রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ভয়ভীতি দেখিয়ে দখল-চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করছে হাজি মো. মনির হোসেনের নেতৃত্বাধীন একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক। ব্যক্তিস্বার্থে স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসার কমিটি দখলসহ বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজি-দখলদারিত্বের রাজত্ব কায়েম করেছে চক্রটি। এছাড়া হাট-বাজার, মেলা, নৌকাঘাট, কলকারখানা, ভবনমালিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে জিম্মি করে মাসে প্রায় কোটি টাকার চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে রীতিমতো ‘ঘুম হারাম’ এলাকাবাসীর। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে এবং যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশের কাজে সহযোগিতার জন্য কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশকে দুটো গাড়ি ‘উপহার’ দেওয়ার ঘোষণা দেন হাজি মনির। এরপর পুলিশের নাম ভাঙিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু করেন। বিষয়টি পুলিশ জানতে পারলে তাকে ডেকে নিয়ে পুলিশ কারও গাড়ি নেবে না বলে জানিয়ে দেয়। পাশাপাশি কারও কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে থাকলে সেসব টাকা ফেরত দিয়ে দিতে বলেন। এরপর কয়েকজনের টাকা ফেরত দিলেও সিংহভাগ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, হাজি মনির এবং তার ক্যাডার বাহিনী ব্যক্তিস্বার্থে এসব দখলদারিত্ব করলেও এসব অপরাধের দায় পড়ছে বিএনপির ওপর। বিষয়টি নিয়ে কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির অন্য সৎ নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। তারাও এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার চান। ইতোমধ্যে এসব ঘটনায় কামরাঙ্গীরচর থানায় সাধারণ ডায়েরি এবং মামলা দায়ের হয়েছে। পাশাপাশি এসবের প্রতিকার চেয়ে এবং মাসে কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি করার ঘটনা বন্ধ করতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির মহানগর ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মী।
আরও জানা গেছে, হাজি মনির কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকার সাবেক সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। সে সময়ও তার বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজির বিস্তর অভিযোগ ছিল। বর্তমানে মহানগর কমিটির বিএনপির নেতা হওয়ার পরও তার আগ্রহ কামরাঙ্গীরচরে। ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে হাজি মনির ওই এলাকায় এমন ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছেন যে-প্রকাশ্যে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করছেন না। এমনকি বিএনপির কর্মীদেরও ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আইন বহির্ভূতভাবে নিজে জমিজমার সালিশি কেন্দ্র খুলে বসেছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তার সালিশবাজি। মূলত সালিশের নামে চলছে তার জবরদস্তি করে অর্থ আদায়। কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা করছেন না। তার কথায় এখন আইন; পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। তার ক্যাডার হিসাবে তালিকার শীর্ষে রয়েছে-৫৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক মো. রহমতুল্লাহ, ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. ছিদ্দিক মিয়া, হাজি মনিরের ঘনিষ্ঠজন এবং বিএনপির কর্মী মো. পারভেজ এবং হাজি মনিরের ভাজিদা সাইফুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত ৫ আগস্টের পর নতুন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৫টি ওয়ার্ডে দরপত্রের নিয়ম মেনে বাসা-বাড়ি, দোকানপাট থেকে আবর্জনা সংগ্রহে ঠিকাদার নিয়োগ করে। প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ডিএসসিসির ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফটি ডেভেলপার্স নামের প্রতিষ্ঠান ওই ওয়ার্ডের আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ পায়। ওই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী প্রকৌশলী আবুল হাসনাতের লোকবল ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বর্জ্য সংগ্রহ করতে গেলে গত ১ সেপ্টেম্বর হাজি মনির বাধা দেয়। তার নির্দেশে মনির চেয়ারম্যানের ভাতিজা সাইফুলের নেতৃত্বে দলবল নিয়ে বর্জ্য সংগ্রহকারীদের মারধর করে বর্জ্য সংগ্রহের ভ্যানগাড়ি আটক ও ভাঙচুর করে। একই সঙ্গে ঠিকাদারকে কাজ ছেড়ে দিতে চাপ দেয়; অন্যথায় তাকে মেরে ফেলা হবে-এমন হুমকি দেন।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, হাজি মনির চেয়ারম্যান স্থানীয়ভাবে সব সময় ক্যাডার বাহিনী নিয়ে চলাচল করে। তারা খুবই হিংস প্রকৃতির। এজন্য ওই ঠিকাদার আপস-মীমাংসা করতে যান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর কাছে। সেখানে ঠিকাদারকে মারতে তেড়ে যান হাজি মনির। নিজের ব্যবসা বহাল রাখার জন্য কোনো উপায় পাচ্ছিল না ঠিকাদার। বিগত প্রায় পাঁচ মাস মনির চেয়ারম্যান অবৈধভাবে ভিন্ন রিসিট করে প্রায় ১ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে। অবশেষে ঠিকাদার নিজের জীবন ও ব্যবসা বাঁচাতে কামরাঙ্গীরচর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেখানে তিনি হাজি মনির ও তার ভাতিজা সাইফুল ইসলামসহ ৫ জনকে অভিযুক্ত করেছেন।
শুধু ময়লা নয়, কামরাঙ্গীরচরের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে টাকা তুলছেন হাজি মনিরের ক্যাডার ব্যাহিনী। জিডি, মামলা ও এক-দুজন প্রতিবাদ করলেও তিনি সেগুলোর কোনো পাত্তা দিচ্ছেন না।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এফটি ডেভেলপার্স লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী প্রকৌশলী মো. আবুল হাসনাত যুগান্তরকে বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে আমার প্রতিষ্ঠান ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে বর্জ্য অপসারণ কাজ পেয়েছে। কিন্তু শুরু থেকে আমার প্রতিষ্ঠানের কাজ করতে বাধা দিয়েছে হাজি মনির চেয়ারম্যান এবং তার লোকজন। কিছুদিন তারা আবর্জনা পরিষ্কার করে টাকাও তুলেছে। এক পর্যায়ে আমাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কামরাঙ্গীরচর থানায় অভিযোগ দিয়েছি। সিটি করপোরেশন ও বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীদের জানিয়েছি। সবশেষ তারা আমার কাজের ইজারা বাতিল করতে সিটি করপোরেশনে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। আমি তার জবাবও দিয়েছি। তারা নানাভাবে আমাকে হয়রানি করে চলেছে।
মনির চেয়ারম্যানের ভাতিজা সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই আবর্জনার দরপত্রে আমরাও অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা কাজ পাইনি। এফটি ডেভেলপার্স কাজ পেয়ে আর একজনকে দিয়ে বাস্তবায়ন করছে। সে তার ব্যর্থতা ঢাকতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করছে। আর চাঁদাবাজি-দখলবাজি অন্যরা করে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে। সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো তুলে ধরলে বলেন-মিথ্যা, সবই মিথ্যা।
দখল-চাঁদাবাজির নানা খাত-
মেলা ও বাজার : কামরাঙ্গীরচরে দুটি সাপ্তাহিক মেলা বসে, সেখান থেকে হাজি মনিরের ক্যাডার বাহিনী চাঁদা আদায় করছেন। পাশাপাশি কাঁচাবাজার থেকে চাঁদা উঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতি মঙ্গলবার ছাতা মসজিদসংলগ্ন মেলা থেকে সপ্তাহে ১০ হাজার টাকা করে মাসে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা সংগ্রহ করেন হাজি মনির হোসেনের ক্যাডার মো. ছিদ্দিক মিয়া। আর প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বসা মেলা থেকে ৩০ হাজার টাকা করে মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার চাঁদা আদায় করা হয়। একইভাবে কামরাঙ্গীরচর থানার দক্ষিণাংশে ১০০ গজ দূরে শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত কাঁচাবাজার থেকে দুই শতাধিক দোকান থেকে ১৫ হাজার টাকা তোলা হয়। এ দুই জায়গায় চাঁদা তোলে সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. আলম ও মৎস্যজীবী দলের নেতা মো. রুবেল। অভিযোগ প্রসঙ্গে মো. ছিদ্দিক মিয়া বলেন, ‘প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’ তবে মো. আলম ও মো. রুবেলের মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
