শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় এক গ্রাম ডাক্তারের ওপর সংঘটিত হয়েছে চরম নৃশংস ও লোমহর্ষক হামলা। টাকা ছিনতাইয়ের পর হামলাকারীদের চিনে ফেলায় তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর আহত ওই গ্রাম্য ডাক্তার বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের তিলই এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তি খোকন দাস (৫০), তিনি তিলই গ্রামের পরেশ দাসের ছেলে। পেশায় তিনি একজন ওষুধ ব্যবসায়ী ও গ্রাম্য ডাক্তার। পাশাপাশি তিনি মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের এজেন্ট হিসেবেও কাজ করতেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খোকন দাস দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার কেউরভাঙ্গা বাজারে একটি ঔষধের দোকান পরিচালনা করে আসছেন। প্রতিদিনের মতো বুধবার রাতেও দোকান বন্ধ করে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে ৩–৪ জন দুর্বৃত্ত তাকে পথরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে এবং সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়।
একপর্যায়ে খোকন দাস হামলাকারীদের চিনে ফেললে তারা আরও হিংস্র হয়ে ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, তাকে নিশ্চুপ করতে এবং হত্যার উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা তার শরীর ও মুখে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার আর্তচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
গুরুতর দগ্ধ ও রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠান।
হাসপাতালে নেওয়ার আগে আহত খোকন দাস বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে বাবুল খাঁর ছেলে সোহাগ ও সামসুদ্দিনের ছেলে জড়িত ছিল। তিনজনের মধ্যে একজন তাকে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং অপরজন নিজেকে চিনিয়ে দেয়।
আহতের স্ত্রী সীমা দাস কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, খবর পেয়ে এসে দেখি আমার স্বামীর শরীর জ্বলছে। মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কোপানো হয়েছে। আমার স্বামীর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। যারা এই নৃশংস কাজ করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, রোগীর মাথা ও হাতে আগুনে পোড়ার চিহ্ন রয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়েছে, বিশেষ করে পেটের আঘাতটি অত্যন্ত গুরুতর। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি ছিনতাইয়ের ঘটনা। ভুক্তভোগী হামলাকারীদের চিনে ফেলায় তাকে কুপিয়ে ও কেরোসিন জাতীয় তরল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।