Image description

বাংলাদেশী পাসপোর্ট নবায়ন না করে এবং সরকারে অনুমোতি না নিয়ে ফ্যাসিবাদের আমলা জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জাকিয়া খানম (অতিরিক্ত সচিব) ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করছেন। গ্রহণ করেছেন আমেরিকান দ্বৈত নাগরিকত্ব। তার ৩ কন্যা এবং তার স্বামী স্থায়ীভাবে আমেরিকায় বসবাস করেন। তার ৩ কন্যা জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক। সে কারণে ঘন ঘন বিদেশ যাচ্ছেন। এছাড়া কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের নামে লাখ লাখ সরকারি টাকা তুলে নিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে যে, জাকিয়া খানমকে বিদেশ যাওয়ার সহযোগিতা করে আসছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জাকিয়া খানম এর সর্বশেষ বাংলাদেশী পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে গত ১১/০৩/২০১৮ তারিখে, যার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে বিগত ১০/০৩/২০২৩ তারিখে। এরপর তিনি আর পাসপোর্ট নবায়ন করেননি। আমেরিকান দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। ৩ কন্যা এবং তার স্বামী স্থায়ীভাবে আমেরিকায় বসবাস করেন। অপরদিকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের গত ১৮/০২/২৪ তারিখের স্মারক নং-০৮.০০.০০০০.০৩৬.৬৫.০০২.২৪-৯৫ এর মাধ্যমে আমেরিকায় গমনের উদ্দেশ্যে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জাকিয়া খানম এর অনুকূলে ১৮/০২/২৪ তারিখ থেকে ১৪/০৩/২৪ তারিখ পর্যন্ত ২৬ দিনের বর্হি-বাংলাদেশ ছুটি মঞ্জুর করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশী পাসপোর্ট নবায়ন না করানো সত্ত্বেও তিনি আমেরিকায় কি ভাবে গমণ করেন? এর উত্তর খূজতে গিয়ে জানা যায় যে তিনি বড় ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি আমেরিকান দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের বিষয়টি সুনিপুনভাবে গোপন রাখার উদ্দেশ্যে তার বাংলাদেশী পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার না করে তার জন্মনিবন্ধন সনদ ব্যবহার করেছেন।

এ প্রসঙ্গে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে পরে কথা হবে জানিয়ে ফোন কেটে দেন। এ বিষয়ে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জাকিয়া খানমের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরেনি।

