এ মাসের প্রথমার্ধেই আসছে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল। দলের নাম এখনো চূড়ান্ত না হলেও, দলের নেতৃত্বে কারা আসছেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এ রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে। সদস্যসচিব এবং অন্যান্য শীর্ষ পদে কারা থাকবেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে সদস্যসচিবসহ শীর্ষ পদগুলোতে আসার ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন নেতৃস্থানীয় আরো অন্তত তিন জন। জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে জানা গেছে।
জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, আমাদের নতুন দলের আত্মপ্রকাশের জন্য দেশের মানুষেরা মুখিয়ে আছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার কারণে নীতিনির্ধারণী নেতারা চাচ্ছেন উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে কেউ একজন দলের হাল ধরুক। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত হলো তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম যেন নতুন দলের আহ্বায়ক হন। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
নাগরিক কমিটির অন্য নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে কেউ দলে যোগ দিতে হলে উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। তবে নাগরিক কমিটির একটা বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে শুধু নাহিদ ইসলাম সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন। এক্ষেত্রে আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সব মত ও পক্ষ একমত হয়েছে। এছাড়া নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করলে ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে নাগরিক কমিটি থেকে আলী আহসান জুনায়েদ কিংবা আখতার হোসেন উপদেষ্টা পদে যোগ দিতে পারেন বলেও আভাস পাওয়া গেছে।
এদিকে উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর গত বৃহস্পতিবার নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, রাজনৈতিক দলে অংশ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদ ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেননি। তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত যদি হয়, রাজনৈতিক দলে অংশগ্রহণ করার মতো পরিস্থিতি হলে, সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন।
রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য সদস্যসচিব পদে আলোচনায় আছেন নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ। এর বাইরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, যুগ্ম সদস্যসচিব মাহবুব আলম ও অনিক রায় আহ্বায়ক কমিটিতে শীর্ষ নেতৃত্বে আসছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ও সামগ্রিক কাঠামো সম্পর্কে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাঈদের বাড়ি থেকে লংমার্চ শুরু করে চট্টগ্রামের শহিদ ওয়াসিমের বাড়ি পর্যন্ত লংমার্চ করে এ দলের ঘোষণা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সামনে রমজান এবং ঈদ থাকায় চলতি মাসের প্রথমার্ধেই দল ঘোষণা করে দেশব্যাপী ১৫ দিনের লংমার্চ করবে দলটি। এক্ষেত্রে রংপুরে লংমার্চ শুরু করার আগে অথবা চট্টগ্রামে লংমার্চ শেষ করে দল ঘোষণা হতে পারে।
দলের নাম এখনো চূড়ান্ত না হলেও প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি এবং ঈদের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে দলীয় কাঠামো চূড়ান্ত করা হবে। আহ্বায়ক কমিটি হওয়ার পরেই নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জনের জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলায় প্রয়োজনীয় কাঠামো নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আকরাম হুসাইন ইত্তেফাককে বলেন, বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমাদের প্রতি জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা আমরা লক্ষ্য করেছি। রাজনৈতিক দল গঠনের আগে আমরা সারা দেশে সংগঠন গুছিয়ে নেওয়ার কাজ করছি। ইতিমধ্যে আমরা প্রায় ২৫০টি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করেছি। নেতৃবৃন্দ দলের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি প্রণয়নের কাজ করছেন। দলের নেতৃত্বে কারা থাকবেন জানতে চাইলে এ নেতা জানান, জুলাই আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন নতুন দলেও তারা নেতৃত্ব দেবেন।
প্রসঙ্গত, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা শুরু হয় গত সেপ্টেম্বরে। ৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র পুনর্গঠন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও ‘নতুন বাংলাদেশের’ রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সফল করার লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি আত্মপ্রকাশ করে।