ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের ছয় মাস হয়েছে। এখনো প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে হাসিনার অলিগার্ক আমলাদের বিতাড়িত করতে পারেনি; বরং বিগত সরকারের বিতর্কিত আমলা এবং জামায়াত চেতনাধারীরা একতাবদ্ধ হয়ে কৌশলে দল-নিরপেক্ষ চৌকস আমলা জাতীয়তাবাদী ধারায় বিশ্বাসী আমলাদের কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করছে। মুজিববাদী ও জামায়াত চেতনার আমলারা জোটবদ্ধ হওয়ায় এখনো দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ, স্বচ্ছ ও জনমুখী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেননি অন্তর্বর্তী সরকার। প্রশাসনে ফ্যাসিবাদরা দায়িত্ব থাকার কারণে এখনো জুলাই বিপ্লবের চেতনা বাস্তবায়ন হয়নি। অবশ্য কয়েকজন উপদেষ্টার অদক্ষতা, অদূরদর্শিতা, আমলাতন্ত্রের জটিলতা না বুঝে আমলাদের ওপর নির্ভরতা এর জন্য দায়ী। এনজিও থেকে উঠে আসা উপদেষ্টাদের কারো কোরো এখনো তথাকথিত প্রগতিশীল মানসিকতাও কম দায়ী নয়।
অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ আবার বলে আসছেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকর্তাদের বিচার করা হবে। এগুলো মুখে বলা হচ্ছে, বাস্তবে তা প্রশাসনে দেখা যাচ্ছে না। এদিকে অর্থমন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে দায়িত্ব পালন করেছে আসছেন ফ্যাসিবাদরা। তবে বড় বড় মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ ছাড়তে নারাজ। এ জন্য এসব ফ্যাসিবাদী আমলারা পদে থাকতে উপদেষ্টাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ”েষ্টা করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী ত্রয়োদশ-জাতীয়-সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ চূড়ান্ত করা হয়নি। ইতোমধ্যে প্রশাসন দখলে চলছে চতুর্মুখী লড়াই শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিএনপি-জামায়াত-আওয়ামী লীগ লড়াই শুরু করেছে। তবে প্রশাসনে মাঠ ছাড়াতে নারাজ আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ আমলারা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে প্রথমে প্রশাসন দখলে নিতে এগিয়ে জামায়াতপন্থীরা। সরকার ও জামায়াতপন্থী কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়ে বিএনপিপন্থী বঞ্চিত কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। আওয়ামী লীগপন্থীরাও চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। আবার নতুন করে প্রশাসন দখল নিতে পরিকল্পনা শুরু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কয়েকজন উপদেষ্টা তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে পছন্দদের সরকারি কর্মকর্তাকে বদলি ও নিয়োগ দিয়ে বলয় তৈরি করছেন। প্রশাসনে গতি ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানান উদ্যোগ নিলেও এখনো তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। প্রশাসনে পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা বা ভালো পোস্টিং না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিগত সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি অংশ চরম দলবাজি করেছে। অতি উৎসাহী কিছু সরকারি কর্মকর্তা (রাজনৈতিক) দলের নেতাকর্মীদের মতো আচরণ করছেন। এখনো প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগীরা দাপটের সাথে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এতে গত ১৬ বছর ধরে যারা বঞ্চিত তাদের ক্ষোভ ও হতাশা আরো বাড়ছে। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছর বঞ্চিত কর্মকর্তারা এখনো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফ্যাসিবাদের দোসররা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন। এদিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে শুরু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখনো ফ্যাসিবাদী কর্মকর্তাদের দখলে রয়েছে। তবে উপদেষ্টা কার্যালয় থেকে কিছু ফ্যাসিবাদী কর্মকর্তাকে বদলি করা হলেও তারা আবার ভালো ভালো মন্ত্রণালয়ে বদলি নিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। সব মিলে চতুর্মুখী চাপে বিপাকে পড়েছে দল নিরপেক্ষ সরকারি কিছু আমলা। তবে প্রশাসনের বেশির ভাগ আমলা এখনো বিএনপি ও আওয়ামী লাগের বাইরে অন্য রাজনীতিক দলের মধ্যে সমর্থন দিতে রাজি নয় বলে জানা গেছে।
নাম প্রকশে অনিচ্ছুক এক সচিব বলেন, আসলে দেশের স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দীর্ঘ দিন প্রশাসন ও দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন। সে কারণে সরকারি কর্মকর্তারা এই দুই দলের বাইরে যেতে চান না। এবারো সরকারি কর্মকর্তারা এই দুই দলের মধ্যে সমর্থন দিয়ে আসবেন।
