Image description

জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত জামালপুরের শাহিদা বেগম (৪৫)। রেডিওথেরাপির জন্য চার মাস ধরে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ঘুরছেন। তাঁর ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, মায়ের ক্যান্সার শনাক্ত হলে চিকিৎসার একপর্যায়ে রেডিওথেরাপি নিতে বলেন চিকিৎসক। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে। এর আগে এসেও সিরিয়াল পাইনি। গত মাসে হাসপাতালে এলে জানতে পারি মেশিন নষ্ট। বেসরকারিতে যাওয়ার সামর্থ্য না থাকায় এ মাসে আবার এসেছি। কিন্তু এখনো মেশিন ঠিক হয়নি!

শাহিদা বেগমের মতো অসংখ্য রোগী প্রতিদিন কেমোথেরাপি না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। দেশে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসা অপ্রতুলতায় ধুঁকছে রোগী। রাজধানীর মহাখালীর এ হাসপাতালটিতে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্যতম জরুরি রেডিওথেরাপি মেশিন রয়েছে ছয়টি। কিন্তু দুই মাসের বেশি সময় ধরে ছয়টি মেশিনই নষ্ট। অন্য হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতিও এ রকমই। অধিকাংশ হাসপাতালে একটি মেশিনে চলছে সেবা। রেডিওথেরাপির সিরিয়ালের অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে মারা যাচ্ছে রোগী। দেশের ক্যান্সার রোগীর নেই সঠিক পরিসংখ্যান।

এ পরিস্থিতির মধ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। দিবস উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও সংগঠনগুলো নিয়েছে নানা উদ্যোগ। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ৩০০ বেডের জনবল নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ৫০০ বেডের চিকিৎসা কার্যক্রম। ফলে দিনের পর দিন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। সেবা দিতে হিমশিম অবস্থায় চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, রেডিওথেরাপি নিতে এসে মেশিন নষ্ট থাকায় ফিরে যাচ্ছেন রোগী। রেডিওথেরাপির সিরিয়াল পেতে একজন ক্যান্সার রোগীর চার-পাঁচ মাস অপেক্ষা করতে হতো। এখন তো সে আশাও নেই। গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যান্সার হাসপাতাল প্রকল্পের সমন্বয়কারী, প্রিভেন্টিভ অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের ছয়টি রেডিওথেরাপি মেশিন বা ঢাকা মেডিকেলের একটি, বিএসএমএমইউর একটি দিয়ে বিপুলসংখ্যক রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। এসব মেশিন দু-একটি করে নষ্ট হয়, আবার কেনা হয়। এভাবে চললে ক্যান্সার চিকিৎসার উন্নয়ন হবে না। সরকার যেহেতু ক্যান্সার রোগীর বিদেশমুখিতা ঠেকাতে পরিকল্পনা করছে তাই এখনই ফাস্ট ট্রাক পলিসি অবলম্বন করতে হবে। যেসব হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসা হয় একসঙ্গে সেসব হাসপাতালের জন্য ১৫-২০টি রেডিওথেরাপি মেশিন কেনা প্রয়োজন।

বাংলাদেশে ক্যান্সারের বোঝা : জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি শীর্ষক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ১০৬ জন ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছে। বছরে প্রতি লাখে নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছে ৫৩ জন, আর মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশের জন্য দায়ী এ রোগ। দেশে ৩৮ ধরনের ক্যান্সারে মানুষ আক্রান্ত হয় জানিয়ে গবেষণায় বলা হয়, এর মধ্যে স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালি ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেশি। প্রধান গবেষক, বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খালেকুজ্জামান বলেন, আক্রান্তের ১৬ দশমিক ৮ শতাংশই স্তন ক্যান্সার রোগী। ঠোঁট ও মুখগহ্বর ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ, পাকস্থলী ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ, স্বরযন্ত্র ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ এবং জরায়ুমুখ ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ১ শতাংশ। ফুসফুস, শ্বাসনালি ও পাকস্থলী ক্যান্সারে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে। তিনি আর বলেন, ক্যান্সার বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন (পিবিসিআর) না থাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তথ্য ব্যবহার করে ক্যান্সারের পরিস্থিতি অনুমান করতে হয়।