নৌকা : ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী ও বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে চলাচল করে এমন ২০০ যাত্রীবাহী নৌকা থেকে দৈনিক ১০০ টাকা করে প্রায় ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে। অর্থাৎ মাসে প্রায় ৬ লাখ টাকা আদায় করছে। এসব চাঁদা আদায় করছেন মো. ফারুক নামের এক বিএনপি কর্মী। এসব চাঁদার টাকা দৈনিক হাজি মনির হোসেনের কাছ থেকে তুলে দেয় বলে ভুক্তভোগীরা জানান। তার বক্তব্য জানতে ওই এলাকায় গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার (ফারুক) নম্বরও ভুক্তভোগীদের কাছে চেয়েও পাওয়া যায়নি।
সিসার ভাট্টি : মুসলিমবাগ ঠোটায় বিআইডব্লিউটিএ মাঠের পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেলের তীরে আবাসিক এলাকায় অবস্থিত পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পরিবেশবিরোধী ইয়াসিন মহাজনের সিসার ভাট্টি থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে মাসে প্রায় ৩ লাখ চাঁদা তুলে হাজি মনিরের সিন্ডিকেট সদস্য-মাওরা পারভেজ, মো. ফারুক এবং মোল্লা খায়রুদ্দীন এবং মুসিলামবাগ এলাকার আরও কিছু চাঁদাবাজ। অভিযোগ প্রসঙ্গে মাওরা পারভেজ জানান, অভিযোগ সঠিক নয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেউ এসব ছড়াতে পারে। তবে সরেজমিন গিয়ে মো. ফারুক ও মোল্লা খায়রুদ্দীনের সাক্ষাৎ মেলেনি এবং তাদের নম্বরও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
কলকারখানা : কামরাঙ্গীরচর পুলিশ ফাঁড়ির গলি থেকে মাদবর বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন কলকারখানা থেকে মাসিক ২ লাখ টাকা চাঁদা তুলছে মনির চেয়ারম্যানের ক্যাডার মো. শুভ ও মো. বাবু। এ ছাড়া বড় বড় কারখানাগুলো মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করছেন হাজি মো. মনির নিজেই। খানাটুলীর কারখানা থেকে চাঁদা তুলছেন হাজি মনিরের ঘনিষ্ঠজন মো. শামির। মাঠ পর্যায়ের এসব দলীয় কর্মী নামের চাঁদা সংগ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
কমিটি দখল : স্কুল, কলেজ, মসজিদ এবং বাজার সমিতির কমিটিগুলো নিজের লোকবল দিয়ে গঠন করে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন হাজি মনির এবং তার ক্যাডার বাহিনী। কামরাঙ্গীরচরের হাজি আব্দুল আউয়াল কলেজ নিয়ন্ত্রণ করছেন তার ভাই শাহ আলম। এছাড়া বিভিন্ন ঘাটের ইজারার মেয়াদ শেষ না হলেও চাপ সৃষ্টি করে সেসব বাতিল করে হাজি মো. মনির এবং তার ক্যাডাররা নিজেদের নামে করে নিয়েছেন। সালিশবাজি : তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, শুক্রবার রাত বাদে প্রতিদিন মাগরিবের নামাজের পর থেকে রাত ২টা থেকে ৩টা সালিশের নামে চাঁদাবাজি করে চলেছেন হাজি মনির। তার সালিশবাজির বিষয়ের তালিকায় রয়েছে-জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধ, মোবাইল ছিনতাই, পারিবারিক কলহ এবং মারামারিসহ নানাকিছু। এসব সালিশি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
পুলিশের নামে চাঁদাবাজি : গত ৫ আগস্টের পর কামরাঙ্গীরচর থানায় সংক্ষুব্ধ জনতা কামরাঙ্গীরচর থানায় হামালা চালায় এবং সবকিছু পুড়িয়ে দেয়। পুলিশের কাজে সহযোগিতার জন্য থানায় নিজ থেকে দুটি গাড়ি কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন হাজি মনির। আর এই গাড়ি কেনার অজুহাতে তিনি বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজি শুরু করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ পুলিশের কমিশনার তাকে ডেকে পাঠান। একই সঙ্গে পুলিশের গাড়ি কেনার নামে চাঁদাবাজির টাকা ফেরত দিতে বলেন। এরপর তিনি কয়েকজনের টাকা ফেরত দিলেও অধিকাংশের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