প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক স্থায়ী সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম শহীদ খান ইনকিলাবকে বলেন, গণকর্মচারী যখন চারকরিতে প্রবেশ করে তখন তারা কোনো রাজনৈতিক দলের অনুগত হয়ে যোগদান কনে না। তারা যোগ্যতা অর্জন করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ওই সময়ের সরকার কিছু দলীয় অনুগত লোকজনকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছিল। নব্বই সালে গণন্ত্রান্তিক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসার পরে আমরা মনে করেছিলাম প্রশাসনে দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ, স্বচ্ছ ও জনমুখী ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। সেটি ৫০ বছরে হয়ে উঠেনি। তবে রাজনীতিক সরকারগুলো গণকর্মচারীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে পদায়ন, বদলি ও পদোন্নতি দিয়েছে। এতে করে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা লাভবান হয়েছেন। এ কারণে বর্তমান প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দোসর মনে করছেন। আসলে ১৭ লাখ গণকর্মচারীদের মধ্যে সবাই তো রাজনৈতিক দলের পক্ষে থাকে না। অনেকই গণকর্মচারী নিরপেক্ষ রয়েছেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি ভেঙে পড়া প্রশাসনকে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে তা প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের দ্বারা সম্ভব। কারণ তারা মাঠে কাজ করে এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে আসছে। প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সাথে রাজনৈতিক সরকারগুলোর একটি ভালো সম্পর্ক থাকে। সেটি এখনো রয়েছে। স্বাধীন প্রশাসন ব্যবস্থা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং স্বাধীন পুলিশ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে পারলে এ সমস্যা থাকবে না। সেটি বর্তমান সরকারের করার সুযোগ রয়েছে।
গত রোববার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেয়া এক পোস্টে বলেন, বর্তমান আমলা ও মিডিয়া আওয়ামী অপরাধের বৈধতা উৎপাদনে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। যেসব আমলা দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট হওয়ার পথ প্রশস্ত করেছেন, যেসব মিডিয়া এই দীর্ঘ লড়াইয়ে যুক্ত সংগ্রামী জনগণকে জঙ্গি ট্যাগ দিয়েছেÑ আজ তারা আওয়ামী পুনর্বাসনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এর আগে তিনি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ও ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নামে দেশে হাজার হাজার মামলা হয়েছে। তাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। ইমাম ও আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। ঢাকায় ঘুম থেকে ওঠে দেখে চৌদ্দগ্রামে গাড়ি পোড়ানোর মামলার আসামি, এসব কিছু ফ্যাসিবাদী আমলে দেখেছি।
এ বিষয়ে সচিব জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকারের সব স্তরের নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগাগোড়া পুরো দায়িত্বে থাকেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে। ভোটকেন্দ্রে সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-এমনকি মাদরাসার শিক্ষকরাও থাকেন। তবে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য না হলে ভোটে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা একে অপরকে দোষেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করার দায়িত্ব যাদের, তাদের নিয়ে তর্কের বদলে দলগুলো অভিযোগ খাড়া করেন পরস্পরের বিরুদ্ধে। রাজনীতি বিশ্লেষক, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচন কমিশনের তদারকি ও নির্দেশনায় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার দায়িত্ব কার্যত প্রশাসনের। ভোটকেন্দ্রের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা ও অবাধ ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলে ভোটকেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদান, জোর করে ব্যালটে সিল মারা, কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটার কথা নয়। সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবেই পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ, স্বচ্ছ ও জনমুখী প্রশাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের অক্টোবর মাসে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশনের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের সুপারিশমালা চূড়ান্তভাবে উপস্থাপন করা। তবে এখন পর্যন্ত কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এই বিলম্বের পেছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ, যা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন ক্যাডারের আপত্তির মুখে পড়েছে।
প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদন জমা পড়লেও যাচাই শেষে ৭৬৪টি আবেদন কমিটি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে সচিব পদে ১১৯ জন, গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড)-এ ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন এবং উপসচিব পদে চারজনকে পদোন্নতির সুপারিশ করেছে কমিটি। অবসরে গেছেন, সে জন্য তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেয়া যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। এই ৭৬৪ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৯ জনকে চার ধাপ, ৩৪ জনকে তিন ধাপ, ১২৬ জনকে দুই ধাপ এবং ৫৯৫ জনকে এক ধাপ পদোন্নতি দেয়ার সুপারিশ করে কমিটি। নতুন পদমর্যাদা নির্ধারণের পর বঞ্চিত এই কর্মকর্তাকে আর্থিক সুবিধা প্রদানে মোট খরচ হবে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পদোন্নতি বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বঞ্চনা নিরসনে গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত রেখে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ।
