Image description
দেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি কোন দিকে ধাবিত

৩০ জানুয়ারি ‘সব লোকে কয় বেহাত জুলাই বিপ্লব’-শীর্ষক আলোচনা সভা হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত সভায় ‘জুলাই বিপ্লবের’ মূল আদর্শের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাব্য সমাধানের পথ নিয়ে আলোকপাত করা হয়। বক্তারা বলেন, ‘বিপ্লব খারাপ সময় পার করছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে জুলাই বিপ্লব বেহাত হবে।’ প্রশ্ন হচ্ছেÑ সত্যিই কী হাজারো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত ‘জুলাই বিপ্লব’ বেহাত হতে যাচ্ছে? আয়োজকদের এই শিরোনাম দিতে হচ্ছে কেন? আশঙ্কা অমুলক নয়। প্রথমত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দল ও আমজনতার অংশগ্রহণ থাকলেও বিপ্লবে ভূমিকা নেই এমন এনজিও ব্যক্তিদের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র সমন্বয়ক ও অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘শত্রু শত্রু খেলা’ শুরু হয়ে গেছে। জুলাই বিপ্লব ধরে রাখতে যখন সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা অপরিহার্য; তখন নিজেদের মধ্যে বিরোধ শত্রুপক্ষকে ষড়যন্ত্রের উৎসাহ জোগাবে।

অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দলমত নির্বিশেষে সবার কমন শত্রু আওয়ামী লীগ ও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা শক্তিগুলোর নিজেদের মধ্যেকার বিরোধের সুযোগ নিয়ে দিল্লির আশ্রয় নেয়া কমন শত্রু শেখ হাসিনা তেলাপেকার মতো অন্তর্বর্তী সরকার হটানোর আন্দোলনের হুঙ্কার দিচ্ছে। দেশে মানুষের কাছে বটবৃক্ষতুল্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘জুলাই বিপ্লবের অর্জন ধরে রাখার’ দৃঢ় সংকল্পের মধ্যেও কিছু উপদেষ্টার গতিহীন নেতৃত্ব এ ক্ষেত্র সৃষ্টি করছে। এমনিতে প্রশাসনে হাসিনার অলিগার্ক আমলাদের সরানো যায়নি; আবার পতিত হাসিনার ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ থিউরির মতোই ‘আগে সংস্কার পরে নির্বাচন’ চেতনা ধারণ করা হচ্ছে। আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র সমন্বয়কদের নতুন দল গঠনের উদ্যোগ, রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে ছাত্রনেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, সুবিধাবাদী জামায়াতের ভূমিকা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলতে বিএনপির রাজপথে নামার কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা এবং পলাতক আওয়ামী লীগের ড. ইউনূসকে হটানোর হরতাল-আন্দোলনের হুমকি ‘নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা’ কিছুটা হলেও হোঁচট খাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। বিশেষ করে উপদেষ্টা পদে থেকে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের যেমন কাম্য নয়; দিল্লির খুঁটির জোরে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের হুমকির মধ্যে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির রাজপথে নামার ইঙ্গিত ভালো বার্তা দেয় না। আন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামার বিএনপির চেতনা কার্যত নিজের ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধের নামান্তর। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের হুঙ্কারের মধ্যে বিএনপির এমন বক্তব্য জনমনে খটকা লাগছে।

অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশের রাজনীতিতে বিএনপির সমপর্যায়ের জনসমর্থিত রাজনৈতিক দল এখন আর নেই। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারবেÑ সেটি অলিক কল্পনা। জামায়াতের ঝাঁপাঝাঁপি কার্যত সীমিত জনসমর্থনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তথাকথিত জরিপ, সোশ্যাল মিডিয়া আর গণমাধ্যমে জামায়াতকে নিয়ে যতই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলে ধরা হোক; দলটি নিয়ে আমজনতার নেতিবাচক ধারণায় চির ধরেনি। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নতুন দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের ধারণা, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে তারা সাফল্য পাবে। বাস্তবতা সময় বলে দেবে। তবে বিএনপির জনসমর্থনে বিশৃঙ্খলা বাধাতে নানা অপচেষ্টা হচ্ছে। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জামায়াত তাদের লোকজন বাসালেও জনসমর্থন না থাকায় তাদের নিয়ে বিতর্ক কম। তবে বিএনপির ব্যাপক জনসমর্থন থাকায় কিছু ব্যক্তির চাঁদাবাজি নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের উচিত সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, সারা দেশে বিএনপির যে জনসমর্থন, শুধু চাঁদাবাজির দুর্নাম ঠেকাতে পারলে আসন্ন নির্বাচনে দলটির কাছাকাছি কোনো দল যেতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের হুঙ্কার : রাখালের ‘বাঘ এলো বাঘ এলো’ প্রবাদের মতোই পতিত আওয়ামী লীগ অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুঙ্কার দিচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্ট পালানোর হাসিনা তার রাজনৈতিক মুরুব্বি ভারতের সহায়তায় একের পর এক ষড়যন্ত্রের তীর ছুড়েছে। জুডিশিয়াল ক্যু থেকে শুরু করে সংখ্যালঘু নির্যাতন, পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে ভারত পালিয়ে যাওয়া হাসিনা এবার ‘জনগণের অধিকার আদায়ে’ নতুন কর্মসূচি দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। এ যেন হিন্দু ধর্মের প্রবাদের মতো ‘ভূতের মুখে রাম নাম’।

আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি দাবির লিফলেট (প্রচারপত্র) বিতরণ, ৬ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক ‘কঠোর’ হরতাল কর্মসূচি। রাজনৈতিকভাবে মেরুদ- ভেঙে যাওয়া আওয়ামী লীগ হরতাল করবে! ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটি কার্যত পঙ্গু হয়ে গেছে। দীর্ঘ কয়েক বছর দলটি নিজস্ব কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে পারেনি; প্রতিপক্ষ বিএনপি কর্মসূচির বিপরীতে ‘শান্তিসভা’ কর্মসূচি পালন করেছে। হাসিনাসহ দলটির বহু নেতা পলাতক। কয়েকশ’ নেতা কারাগারে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ যদি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে এসে রাজনীতি করার জন্য গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে; তবুও হাসিনা দেশে ফিরবে না। কারণ, হাসিনার রাজনীতি ছিল পিতা হত্যার প্রতিশোধ। ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যম তিনি পিতা হত্যার বিচার করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে জামায়াতের কয়েকজন নেতার ফাঁসি দিয়েছেন। এখন দেশে হাসিনার কোনো রাজনীতি নেই। অতএব নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও তিনি আর দেশে ফিরবেন না। বিশেষজ্ঞা বলছেন, সামান্য দেশপ্রেম থাকলে হাসিনা পালাতেন না। দিল্লি-কলকাতায় থেকে আন্দোলনের হুঙ্কার আওয়ামী লীগের দেশে পালিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের আরো বিপদে ফেলবে।

আত্মপ্রকাশের পথে নতুন দল : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের কথা অনুযায়ী, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশের রাজনীতিতে নতুন দল আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। বলা হচ্ছেÑ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী জনপ্রত্যাশা পূরণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসছে জাতীয় নাগরিক কমিটির এ রাজনৈতিক দল। যার গঠনতন্ত্র ও নির্বাচনী ইশতেহারেও থাকবে বৈচিত্র্য। এ দলের ব্যানারে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়া হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা রয়েছে অনেক বহুজাতিক ব্যবসায়ী কোম্পানি দলটির নির্বাচনী খরচ দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। প্রয়োজনে নতুন দল নির্বাচনী জোটও করতে পারে। জামায়াতের নেতাদের বক্তব্য আর ছাত্র সমন্বয়কদের বক্তব্য সে বার্তাই দিচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূনের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নতুন দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। ছাত্রদের ভোটার করা এবং ছাত্রনেতাদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুবিধা দিতে ভোটারের বয়স এক বছর কমিয়ে ১৭ বছর এবং প্রার্থী হওয়ার বয়স ২৫ বছর থেকে চার বছর কমিয়ে ২১ বছর করার প্রস্তাব করেছে নির্বাচনী সংস্কার কমিশন। সে কারণে অনেকের শঙ্কা, নতুন দলকে কিংস পার্টির সুবিধা দিতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি ‘শত ফুল ফুটতে দাও’ কৌশল গ্রহণের বদলে সম্ভাব্য নতুন দল ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে নির্বাচনের মাঠে নামে কিনা, সে সন্দেহ করেছে বিএনপি। নতুন এ দলের প্রস্তুতি বাস্তবে কতটা এগিয়েছে, এই দলে কারা থাকবেন, দলের নীতি-আদর্শ কী হবে, সম্ভাব্য শীর্ষ নেতা কে হচ্ছেন সেটি চূড়ান্ত হয়নি।

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ছাত্রনেতা, সুশীলদের অন্তর্ভুক্তির টার্গেট করে দল গঠনের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। যদিও ওয়ান-ইলেভেনের পর ড. ফেরদৌস কোরেশীর নেতৃত্বে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি নামে কিংস পার্টির পরিণতি ভালো হয়নি। প্রায় চার দশকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো সারা দেশে বিস্তৃত বড় কোনো রাজনৈতিক দল তৈরি হয়নি। ছাত্রদের সম্ভাব্য নতুন দলে কারা যোগদান করবেন সেটি সময় বলে দেবে। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ছাত্ররা দল গঠন করবে। এ লক্ষ্যে তারা দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে। ছাত্ররা প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে। রক্ত দিয়ে তারা যেগুলো অর্জন করেছে, সেগুলো তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো সেই সব ব্যক্তি নিয়ে যাবে, যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যান্যের মতো সব কিছুর পুনরাবৃত্তি করার সুযোগ খুঁজছে।’