প্রজাতন্ত্রের একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে আমেরিকান দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করা সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪০ ধারার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৪০ (১) অনুসারে কোনো সরকারি কর্মচারী বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করিতে পারবেন না। ৪০ (২) অনুসারে কোনো কর্মচারী বিধি লঙ্ঘন করে বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে সরকার তার চাকরি অবসানের আদেশ প্রদান করতে পারবে। ৪০ (৩) অনুসারে ‘আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো বিভাগীয় কার্যধারা রুজু করবার প্রয়োজন হবে না। ৪০ (৪) অনুসারে “প্রদত্ত আদেশ চূড়ান্ত হবে। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব বা পাসপোর্টের তথ্য চেয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। চিঠিতে বলা হয়, কিছু দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারী তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ ব্যতীত ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ ও ব্যবহার করছেন। তারা চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে শাস্তি ও আইনগত পদক্ষেপ এড়াতে বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে সেসব দেশে চলে যাচ্ছেন। সরকারি কর্মচারীদের একাধিক পাসপোর্ট গ্রহণের মূল লক্ষ্যই হলো বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত তাদের অবৈধ সম্পদ গোপন করে বিদেশে পাচার ও ভোগ করা। জাকিয়া খানম জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. শহিদুল ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. আমান উল্ল্যা এর সহায়তায় বদলি-বাণিজ্যের মাধ্যমে একদিকে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন অন্যদিকে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরির মাধ্যমে সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে সরবরাহকারীদের প্রতিষ্ঠানের নামে একাউন্ট পে চেক প্রদান না করে প্রতিটি বিলের চেক ডিডিও (মহাপরিচালক) এর নামে করে, সেই চেক নগদায়ন করে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. আমান উল্ল্যা এর স্বাক্ষরে ক্যাশ শাখা থেকে অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এই দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ক্যাশ শাখার সঞ্চয় অফিসার জনাব আইয়ুব আলীকে সম্প্রতি জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর হতে বদলি করা হয়েছে। জাকিয়া খানম ট্রেনিং এ দুর্নীতির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি টাকা আত্মসাৎ করেণ। ইন-হাউজ প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণ সামগ্রী (ব্যাগ, প্যাড, কলম ইত্যাদি) সরবরাহ না করে এগুলোর বিল উত্তোলন করেন। এমনকি কর্মচারীদের থেকে খাবার সরবরাহের সীটে স্বাক্ষর গ্রহন করা হয় কিন্তু খাবার সরবরাহ না করে বিল করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উচ্চতর গ্রেড, পদোন্নতি, নিয়োগ, পদায়ন, উন্নয়ন বিষয়ক কর্মকান্ড দীর্ঘদিন স্থবির করে রাখা হলেও দুর্নীতির মহাউৎসব এবং নিপীড়ন চলমান রেখেছেন মহাপরিচালক জাকিয়া খানম এবং উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. শহিদুল ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. আমান উল্ল্যা। চলমান দুর্নীতি, অন্যায়, অবিচার এর প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীকে বিপদগ্রস্ত করে অন্যদের কন্ঠরোধের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
অর্থ ও পরিকল্পনা মহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগটি এক বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ, যার পেছনে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন এক গোষ্ঠী গঠন করে অবৈধ সুবিধা গ্রহণ ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু মহিনুল ইসলাম তাদের এসব অনৈতিক কার্যক্রমে কখনো সহযোগিতা করেননি বলে, তারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ এনে তাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালান। সরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন হলে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ সবচেয়ে সহজ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু মহিনুল ইসলাম অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছ এবং তার বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ নেই, তাই তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে নারীর নাম জড়ো করে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করা হয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের সকল কেনাকাটার অনুমোদন অর্থ ও পরিকল্পনা শাখার মাধ্যমে করা হয়, যেখানে উপপরিচালক হিসেবে মহিনুল ইসলাম ভুয়া বিল অনুমোদন করেননি। এর ফলস্বরূপ, প্রশাসন শাখার উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। গত ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে সহকারী পরিচালক লুবাবা সাদিয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মহিনুল ইসলাম ২০১৭ সাল থেকে তাকে হয়রানি করে আসছেন। কিন্তু ২০১৭ সালে মহিনুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন, যেখানে সাদিয়া রাজশাহীতে অবস্থান করতেন। তাদের দেখা বা কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল না—এক্ষেত্রে অভিযোগটি কতটুকু ভিত্তিহীন, তা প্রশ্নবিদ্ধ। এই অভিযোগের তদন্তে দায়িত্ব দেওয়া হয় পরিচালক মোহাম্মদ শরিফুল ইসলামকে, যিনি অভিযোগকারীদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার প্রতিবেদন যাচাই না করেই অভিযোগটি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে প্রেরণ করা হয়, যার পরে সচিব বিষয়টি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। নতুন তদন্তের দায়িত্ব উপসচিব মকিমা বেগমকে দেওয়া হয়, যিনি পরিচালিত তদন্তের প্রতিবেদনও পক্ষপাতমূলক বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যেকের রুমের সামনে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। অথচ, তারা একটিও সিসি ক্যামেরার ভিডিও-অডিও ফুটেজ দেখাতে পারেনি, বরং তারা কেবলমাত্র তাদের মনোনীত কর্তাদেরকে নিয়ে মনগড়া সাক্ষ্য প্রদান করেছে। মহিনুল ইসলাম সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং স্বার্থান্বেষী পক্ষই তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। এই অভিযোগ শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, বরং এটি মহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের সততা ও নিষ্ঠার প্রতিশোধ নিতে নির্মিত এক ষড়যন্ত্র। মহিনুল ইসলামের অর্থনৈতিক অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে দিয়েছেন। আমরা চাই প্রকৃত সত্য উদঘাটন হোক এবং দোষীদের চিহ্নিত করা হোক। তার সহকর্মী ও সংশ্লিষ্টরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।