আওয়ামী লীগের আমলে ২০০৯ সাল থেকে গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সরকারি চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার এবং এ সময়ের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর এ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির প্রধান ছিলেন সাবেক অর্থসচিব এবং বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমেদ খান। কমিটির কাছে মোট এক হাজার ৫৪০টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে মারা যাওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যদের করা ১৯টি আবেদন ছিল। যাচাই-বাছাই করে কমিটি সচিব পদে ১১৯ জন, গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড) এ ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন ও উপসচিব পদে চারজনকে পদোন্নতির সুপারিশ করেছিল। যেহেতু তারা অবসরে গেছেন, সে জন্য তাদের ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দেয়ার সুপারিশ করেছিল কমিটি। ওই ৭৬৪ কর্মকর্তার মধ্যে কমিটি ৯ জনকে চার ধাপ, ৩৪ জনকে তিন ধাপ, ১২৬ জনকে দুই ধাপ ও ৫৯৫ জনকে এক ধাপ পদোন্নতি দেয়ার সুপারিশ করেছে। এখন সেই সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
প্রশাসনে বদলি ও প্রমোশন এবং পদায়নে এখনো পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের দোসরা রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া হাসিনা সরকারের আমলের অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দাইয়ানসহ বড় বড় কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। আবারো অনেক সচিবের দুর্নীতি বিষয়গুলো আমলে নিচ্ছে বর্তমান সরকার বলে জানা গেছে। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় তাদের দোসর কর্মকর্তাদের ভালো ভালো মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হচ্ছে। পতিত সরকারের কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকলে মাঠ প্রশাসনকে জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলকভাবে গড়ে তোলার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব ধরনের উদ্যোগ ভেস্তে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়র গত কয়েক দিনে জারি করা প্রজ্ঞাপনগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বিগত পতিত স্বৈরাচারী সরকারে সময় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তাদের ভালো ভালো মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে।
গত ১৬ বছরে রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো জনপ্রশাসনের জন্য সময়টি ছিল একটি কালো অধ্যায়। মূলত স্বজনপ্রীতি ও দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন এবং সীমাহীন দুর্নীতির ফলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এ বেহাল অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সৎ, দক্ষ এবং দেশপ্রেমিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রয়োজন। সঠিক মানুষকে সঠিক জায়গায় বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি দেয়া নীতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মূলমন্ত্র হওয়ার প্রয়োজন। কিন্তু দুভাগ্যজনক হলেও সত্য, গত ৫ আগস্টের পর স্বৈারচারী শেখ হাসিনার সরকারের রেখে যাওয়া আমলারা প্রশাসনে এখনো প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। দু-একটি ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা সচিবরা আগের মতো দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও অধিদফতরে মধ্যসারি কর্মকর্তাদের বদলির আদেশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পতিত হাসিনা সরকারের দোসর অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ এবং দলবাজ কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে পতিত সরকারে আমলে নির্যাতিত সৎ দক্ষ ও মেধাবী সরকারি কর্মকর্তাদের অন্যায়ভাবে হয়রানিমূলক বদলি করা হচ্ছে। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বর্তমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হলেও সেখানে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু যারা আসল ঘটনা ঘটিয়ে বিভিন্ন জেলা ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করা হয়নি বলে বঞ্চিত এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নিয়োগের পাবলিক সার্ভিস কমিশনে চেয়ারম্যান হতে সব সদস্য আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী সাবেক আমলা ও শিক্ষক। বৈষম্যবিরোধী সংগঠনের কয়েকজন ছাত্র বলেন, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও পদায়ন বাতিল না হলে এবং শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করে কোনো দুর্নীতিবাজ পদায়ন করে বিপ্লবেকে ব্যর্থ করার চক্রান্ত ছাত্র-জনতা রুখে দেবে।