এ সময় ড. ইউনূস বলেন, ‘দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে হয়তো তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এটাও একটা বিপদ। কারণ, রাজনীতি শুরু করলে সব ধরনের রাজনীতিবিদ তাদের সঙ্গে মিশে যাবে। তাই আমরা জানি না তারা আমাদের দেশে যে রাজনীতি, তা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারবে কি-না।’ অপ্রিয় হলেও সত্য, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে’ আশঙ্কা করছেন। কারণ, ৫ আগস্টে হাসিনা পালানোর পর প্রশাসনে রদবদল, পদোন্নতি, নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনায় ছাত্র সমন্বয়কদের নাম জড়িয়ে গেছে। এমনকি ত্রাণের কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করার অভিযোগ রয়েছে। একজন ডিসিকে নিয়োগে তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠে ছাত্র সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি পর্যন্ত গঠন করতে হয়েছিল। শুধু তাই নয়, দেশব্যাপী ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, পরিদফতরে তাদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ এখন ওপেন সিক্রেট। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নতুন দল গঠন জনগণ কিভাবে নেবে সেটি সময় বলে দেবে।

বিএনপি কোন পথে : বিএনপির মহাসচিব নতুন দল গঠন ইস্যুতে যথাসময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও দেশবাসীকে ‘নোটিশ’ করেছেন। বিবিসিতে দেয়া সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে।’ তার এই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক হইচই হয়। তিনি মূলত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন ছাত্রনেতার উপদেষ্টা পদে থেকে নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়ায় জড়ানো এবং নির্বাচন হলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে নাÑ এমনটিই বুঝিয়েছেন। অতঃপর উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, ড. ইউনূসের সরকার নতুন দল রাজনৈতিক দলকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে না। অতপর উপদেষ্টা পরিষদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ জানান, তারা রাজনীতিতে নামলে উপদেষ্টা পদে থাকবেন না। এর বাইরে রয়েছেন মাহফুজ আলম। এ নিয়ে বিতর্ক হলেও এটি পরিষ্কারÑ তিন উপদেষ্টা যদি নতুন দলে যোগ দেন তাহলে তার আগে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করবেন। এর মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ‘আন্দোলনের যাওয়ার’ ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারে ওপর চাপ সৃষ্টি করতে কর্মসূচি নিতে পারে বিএনপিÑ এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে চিন্তা করছি যে, সরকারের ভুল শুধরে সঠিক রাস্তায় আনতে, গণতান্ত্রিক রাস্তা বিনির্মাণ এবং একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের পথ পরিষ্কার করার জন্য আমরা আন্দোলন করব।’ এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে খটকা লাগছে, অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি ঘোষণার পর বিএনপিও রাজপথে নামার কথা বলছে। আওয়ামী লীগের কথিত আন্দোলনের পাশাপাশি বিএনপি আন্দোলন করলে মানুষের কাছে কী বার্তা যাবে?

প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপির এখন রাজপথে নামার প্রয়োজন নাকি তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ ফলাও করে প্রচার হচ্ছে তার রাশ টেনে ধরা? আওয়ামী লীগ পালানোর পর দেশের সবচেয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। দেশের বেশির ভাগ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। এখন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে সেদিকে দিকে নজর দেয়া। দিল্লির তাঁবেদার গণমাধ্যমগুলো ‘বিএনপির চাঁদাবাজি’ খবর প্রচার করছে। এ সুযোগে হাসিনার অনুগত গণমাধ্যম ও সুশীলরা প্রচার করছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপিকে এক পাল্লায় মাপছে। মুজিববাদের সঙ্গে জিয়াবাদের কবর দেয়ার কথা বললেও জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা ‘মওদূদীবাদ’ শব্দটি বেমালুম চেপে গেছে। অথচ বাংলাদেশে জিয়াবাদ শব্দটি কখনো শোনা যায়নি। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে জামায়াত প্রচার করছে ‘এক চাঁদাবাজকে সরিয়ে আরেক চাঁদাবাজকে’ ক্ষমতায় চাই না। জামায়াতের অনুগত মাওলানারা ‘ইসলামী জলসা’ ও ‘ওয়াজ মাহফিলে’ আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনা তুলে ধরে প্রচার করছেÑ এক চাঁদাবাজ চলে গেছে, আরেক চাঁদাবাজ ক্ষমতায় আসতে চায়। এসব বন্ধ করতে বিএনপির নেতৃত্বের উচিত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কয়েক দিন আগে তারেক রহমানের প্রতি দলের ভেতরে থাকা চাঁদাবাজদের বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সমস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘বিএনপির যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, লুটতরাজের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। দু’চারজন চাঁদাবাজ রাঘববোয়াল বিএনপি না থাকলে দলের ক্ষতি হবে না।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট আবু হেনা রাজ্জাকী বলেছেন, ‘দেশ কঠিন রাজনৈতিক নৈরাজ্যের দিকে যাচ্ছে।’ আইনজীবীর এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। অতএব ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে অর্জন করেছে; সে চেতনা ধরে রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানে সাড়া দিয়েছে সব রাজনৈতিক দল। এখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থে সেই ঐক্য বিনষ্ট হলে সে সুবিধা পতিত হাসিনার ঝুলিতেই যাবে। অতএব সাবধান!