Image description
 

পটুয়াখালীতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জমি দখল করে অবৈধভাবে দোকান স্থাপন ও ভাড়া দিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য চলছে। পটুয়াখালীর লেবুখালী পায়রা সেতু থেকে শুরু করে হেতালিয়া বাঁধঘাট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে চৌরাস্তা এলাকায়।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পটুয়াখালী চৌরাস্তা এলাকার পটুয়াখালী-মির্জাগঞ্জ সড়কের চৌরাস্তা মসজিদ পর্যন্ত মোট ৫৯টি অবৈধ দোকান রয়েছে। এর মধ্যে মাছের দোকান সাতটি, সবজির দোকান ১৫টি, পান-সুপারির দোকান চারটি, জুতার দোকান একটি, ফ্লেক্সিলোডের দোকান একটি, ফার্মেসি দুটি, খাবার হোটেল দুটি, চায়ের দোকান ২৪টি এবং তিনটি মুদিদোকান রয়েছে।

পটুয়াখালী-বরিশাল সড়কের টোল প্লাজা পর্যন্ত ৩৭টি অবৈধ দোকান স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে মাছের দোকান দুটি, কসমেটিকসের দোকান একটি, চায়ের দোকান ১৭টি, ফলের দোকান পাঁচটি, পান-সুপারির দোকান দুটি, খাবার হোটেল একটি ও ৯টি মেকানিকাল ওয়ার্কশপ রয়েছে।পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পিডিও অফিস পর্যন্ত ২৫টি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ফলের দোকান আটটি, চায়ের দোকান ১০টি, রেস্তোরাঁ একটি, বাস কাউন্টার একটি, টাইলসের দোকান তিনটি, সেলুন একটি এবং একটি সবজির আড়ত রয়েছে। শহরের প্রবেশপথেও রয়েছে অবৈধ আটটি দোকান। এর মধ্যে চায়ের দোকান দুটি, পোশাকের দোকান তিনটি, ফ্লেক্সিলোডের দোকান একটি এবং দুটি ফলের দোকান রয়েছে।

স্থানীয়রা সূত্রে জানা যায়, রেজাউল খান, তার ছেলে আব্দুল্লাহ খান ও মিজান খান (ওভার ব্রিজের নিচে), শাহিন হাওলাদার ও অমল বাবু (পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কে), আশরাফ মৃধা (ট্রাফিক বক্সের পাশে), রশিদ বয়াতি (পটুয়াখালী-মির্জাগঞ্জ সড়কের মসজিদ সংলগ্ন) দোকানপাট নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রতিটি ফলের দোকান থেকে প্রতিমাসে ৪-৬ হাজার, প্রতিটি চায়ের দোকান থেকে ৩-৫ হাজার, প্রতিটি ফার্মেসি থেকে ৩-৪ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এসব অবৈধ দোকান থেকে প্রতিমাসে প্রায় পাঁচ লাখ এবং বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা চাঁদা আদায় করে প্রভাবশালী মহলটি।চৌরাস্তা ওভারব্রিজের নিচে ফল ব্যবসায়ী আবু জাফর বলেন, ‘গত ১২ ডিসেম্বর আমার এই দোকানটি তুলেছি। প্রতিমাসে মাটি ভাড়া বাবদ ২৫০০ টাকা দিতে হয়। জানি সরকারি জিমি, সরকারি জায়গা। কিন্তু সবাই দেয়, তাই আমিও দেই। তা নাহলে দোকান করতে পারবো না।’

  • একই জায়গার ফল ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিমাসে দোকান ভাড়া বাবদ চার হাজার টাকা দিতে হয়। এই টাকাটা যদি সরকার নিয়ে আমাদের বসার ব্যবস্থা করে দিতো, তাহলে সরকারও রাজস্ব পেতো। আমরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারতাম।’ফুটওভার ব্রিজের খুঁটির নিচে চায়ের দোকান দিয়েছেন শর্মিলা রানী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার এই তিন হাত দোকানের জন্য প্রতিমাসে রেজাউল খানকে তিন হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। আমরাই বা কী করমু? ভাড়া না দিলে দোকান করতে দেবে না। আর দোকান না করলে ছেলেসন্তান নিয়ে কী খাবো? গত দুই বছর ধরে ভাড়া দিয়ে যাচ্ছি। ১০ হাজার টাকা অগ্রিমও দেওয়া আছে।’এ বিষয়ে অভিযুক্ত রেজাউল খান বলেন, ‘আমাগো দাগের মাথা তাই সেখানে দু -একটা দোকান বসাইছি। সেখানে বড় ভাই, মেজ ভাই, ভাতিজা ও ভাগিনাসহ আরও অনেকের দোকান আছে। কিন্তু সবাই নাম দেয় আমার।’সড়কের জমি দখল করে চাঁদা নেওয়া ঠিক কিনা—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বড়দের দেখে আমরাও দোকান বসাইছি। সরকারের যখন প্রয়োজন হবে তখন আমরা এখান থেকে দোকান সরিয়ে নেবো।’
  •  

বিষয়টি স্বীকার করে শাহিন হাওলাদার বলেন, ‘চৌরাস্তায় আমার দোকান আছে। একেক দোকানের ভাড়া একেক ধরনের।’সড়কের জমি দখল করে কীভাবে এই বাণিজ্য চলছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি ডাক্তারের কাছে। আপনার সঙ্গে পরে কথা বলবো।’ একথা বলে তিনি সংযোগ কেটে দেন।এ বিষয়ে পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জামিল আক্তার লিমন বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। ডিসি অফিস থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতা চেয়েছি। তাদের সহযোগিতায় খুব শিগগির আমরা এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবো।’পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, সড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো অপসারণের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এগুলো অপসারণ করা হবে।