দলবদলের রেকর্ড : ১৯৯১ সালে হাজি মনির ছাত্রদলের কর্মী হিসাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন। তবে ১৯৯৬ সালে স্থানীয় যুবদলের কমিটির আহ্বায়ক থাকা অবস্থায় হাজি সেলিমের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর ১৯৯৮ সালে নাসির উদ্দিন পিন্টুর হাত ধরে বিএনপিতে ফিরে আসেন। এখানে থেমে থাকেননি; ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে পুনরায় হাজি সেলিমের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেন। আবার ১/১১-এর সময়ে যোগ দেন কিংস পার্টি পিডিপিতে। এরপর আবারও ফিরে আসেন বিএনপিতে। তবে দলীয় স্বার্থের চেয়ে তার কাছে ব্যক্তিস্বার্থ ও অর্থ উপার্জন মুখ্য থাকে। এবারও পটপরিবর্তনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে দখল-চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছেন। এতে ব্যক্তিগতভাবে তিনি লাভবান হলেও দল হিসাবে বিএনপি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু যুগান্তরকে বলেন, হাজি মনিরের ময়লাসংক্রান্ত একটি ঝামেলার বিষয়ে আমাকে সালিশি করতে হয়েছে। তবে ওই ঘটনার কোনো সমাধান করা যায়নি। এর বাইরে তার বিরুদ্ধে আর কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তার জানা নেই বলে জানান। তবে শুধু হাজি মনির নয়, যে কারোর বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে দল তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (লালবাগ) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে এমন অভিযোগ এসেছিল যে, পুলিশকে গাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। তখন ওই এলাকার বিএনপির নেতাদের ডেকে এনে বলে দেওয়া হয়েছে যে, এ ধরনের চাঁদাবাজির টাকায় পুলিশ কোনো গাড়ি নেবে না। থানাকেও বলে দেওয়া হয়েছে-সরকার যখন গাড়ি দেবে, তখন আমরা গাড়ি নেব। এর বাইরে কারও কাছ থেকে গাড়ি নেব না।
এ বিষয়ে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দখল-চাঁদাবাজির ঘটনায় একটি মামলা ও একটি জিডি হয়েছে। সেখানে হাজি মনির এবং তার ঘনিষ্ঠজনদের নাম এসেছে। কারও নামে মামলা হয়েছে এবং কারও নামে জিডি হয়েছে। যাদের নামে মামলা হয়েছে তারা জামিনে রয়েছেন। আর কিছু বিষয় তদন্ত করে ওপরে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, চাঁদার জন্য একজনকে আটকে রাখার ঘটনায় মনির চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত দুজনকে তাৎক্ষণিক আটক করা হয়েছিল। এ বিষয়ের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো গড়িমসি করছে না। তবে নীরব চাঁদাবাজি হয়ে থাকলে অনেক সময় সে বিষয়ে পুলিশের তেমন কিছু করার থাকে না। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে পুলিশ তাদের সহযোগিতা করছে।
তিনি আরও বলেন, হাজি মনির কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশকে দুটি গাড়ি কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে এ ঘটনায় চাঁদাবাজি হচ্ছে এমন অভিযোগ এলে পুলিশের পক্ষ থেকে কারও গাড়ি নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লিখিত সব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাজি মো. মনির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। জিডি, মামলা, দলীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ একইসূত্রে গাঁথা। তবে তার কর্মীরা চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আটক হওয়া এবং পুলিশ গাড়ি নিতে অস্বীকৃতি জানানোর বিষয় উল্লেখ করলে বলেন, ‘ভাই উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার প্রতিপক্ষ এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওসব কথা বিশ্বাস কইরেন না।’