রায় সব কমিটিতেই ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলার নবঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক রহমতউল্লাহ পলাশ ছিলেন ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির সদস্য। সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। এ ছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান হাদী, তাজকিন আহমেদ চিশতী ও আখতারুল ইসলাম ছাত্রদলের সাবেক নেতা। মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেতা ছিলেন। সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদারবক্স হলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম মেহেরপুর কলেজ ও অধ্যাপক ফয়েজ মোহাম্মদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতা ছিলেন।
নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আসাদ স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলার শীর্ষ পদে ছিলেন। যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বাবুল, মিজানুর রহমান ডিউক, মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন ও সাইফুল ইসলাম আফতাবও ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। বান্দরবান জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাবেদ রেজাও ছাত্রদল থেকে উঠে আসা। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত হোসেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য এসএ জিন্নাহ কবির, আতাউর রহমান আতা, অ্যাডভোকেট আ ফ ম নুরতাজ আলম বাহার ও সত্যেন কান্ত পণ্ডিত ভজন যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন খানের ছাত্রদল থেকে রাজনীতি শুরু।
এদিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে মিজানুর রহমান সিনহাকে। তাকে এই পদ দেওয়া নিয়ে জেলার নেতাকর্মীদের একটি অংশ খুশি হলেও অন্য একটি অংশ নাখোশ। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মিজানুর রহমান সিনহা ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি বিএনপির কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘পদত্যাগ করলে আবার কীভাবে জেলার শীর্ষ পদে পদায়ন হয়—এ বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। নবীন-প্রবীণের সমন্বয় করে কমিটি করা হয়েছে। এটি ভালো দিক।’ এই কমিটির সদস্য সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ ও সদস্য আব্দুল বাতেন শামীমও যুবদল থেকে উঠে আসা। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদের ছাত্রদল থেকে রাজনীতি শুরু। প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মুস্তাফিজুর রহমান দীপু ভূঁইয়া যুবদল ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাশেকুল ইসলাম রাজিব ছাত্রদল থেকে উঠে আসা নেতা।
গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। বিগত কমিটিতেও তিনি সভাপতি ছিলেন। মাগুরা জেলার বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিব কিশোর, খান হাসান ইমাম সুজা একসময় জেলা যুবদলের শীর্ষ পদে ছিলেন। এ ছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুকুজ্জামান ফারুক, আলমগীর হোসেন, শাহেদ হাসান টগর ও পিকুল খান ছাত্রদলের জেলা শাখার শীর্ষ পদে ছিলেন। নোয়াখালী জেলা কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো ও সদস্য সচিব হারুনুর রশীদেরও রাজনীতির হাতেখড়ি ছাত্রদল দিয়ে। কমিটি গঠনে নোয়াখালী জেলার সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের কোনো মতামত নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মোহাম্মদ শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম জেলা কমিটিতেও একাধিক নেতা রয়েছেন যাদের রাজনীতির শুরু ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতেও ছাত্রদলের সাবেকরা এদিকে সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন করার জন্য প্রস্তুতি কমিটিতেও সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমকে। বরিশাল মহানগরের আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি হাসান মামুন। বরিশাল দক্ষিণ ও ঝালকাঠি জেলার দায়িত্বে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি হায়দার আলী লেলিন ও বরিশাল উত্তর জেলার দায়িত্বে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মো. দুলাল হোসেন। পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবেক ছাত্রদল নেতা কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপুকে।
কমিটি নিয়ে বিভিন্ন জেলায় ক্ষোভ সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ-বিভক্তি তৈরি হয়েছে। কুষ্টিয়ায় এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছে। কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিএনপির কতিপয় নেতার চাঁদাবাজির কারণে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে চালের দাম বাড়ছে বলেও অভিযোগ করেছেন দলের একাংশের নেতারা। আর মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে আওয়ামী লীগের দোসরদের রাখার অভিযোগ তুলে কমিটি পুনর্বিবেচনার দাবিতে গণমিছিল করেছে সদর উপজেলা বিএনপি। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিএনপির একটি পক্ষের হামলায় সেলিম ভূঁইয়া নামের স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চারটি ইউনিয়নের সম্মেলন স্থগিতের প্রতিবাদে হরতাল ডাকে স্থানীয় বিএনপি। নাটোরে জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে গণপদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতারা। ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাবেক ও বর্তমান নেতাদের বিরোধ দেখা দিয়েছে। একইভাবে বরগুনার পাথরঘাটা, বগুড়ার ধুনট, বরগুনার পাথরঘাটা, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন বাতিল চেয়ে একাংশ বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
যা বললেন সালাম আজাদ জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ কালবেলাকে বলেন, আমরা প্রায় ১৬ বছর এক ধরনের জিঞ্জিরে আবদ্ধ ছিলাম। ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছি, যা এতদিন শেখ হাসিনা কেড়ে নিয়েছিল। এখন দেশের মানুষসহ নেতাকর্মীরা মুক্ত। বিএনপির মতো বিরাট রাজনৈতিক দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। সবাইকে পদ দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে কেউ খুশি, কেউ অখুশি হন। আমি মনে করি একটি বাধাহীন পরিবেশে এবার আমরা ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের চেষ্টা করছি। এতে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে যেমন আরও শক্তিশালী হবে তেমনই উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সুন্দর নেতৃত্ব তৈরি হবে।
দল শক্তিশালী কাঠামোতে দাঁড়াবে: শিপলু বিএনপির চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটির বিশেষ সহকারী বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু কালবেলাকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলকে একটি শক্ত কাঠামোর ওপর দাঁড় করতে চান। সেই লক্ষ্যে সারা দেশে দ্রুত গতিতে দল পুনর্গঠন করা হচ্ছে। সাবেক ছাত্রনেতাদের বিএনপির নেতৃত্বে আসার বিষয়টি খুবই প্রত্যাশিত এবং ইতিবাচক। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের সমন্বয়ে কমিটি দিলে দল শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য হয়। কেননা তারা তো রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে দলকে শক্তি জোগাবে। তৃণমূলে নজর দেওয়ায় এবং তৃণমূলে কার্যকর কমিটি গঠন করতে পারলে দল শক্তিশালী কাঠামোতে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেন এই নেতা।